দিল্লি, ১৯ ডিসেম্বর- সোমবারের পর মঙ্গলবারও লোকসভার ছবি পাল্টালো না। এদিনও অধিবেশন শুরু হতেই তুমুল হই হট্টগোল শুরু হয় সংসদে। বিরোধী সাংসদের এহেন ভূমিকায় বেজায় বিরক্ত প্রকাশ করেন স্পিকার ওম বিড়লা। বহুবার থামতে বললেও কাজ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ৫০ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করলেন তিনি। চলতি অধিবেশনে এই নিয়ে মোট ১৪২ জন বিরোধী দলের সাংসদকে বরখাস্ত করা হল। যা ভারতের সংসদের ইতিহাসে বেনজির ঘটনা।
সংসদে স্মোক-বম্ব ছোড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত সপ্তাহ থেকেই উত্তাল গোটা দেশ। সংসদের নিরাপত্তা ইস্যুতে আওয়াজ তুলছেন বিরোধীরা। সংসদের ভেতরে ও বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বিরোধী সাংসদরা। তাঁদের দাবি, সংসদ কাণ্ড নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিবৃতি দিক। এমনকী সংসদে এই নিয়ে আলোচনার দাবি জানান বিরোধীরা। সোমবার থেকেই সংসদের দুই কক্ষ একই ইস্যুতে উত্তাল।
সোমবার লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে মোট ৭৮ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়। যা নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। মঙ্গলবার লোকসভায় অধিবেশন শুরু থেকেই সাংসদদের সাসপেন্ড করা নিয়ে একযোগে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস-তৃণমূল ও অন্যান্য বিরোধীরা। ওম বিড়লা বারবার তাঁদের নিজের আসনে গিয়ে বসতে বলেন। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি।
শেষ পর্যন্ত ৫০ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করেন লোকসভার স্পিকার। তাঁদের মধ্যে আছেন লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মালা রায়, কংগ্রেসের শশী থারুর, মনীশ তিওয়ারি, এনসিপি-র সুপ্রিয়া সোলে, সমাজবাদী পার্টির ডিম্পেল যাদবরা। গতকাল লোকসভায় একসঙ্গে ৩৩ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করেন স্পিকার। তারপর রাজ্যসভা থেকেও ৪৫ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়।
মঙ্গলবার সংসদ উত্তালের ঘটনায় প্রথমবার এমন কিছু সংসদকেও দেখা যায় ওয়লে নেমে বিক্ষোভে সামিল হতে যাদের বিগত এক দশকেও এমন কোনও বিক্ষোভে নামতে দেখা যায়নি । যাদের মধ্যে শশী থারুরের নাম উল্লেখযোগ্য। সাসপেন্ড হওয়ার পর থারুর এদিন জানান, দেড় দশকের সংসদীয় কর্মজীবনে এই প্রথম বার লোকসভার ওয়েলে নেমে পোস্টার হাতে স্লোগান দেখা দিতে গেল তাঁকে। স্পিকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ায় প্রথম বার সাসপেন্ডও হলেন কেরলের তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার আগে তাঁর এই আচরণের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তারুর।
এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে থারুর লিখেছেন, ‘‘আমার ১৫ বছরের সংসদীয় কর্মজীবনে এই প্রথম বার অন্যদের সঙ্গে আমিও সংসদের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার দাবিতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ওয়েলে নেমেছি। আমার দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের যে সহকর্মীরা এ বিষয়ে সরকারের কাছে জবাব চেয়ে অন্যায় ভাবে সাসপেন্ড হয়েছেন, তাঁদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছি। আশা করছি অন্যায্য ভাবে আমাকেও সাসপেন্ড করা হবে। তা আমার কাছে গর্বের হবে।’’
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে লোকসভায় ১৪ জন বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করেছিলেন ওম বিড়লা। সোম ও মঙ্গল মিলিয়ে লোকসভার ৯৭ জন সাংসদকে এই অধিবেশনে সাসপেন্ড করা হল। আর রাজ্যসভায় ৪৬ জনকে সাসপেন্ড করেছন জগদীপ ধনকড়। বিরোধীদের বক্তব্য, এভাবে কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু তা সম্ভব হবে না। এদিন সংসদের বাইরে বিক্ষোভ দেখান বরখাস্ত হওয়া সাংসদরা।