ইজরায়েল-হামাস সংঘর্ষে মৃত্যুর তীব্র নিন্দা, শক্তিধর দেশগুলিকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান মোদির

দিল্লি, ১৭ নভেম্বর – গাজা ভূখণ্ডে ইজরায়েলি সেনা এবং হামাস জঙ্গিদের লাগাতার লড়াইয়ের বলি হাজার হাজার নিরীহ মানুষ৷ এনিয়ে  গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ দু-পক্ষেরই  কঠোর সমালোচনাও করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী৷ শুক্রবার দিল্লিতে দ্বিতীয় ভয়েস অফ গ্লোবাল সাউথ সামিটের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী৷ সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে হামাস-ইজরায়েল সংঘর্ষের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি৷ সংঘর্ষে অসামরিক নিরীহ মানুষের মৃত্যুর ঘটনার নিন্দা করেন তিনি৷ পাশাপাশি এর পরিণতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী৷

শুক্রবার থেকে দিল্লিতে শুরু হয়েছে ‘ভয়েস অফ গ্লোবাল সাউথ সামিট, ২০২৩’৷ জি-২০ সম্মেলনের অংশ হিসাবে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজক ভারত সরকার৷ পূর্ব সিদ্ধান্ত মতো ভার্চুয়াল মাধ্যমেই এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ আয়োজক দেশ হিসাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন৷

ভয়েস অফ গ্লোবাল সাউথ সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মোদি আরও বলেন, সংঘর্ষ নিয়ে ইতিমধ্যে তিনি প্যালেস্টাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ সেই সঙ্গে প্যালেস্টাইনের জনগণের পাশে থাকার বার্তা দেন৷ গাজার জনগণের জন্য ভারত যে মানবিক সাহায্য পাঠিয়েছে, তাও বক্তব্যে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী৷
মধ্যপ্রাচ্যের সংঘর্ষ ৪১ দিন অতিক্রম করলেও থামার কোনও লক্ষণ নেই৷ গাজায় আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল৷মৃত্যু  হয়েছে বহু অসামরিক ব্যক্তির৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এত নিরীহ মানুষের মৃত্যুর নিন্দা করে সংঘর্ষ থামানোর জন্য বিশ্বের দেশগুলির কাছে আবেদন জানান৷ তিনি বলেন, এই  ঘটনা নতুন করে চ্যালেঞ্জ তৈরী করেছে ৷ মোদি বলেন, ৭ অক্টোবর ইজরায়েলের উপর হামাস হামলার নিন্দা করেছে ভারত৷ কিন্ত্ত তারপর থেকে সংঘর্ষে যেভাবে অসামরিক ক্ষেত্রের মানুষের মৃতু্যর ঘটনা ঘটছে তাতে নিন্দার ভাষা নেই৷ অবিলম্বে সংঘর্ষ বন্ধের জন্য কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ এ ব্যাপারে বিশ্বের দেশগুলিকে একত্রে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি ৷
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, ইজরায়েল-হামাস সংঘর্ষ অবিলম্বে বন্ধ করতে শক্তিধর দেশগুলিকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে৷ তাঁর কথায়, এই লড়াই এখনই বন্ধ করা না গেলে পশ্চিম এশিয়ার সঙ্কট জটিল আকার ধারণ করবে৷
এদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তিনিও প্যালেস্টাইনে ইজরায়েলি সেনার নির্দয় হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেন৷ তিনিও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷


গতমাসে ইজরায়েলের উপর হামাসের আক্রমণের পর প্রধানমন্ত্রীর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল অন্যরকম৷ যদিও পরবর্তী সময়ে তাঁর বক্তব্যে অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা গিয়েছে৷ প্যালেস্টাইনের উপর ইজরায়েলি বাহিনীর লাগাতার আক্রমণের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী দেশে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পডে়ছিলেন৷  মোদি প্রথমে  একতরফাভাবে ইজরায়েলের পাশে থাকারই বার্তা দিয়েছিলেন৷ এমনকী ফোনে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে এই ব্যাপারে আশ্বাস দেন৷

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ায় প্যালেস্টাইনের প্রতি ভারতের সমর্থন নেই বলে সমালোচনা শুরু হয়৷ তারপরই মোদি প্যালেস্টাইনের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ আব্বাসকে ফোন করে পাশে থাকার বার্তা দেন, পাশাপাশি ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর আশ্বাস দেন৷

শুক্রবার দিল্লি থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিশ্বের নেতাদের সামনে প্রধানমন্ত্রী কোনও পক্ষকেই ছেডে় কথা বলেনননি৷ যুদ্ধ থামাতে দু-পক্ষের উপর আরও চাপ বাড়াতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে হামাস-ইজরায়েল সংঘর্ষ চরম আকার নিয়েছে৷ বর্তমানে গাজাকে হামাস মুক্ত করতে জোরদার অভিযান চালাচ্ছে তেল আভিভ৷ হামাস জঙ্গিদের খুঁজে পেতে হাসপাতালেও চালানো হচ্ছে অভিযান৷ এখনও পর্যন্ত অভিযানে শিশু সহ ১১ হাজারের বেশি প্যালেস্টাইন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে ৷
………………….