দিল্লি, ১৪ নভেম্বর – প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রা’ নামে দেশ জুডে় নয়া কর্মসূচি বুধবার, ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ নরেন্দ্র মোদি সরকারের কল্যাণমূলক কর্মসূচির সাফল্য প্রচার করাই এই কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য৷ দেশের ৭৬৫ টি গ্রামের ২ লাখ ৬৯ হাজার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সরকারি উদ্যোগে এত বড় প্রচার কর্মসূচি চলবে৷ এই সমস্ত এলাকায় ২০ নভেম্বর থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে পৌঁছে যাবে বিশেষভাবে সজ্জিত বাস, যার নামকরণ হয়েছে ‘বিকাশ রথ’৷ সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, এই বিশেষ ধরনের বাস বা ‘বিকাশ রথ’ নামে গ্রামে গ্রামে ঘুরবে৷ সেগুলি জনবহুল এলাকায় মোদি সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের কথা তুলে ধরবে৷ উপকৃতদের পাশাপাশি যারা সুবিধা পায়নি তাদের নামও নথিভুক্ত করা হবে৷ অনেকটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির আদলে তৈরি হয়েছে মোদি সরকারের ‘বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রা’৷
উল্লেখ্য, ২৫ জানুয়ারি যাত্রা সমাপ্তির তিনদিন আগে ২২ তারিখ অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী৷ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে , হিন্দুত্ব আর উন্নয়নকে তুলে ধরতেই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে রথযাত্রার সময়সূচী স্থির হয়েছে৷
১৫ নভেম্বর বিরসা মুন্ডার জন্মদিন৷ আদিবাসী সংস্কারক ও বিপ্লবী শহিদ বিরসার জন্মস্থান ঝাড়খণ্ডের খুঁটি জেলাকে বেছে নেওয়া হয়েছে ‘বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রা’র জন্য৷ বুধবার প্রধানমন্ত্রী সেখান থেকেই যাত্রার সূচনা করবেন৷ সেখানে জোর কদমে চলছে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি৷ এদিকে অনুষ্ঠানের সূচনায় বিরসার জন্মস্থানকে বেছে নেওয়ায় আপত্তি তুলেছে আদিবাসীদের একাধিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি’৷ ওই সংগঠনের প্রধান দুই শরিক ঝাড়খণ্ড জন অধিকার মহাসভা এবং লোকতান্ত্রিক বাষ্ট্র নির্মাণ অভিযানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে আদিবাসদের কল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত একাধিক প্রতিষ্ঠান৷ তাঁদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর এই কর্মসূচির জন্য খুঁটিকে বেছে নেওয়া বিরসার প্রতি অসম্মান৷ কারণ বিজেপি আদৌ আদিবাসীদের পৃথক অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না৷ ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি’ এই ইসু্যতে জোরদার আন্দোলনও শুরু করেছে৷ জামসেদপুর, সিংভূম, ছাত্রা এবং রাঁচিতে সংগঠনগুলি একপ্রকার ‘নো ভোট টু বিজেপি’ প্রচার শুরু করেছে৷ তুলে ধরা হচ্ছে মণিপুরের জাতিদাঙ্গা এবং বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে আদিবাসীদের হিন্দু আচার-উপাচার মানতে বাধ্য করার মতো প্রসঙ্গও৷
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই কর্মসূচির কিছু বিষয় নিয়ে বিরোধী দলগুলি আগেই সরব হয়েছে৷ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আগেই আপত্তি তুলেছেন৷ প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দেন তিনি৷ খাড়গের বক্তব্য, ওই কর্মসূচিতে সরকারি আমলাদের যেভাবে সরকারের প্রচারকের ভূমিকায় নামানো হচ্ছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়৷ চিঠিতে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে লেখেন, ১৯৬৪ সালের সেন্ট্রাল সিভিল সার্ভিস কনডাক্ট রুল অনুযায়ী সরকারি কর্মী-অধিকারিকরা সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে, প্রচার করতে পারে না৷ বিগত সাডে় নয় বছরের কাজ প্রচার করতে বলার অর্থ আপনার সরকারের কথা মানুষকে বলা৷ এটা দলের কাজ, সরকারি কর্মচারীদের নয়৷ সরকার সরকারি কর্মচারীদের দলীয় কর্মী বানিয়ে দিচ্ছে৷
প্রসঙ্গত, ওই যাত্রায় প্রতিটি জেলায় একজন করে সরকারি আধিকারিক হবেন ‘রথ প্রভারী’ বা রথের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক৷ ভারত সরকারের যুগ্ম সচিব, অধিকর্তা, উপ অধিকর্তা পদমর্যাদার অফিসারদের যাত্রা চলাকালীন ওই বিশেষ পদ দেওয়া হচ্ছে৷
খাড়গের অভিযোগ, সরকার সেনা বাহিনীকেও প্রচারের কাজে নামিয়েছে৷ সেনার একটি নির্দেশনামার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছুটিতে থাকা সেনাদের বলা হয়েছে, কিছু সময় সরকারি প্রকল্পের কথা প্রচার করতে৷ প্রধানমন্ত্রীকে খাড়গে লিখেছেন, এই ভাবে সেনাকে সরকারের দূতে পরিণত করা হচ্ছে৷ এই দুটি নির্দেশনামা অবিলম্বে প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি৷