দিল্লি, ১৫ অক্টোবর– তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মিত্রের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলতেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা লোকসভার বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের অভিযোগ ব্যবসায়ী দর্শন হিরনানদানির থেকে অর্থ ও উপহার নিয়ে আদানীদের দুর্নাম করতে লোকসভায় প্রশ্ন করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তবে শুধু অভিযোগ করেই থেমে থাকেন নি নিশিকান্ত। লোকসভা স্পিকার ওম বিড়লার কাছে চিঠি পাঠিয়ে অবিলম্বে কৃষ্ণনগরের সাংসদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি করেছেন তিনি । মহুয়ার সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়ার আবেদনও রয়েছে সেই চিঠিতে ।
বিজেপি সাংসদের আরও অভিযোগ, ‘চক্রান্ত’ করে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অপমান করেছেন তৃণমূল সাংসদ। সংসদের ইতিহাস টেনে নিশিকান্ত দুবের দাবি, মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। আপাতত তাঁকে সাসপেন্ড করা হোক। প্রয়োজনে তাঁর সাংসদপদ খারিজ করা হোক।
তবে শুধু বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে নন, আইনজীবী অনন্ত দেহাদরিও ওই একই অভিযোগ তুলে মহুয়ার বিরুদ্ধে সিবিআই প্রধানকে চিঠি দিয়েছেন। দু’জনেরই অভিযোগ ব্যবসায়ী দর্শন হিরনানদানির থেকে অর্থ নিয়ে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন মহুয়া। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নাম জড়িয়েছেন মহুয়া।
নিশিকান্ত রবিবারই স্পিকারকে চিঠি লিখেছেন। তাতে মহুয়ার বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গ এবং সংসদের অবমাননার অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর দাবি ব্যবসায়ী হিরনানদানির স্বার্থ দেখতে নগদ টাকা এবং উপহারের বিনিময়ে প্রায় ৫০টি প্রশ্ন লোকসভায় তুলেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া। শুধু অভিযোগ তোলাই নয়, বিষয়টিকে ফৌজদারি অপরাধ বলেও দাবি করেছেন। তাঁর অভিযোগ, মহুয়ার প্রশ্ন শোনার পরে তা নিয়ে সরব হয়েছে অন্যান্য বিরোধী দলের সাংসদরাও। তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়ের নামও উল্লেখ করেছেন নিশিকান্ত।
যদিও অর্থ ও উপহারের অভিযোগের পর চুপ করে থেকে নেই মহুয়া মৈত্রও । বিরোধীদের বিরুদ্ধে তোপ দেগে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন তিনি। আদানি ও গেরুয়া শিবির সম্মিলিতভাবে তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছে বলে দাবি মহুয়ার। একইসঙ্গে তাঁর দাবি, যে কোনও তদন্তের জন্য় তিনি প্রস্তুত।
মহুয়াকে কেন সাংসদ পদ থেকে অপসারিত করা উচিত, তা বোঝাতে স্পিকারকে লেখা চিঠিতে নিশিকান্ত ২০০৫ সালের ১২ ডিসেম্বরের একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন। স্পিকারকে পাঠানো চিঠিতে লিখেছেন, ১৪তম লোকসভায় ২০০৫ সালের ১২ ডিসেম্বর অর্থের বিনিময়ে প্রশ্নের অভিযোগ উঠলে তৎকালীন স্পিকার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন। তদন্তের পরে মাত্র ২৩ দিনের মধ্যে লোকসভার ১০ সাংসদকে অপসারিত করা হয়েছিল। এর পরেই মহুয়ার বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য কমিটি গঠনের আর্জি জানিয়েছেন নিশিকান্ত। সেই সঙ্গে অবিলম্বে মহুয়াকে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করার আর্জি জানিয়েছেন।
নিশিকান্তের তরফে স্পিকারকে চিঠি পাঠানোর আগেই শনিবার সিবিআইয়ের ডিরেক্টর প্রবীণ সুদকে তদন্তের আর্জি জানিয়ে চিঠি লিখেছেন আইনজীবী দেহাদরি। এর জবাবে মহুয়া এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘‘সিবিআইকেও স্বাগত জানাচ্ছি। তারা আমার বিরুদ্ধে অর্থ তছরুপের অনুসন্ধান করতে পারে। কিন্তু তার আগে আদানির সমস্ত অর্থ কোন পথে সমুদ্রের ও পারে পৌঁছচ্ছে, চালান আর বেনামি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে, সেটাও তাদের খুঁজে বের করতে হবে।’’