মোদির প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে বৈঠকও এড়াচ্ছেন নীতীশ

পাটনা, ২৮ ডিসেম্বর– নীতীশের ঘনিষ্ঠ মহলের ব্যাখ্যা, বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে আসা নীতীশ ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে মোদি, শাহদের মতো বিজেপির প্রথমসারির নেতাদের সঙ্গে এক ফ্রেমে থাকতে চাইছেন না। আর তার সবথেকে বড় প্রমান কলকাতায় অনুষ্ঠিত পর পর দুটি বৈঠক নীতীশের এড়িয়ে যাওয়া। 

নীতিশ ঘনিষ্ঠরা বলছেন, নিজেকে তিনি অবিজেপি শিবিরের প্রধান মুখ করে তোলার বাসনা নিয়ে এগোচ্ছেন নীতিশ। আর তাই বিজেপির সঙ্গে কোনও রকম সংস্পর্শ এড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি। 

আগামী শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কলকাতায় আসছেন। শহরে তাঁর অন্যতম কর্মসূচি হল গঙ্গা পরিষদের বৈঠকে যোগদান। ওই বৈঠকে গঙ্গা অববাহিকায় অবস্থিত সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ওই বৈঠকে যোগ দেবেন না। তিনি উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবকে বৈঠকে যোগ দিতে পাঠাচ্ছেন।


গত ১৭ ডিসেম্বের কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কলকাতায় নবান্নে পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। ওই বৈঠকও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী এড়িয়ে যান। সেবারও বৈঠকে বিহারের প্রতিনিধিত্ব করেন উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী।

নীতীশের পার্টি জনতাদল ইউনাইটেডের এক নেতার ব্যাখ্যা, মোদির বিরুদ্ধে অবিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা অনেকেই এখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গায়ে পড়ে সুসম্পর্ক তৈরিতে ব্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে নীতীশ কুমার ২০২৪-কে টার্গেট করে এগোতে চাইছেন।

ওই নেতার কথায়, নীতীশ কুমারের হারানোর কিছু নেই। তিনি ১৭-১৮ বছর টানা মুখ্যমন্ত্রী। সত্তরোর্ধ্ব নেতা চাইছেন একবার জাতীয় রাজনীতিতে মোদির প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে। তাই মোদি -শাহদের এড়িয়ে সংঘাতের বার্তা মজবুত করতে চাইছেন তিনি। সেই কারণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীদের বৈঠকে যাচ্ছেন না।

লক্ষণীয়, কলকাতায় শাহের পর মোদীর বৈঠকেও নীতীশ আরজেডি নেতা উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবকে পাঠাচ্ছেন। নীতীশের এই সিদ্ধান্তও অত্যন্ত কুশলী চাল বলে মনে করা হচ্ছে। কিছুদিন আগেই মহাজোটের বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে নীতীশ বলেন, ২০২৫-এর বিধানসভা ভোটে মহাজোট তেজস্বীকে সামনে রেখে লড়াই করবে। তাঁর প্রস্তাবে সকলেই সায় দেন। পরের ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি থেকে সরে যাওয়ার স্পষ্ট বার্তা দিয়ে নীতীশ বড় শরিক লালুপ্রসাদের আরজেডি’কে খুশি রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঘনিষ্ট মহলে নীতীশের ব্যাখ্যা, তেজস্বীকে তিনি পাঠাচ্ছেন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য।

স্বভাবতই আরজেডি নেতৃত্ব নীতীশের সিদ্ধান্তে খুশি। বিহারে জেডিইউ-আরজেডি সরকার নতুন নয়। ২০১৫-তে দুই দল মিলে ভোটে লড়াই করে সরকার গঠন করেছিল। তখনও উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তেজস্বী। কিন্তু সেই দফায় বোঝাপড়া বছর দুই পরেই ভেঙে যায়। এবার পরিস্থিতি এখনও পর্যন্ত ভিন্ন। নীতীশ-তেজস্বী সম্পর্ক এখনও পর্যন্ত আদর্শ চাচা-ভাতিজার। কিন্তু আরজেডি ঘনিষ্ঠতা নীতীশের নিজের দলে কী প্রতিক্রিয়া তৈরি করে সেটাই এখন দেখার।