দিল্লি, ৫ নভেম্বর – পুলিশ কমিশনার এবং জেলাশাসকরা সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। সাধারণ মানুষকে বেশিরভাগ জেলাশাসক ও পুলিশ কমিশনার ধর্তব্যের মধ্যেই আনেন না। পুলিশ কমিশনার এবং জেলাশাসকরা নিজেদের রাজা ভাবেন। কেউ কেউ নিজেদের দেবতা মনে করেন। একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে এই মন্তব্য করেছে গুজরাট হাই কোর্ট। আদালতের পর্যবেক্ষণ, বেশির ভাগ জেলাশাসক এবং পুলিশ কমিশনারের কাছে কোনও সাধারণ মানুষ সরাসরি কোন অভিযোগ জানাতে পারেন না। অভিযোগ জানাতে গেলেও সেই জেলাশাসক বা পুলিশ কমিশনারের অফিসের বাইরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু অপেক্ষার পরেও সাক্ষাৎ হয় কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গুজরাট সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে প্রধান বিচারপতি সুনীতা আগরওয়াল এবং বিচারপতি অনিরুদ্ধ মায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
প্রধান বিচারপতি আগরওয়াল জানান, অনেক পুলিশ কমিশনার এবং জেলাশাসক আছেন, যাঁদের সঙ্গে দেখা করাই দায়। কোনও সাধারণ নাগরিক সরাসরি থানায় গিয়ে অভিযোগ জানানোর আগে দু’বার ভাবেন। আর জেলাশাসকদের কাছে তো কোনও অভিযোগই জানানো যায় না। জেলাশাসক এবং পুলিশ কমিশনারদের আচরণ দেখে মনে হয় তাঁরা যেন কোনও রাজা বা দেবতা। বিচারপতির কথায়, ‘‘আপনার অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না কেউ ? কে তাঁদের ভিতরে ঢোকার অনুমতি দেবেন ? আপনার জেলাশাসক এবং কমিশনাররা তো ভাবেন যে তাঁরা ভগবান। তাঁদের আচরণও ভগবান বা রাজার মতো।’’
সম্প্রতি পুলিশের বিরুদ্ধে এক যুগলকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, রাতে বেড়াতে বেরোনোয় ওই যুগলের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা আদায় করে পুলিশ। এ নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলায় গুজরাট সরকারের তৈরি করা বিশেষ পুলিশ সেল নিয়ে আদালত প্রশ্ন তোলে। শুক্রবার এ নিয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়েও মন্তব্য করে গুজরাত হাই কোর্ট।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, এমন একটা ব্যবস্থা করা উচিত, যেখানে সবাই নিজেদের মতামত জানাতে পারেন। অভিযোগ করতে পারেন। বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, ‘‘বাস্তব পরিস্থিতিটা সবাই জানেন। এক জন সাধারণ নাগরিক ভাবতেই পারেন না যে, তাঁরা হেঁটে গিয়ে সোজা পুলিশ কমিশনার বা জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। আমরা বিচারপতিরাও একটা সময় আর পাঁচজনের মতো সাধারণ ছিলাম। পুলিশ এবং প্রশাসনের এই দিক সম্পর্কে আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে।’’ এই মামলার প্রেক্ষিতে গুজরাট সরকারকে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর সেল সক্রিয় করার পরামর্শ দিয়েছে হাই কোর্ট।
