সেনাকে সরকারি প্রচারে ব্যবহার করতে চাইছে কেন্দ্র, বিদ্ধ মোদি সরকার

দিল্লি, ১৭ অক্টোবর– কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের প্রচারে সেনাকে ব্যবহার নিয়ে খবর সামনে আসতে রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছে। সোমবার একটি সর্বভারতীয় দৈনিক হিন্দি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোদি সরকারের উজ্জ্বলা, আত্মনির্ভর ভারত-সহ একাধিক প্রকল্প জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য কেন্দ্র সামরিক ও প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলিকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করছে। এরপরেই এ নিয়ে মোদি সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রস-সহ বিরোধীরা। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কেন্দ্র সরকাররের সেনাবাহিনীকে প্রচারের কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনাকে ‘লজ্জাজনক’ বলা হয়েছে আবার তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রের এহেন আচরণ ‘দুর্ভাগ্যজনক’ অ্যাখ্যা দিয়ে এর পিছনে অন্য রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অঙ্ক রয়েছে বলে ইঙ্গিত করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘স্থলসেনা, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী-সহ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পক্ষ থেকে তাদের আওতায় থাকা ডিআরডিও ও বিআরও মতো সংস্থাকে দেশের ৯টি শহরে ৮২২টি সেলফি পয়েন্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে।’ সেই প্রতিবেদনের ছবি-সহ টুইট করে কংগ্রেস নেতা ও রাজ্যসভার সাংসদ জয়রাম রমেশ, মোদি সরকার সেনাবিহনীকে নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার এবং অবিলম্বে এই ভুল পদক্ষেপ প্রত্যাহারের জন্য মোদি সরকারকে নির্দেশ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।

আবার তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সররকার, সেনাবাহিনীকে নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা মোদি সরকার বহুদিন ধরেই করছে বলে অভিযোগ করে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। জহর বলেছেন, “মোদি সরকারের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র নিয়ে রাজনীতি করার ইচ্ছা বহুদিনের । এর আগেও চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফের পদ তৈরি করে সেখানে প্রাক্তন সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতকে বসিয়ে জাতীয়তাবাদের ধুয়া তোলার জন্য চেষ্টা করা হয়েছিল। আবার অগ্নিপথের মতো প্রকল্প নিয়ে এসে সেনার গরিমা নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। সেনাতে সুইগি-জোম্যাটো চালু করতে চেয়েছেন। তাছাড়া, প্রধানমন্ত্রী এসব করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে বিপাকে ফেলতে চাইছেন। যাতে মোদির সামনে রাজনাথ বা কেউই চ্যালেঞ্জ না হয়ে উঠতে পারেন সেই বিষয়টিও পাকা করতে চাইছেন আর কি!”


এদিকে, প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ‘দেশের যে ৯টি শহরে সেলফি পয়েন্ট তৈরি হবে তাতে রয়েছে কলকাতাও। বাকি শহরগুলি দিল্লি, প্রয়াগরাজ, পুণে, বেঙ্গালুরু, মিরাট, নাসিক, কোল্লাম এবং গুয়াহাটি। যে সমস্ত রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গিয়েছে সেগুলিকে এই প্রকল্প থেকে আপাতত বাদ রাখা হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সভাপতিত্বে এই বিষয়ে একটি বৈঠক হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, যে ৮২২টি সেলফি পয়েন্ট তৈরি করা হবে সেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদির ছবি থাকবে। সামরিক ও প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলিকে সেলফি পয়েন্টের থিম এবং অবস্থানও বলা হয়েছে সেগুলিকে ইনস্টল করার জন্য। এই পয়েন্টগুলি রেল-বাস স্টেশন, মল এবং পর্যটন স্থানে থাকবে। তরুণদের আকৃষ্ট করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সহ ডিজিটাল সেলফি পয়েন্ট তৈরি করা হবে। উদাহরণ স্বরূপ মুম্বইয়ের রেল স্টেশনে স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া থিমের একটি সেলফি পয়েন্ট থাকতে চলেছে বলেই জানা গিয়েছে। সেনাবাহিনীকে ১০০টি, বায়ুসেনাকে ৭৫টি এবং নৌবাহিনীকে ৭৫টি সেলফি পয়েন্ট তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।