খার্তুম, ২১ অক্টোবর– উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে জাতিগত সংঘর্ষ সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু গত তিনদিন ধরে সেই জাতিগত সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সুদানের ব্লু নাইল প্রদেশে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। গত তিনদিনে সংঘাতের দরুন মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৭০ জনের। আহত অনেকেই। নিহতদের মধ্যে মহিলা, শিশু ও বয়স্ক মানুষরাও রয়েছেন বলে খবর।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানিয়েছে, মূলত পশ্চিম দারফুর, ব্লু নাইল প্রদেশ ও দক্ষিণ কর্দফান অঞ্চলে জনজাতিদের মধ্যে হিংসা চরমে পৌঁছেছে। ২০২০ সালে সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরও তা থামছে না।
বিশ্লেষকদের মতে, মূলত জমির অধিকার নিয়েই এই লড়াই। তাছাড়া, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য জনজাতিদের হাতে প্রচুর আধুনিক বন্দুক, রাইফেল চলে আসায় সংঘাত অত্যন্ত রক্তক্ষয়ী রূপ নিচ্ছে। বলে রাখা ভাল, বছর খানেক আগে সেনা অভ্যুত্থান হয় সুদানে। তারপর থেকেই ডামাডোল চলছে দেশটিতে।
জানা গিয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সুদানে হিংসা ও রক্তপাত চরমে পৌঁছেছে। প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ব্লু নাইল প্রদেশের রাজধানী দামাজিনের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ দেখায় হাজার হাজার মানুষ। এদিকে, সুদানের ওয়াদ আল-মাহি হাসপাতালের প্রধান আব্বাস মুসা বলেন, “জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষে বুধ ও বৃহস্পতিবার মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধসহ মোট ১৫০ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া প্রায় ৮৬ জন আহত হয়েছেন।” স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, হাউসা সম্প্রদায় এবং প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে জমি নিয়ে বিতর্কের পর গত সপ্তাহে ব্লু নাইল প্রদেশে সংঘর্ষ শুরু হয়। তীব্র বন্দুকযুদ্ধে এবং বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সংঘর্ষ জোরালো রূপ নিলে সেখানকার বাসিন্দারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। সুদানের রাজধানী খার্তুমের ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণে রোজাইরেসের কাছে ওয়াদ আল-মাহি এলাকার চারপাশে এখনও সংঘর্ষ চলছে বলে জানায় আল জাজিরা।
উল্লেখ্য, সুদানে রাষ্ট্রসংঘের প্রতিনিধি এডি রোই বলেছেন, ক্রমাগত সংঘর্ষে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। গত ১৩ অক্টোবর থেকে লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে ১৭০ জন নিহত এবং আরও ৩২৭ জন আহত হয়েছেন বলে রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে। বিগত মাসগুলিতে নিয়মিতভাবেই জাতিগত হিংসায় কাঁপছে নীল নদ। গত জুলাই মাসে শুরু হওয়া উপজাতি সংঘর্ষে চলতি অক্টোবরের শুরু পর্যন্ত ১৪৯ জন নিহত হয়েছেন। ইউএন অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ)-এর তথ্য অনুসারে, গত সপ্তাহে নতুন করে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষে আরও ১৩ জন নিহত হয়েছেন। নীল নদ অববাহিকা বহু ভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর আবাসস্থল। ফলে তাদের মধ্যে কয়েক দশক ধরে সংঘাত চলছে।