তেল আভিভ, ১২ অক্টোবর – একটানা যুদ্ধে বিধ্বস্ত ইজরায়েল। হত্যা, নির্যাতন ঘটে চলেছে প্যালেস্টাইনেও। শনিবার থেকে টানা যুদ্ধ চলছে। গাজায় একের পর এক রকেট হামলা, পাল্টা জবাব দিয়েছে ইজরায়েল। এরইমধ্যে ইজরায়েলের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আমেরিকা। ইজরায়েলের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন জো বাইডেন। এদিকে মানুষকে পণবন্দি করে রেখেছে হামাস। তাদের উপর চলছে অকথ্য নির্যাতন। ইজরায়েল প্রশাসনের তরফে বলা হচ্ছে পণবন্দিদের অধিকাংশই শিশু ও মহিলা। তাদের উপর নৃশংস অত্যাচার করছে হামাস জঙ্গিরা। রেহাই পাচ্ছে না শিশুরাও। বাবা-মায়ের সামনেই গলা কেটে হত্যা করা হচ্ছে তাদের। হামাসের তরফে দাবি করা হয়েছে, তারা ১৬৩ জন ইজরায়েলি নাগরিককে বন্দি করে রেখেছে। গাজা স্ট্রিপের একটি গোপন সুড়ঙ্গে তাদের আটকে রাখা হয়েছে। সূত্রের খবর, বন্দি করে রাখা এই নাগরিকদেরই মানব ঢাল বানাচ্ছে হামাস। এই পণবন্দিদের সামনে রেখেই ইজরায়েলকে ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হামাস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ইজরায়েলি সেনার প্রতিটা পদক্ষেপের বলি হবে পণবন্দিরা। প্রতিটা আক্রমণের প্রত্যুত্তর হবে এক একজন পণবন্দির নির্মম মৃত্যু।
হামাস বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে একজোট হয়েছে ইজরায়েল সরকার। শাসক ও বিরোধী দলগুলি মিলিত হয়ে অন্তর্বর্তীকালীন জরুরি সরকার গঠন করেছে। এই জোট সরকার ঘোষণা করেছে, গাজা স্ট্রিপে হামাসদের গোপন ডেরা লক্ষ্য করে এমন ভয়ঙ্কর হামলা চালানো হবে যা দেখে গোটা বিশ্ব কেঁপে উঠবে। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, “ সবার সামনে শপথ নিয়ে বলছি, পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে হামাসকে।”
সোমবার রাত থেকেই গাজার একাধিক এলাকায় হামাস ঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমণ হানে ইজরায়েলি সেনা। তার আগেই অন্তত ১০০ জনকে পণবন্দি করে ফেলে হামাস। তার মধ্যে রয়েছেন আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, নেপাল-সহ অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও। এহেন পরিস্থিতিতে হামাসের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। দেশবাসীকে তিনি বার্তা দিয়ে বলেছেন, দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে তাঁদের। সেই ঘোষণার পরেই গাজা সীমান্ত থেকে আক্রমণ শুরু করেছে ইজরায়েলি সেনা। হামাসের হত্যালীলা রুখতে ইজরায়েলের তরফে ১ লক্ষ সেনা পাঠানো হয়েছে গাজা সীমান্তেে। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানান, বায়ুসেনাকেও হামাসের উপরে হামলা চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গাজা স্ট্রিপ পুরোপুরি অবরুদ্ধ করেছে ইজরায়েলি সেনা। মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হয়েছে বোমাবর্ষণ। সাধারণত জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ জিনিসপত্রের জন্যই ইজরায়েলের উপর নির্ভরশীল গাজা। সীমান্ত এই শহর অবরুদ্ধ করে ফেলার পরে সেখানে জল-বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইজরায়েল। মুর্হুমুর্হু ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলছে বাড়িঘর, স্কুল, হাসপাতালের উপরে। ওষুধ আর মৃতদেহের পচা গন্ধে হাসপাতালগুলো মর্গে পরিণত হয়েছে। সেখানেই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন গাজার ঘরছাড়ারা। গাজায় নতুন করে সেনা অভ্যুত্থানের ইঙ্গিত দিয়ে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “হামাসের প্রতিটা সদস্যকে খুন করব। গাজায় রক্তগঙ্গা বইয়ে দেব। হামাসের অস্তিত্বই থাকবে না ।” দেশবাসীর উদ্দেশে নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘‘ইজরায়েলে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ চলছে। আমরা এমন যুদ্ধ চাইনি। জোর করে বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে। শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। এই যুদ্ধ আমরা শুরু করিনি, তবে শেষটা আমরাই করব।” এভাবে যুদ্ধ করার জন্য হামাসবাহিনীকে ‘বড় মূল্য চোকাতে হবে’ বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নেতানিয়াহু।
এদিকে পাল্টা হুমকি দিয়েছে হামাসও। হামাসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও কম্যান্ডার মাহমুদ আল-জাহার বলেছেন, ‘ ইজরায়েল তো সবে শুরু, গোটা বিশ্বকে নিজেদের কব্জায় আনব আমরা’ . তাঁর ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভিডিও ফুটেজে হামাস কম্যান্ডারকে বলতে শোনা গেছে, “ইজরায়েল আমাদের প্রথম টার্গেট। গোটা বিশ্বকেই একদিন আমাদের নিয়মনীতি মানতে হবে।” মাহমুদ আল-জাহারের বক্তব্য, “৫১ কোটি বর্গ কিলোমিটার পৃথিবীতে নতুন আইন আনব। কোনওরকম অন্যায়-অত্যাচার, দুর্বলের উপর সবলের নির্যাতন মানব না। প্যালেস্তাইনের বিরুদ্ধে যারা যাবে তাদের নির্মম পরিণতি হবে। আরব, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও তাই।”