দিল্লি, ১১ আগস্ট– মাত্র এক মিনিট কি বা তার দাম কিন্তু সেই এক মিনিটেই কামাল করে দেখালেন। মাত্র এক মিনিটের ফারাকেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীকে হারিয়ে নয়া রেকর্ড গড়ে ফেললেন তিনি। অনাস্থা প্রস্তাবের বিতর্কে ২ ঘন্টা ১৩ মিনিট কথা বলে পেছনে ফেলে দিলেন শাস্ত্রীর ২ ঘণ্টা ১২ মিনিটের রেকর্ডকে। এযাবত এই সময়টাই ছিল সংসদে অনাস্থা নিয়ে সর্বোচ্চ সময়ের বক্তৃতা। গতকাল, বৃহস্পতিবার বিকেলে মোদি ২ ঘণ্টা ১৩ মিনিট ধরে বক্তৃতা করলেন একটানা। তাই মোদির এই বক্তৃতাই এখন অনাস্থা প্রস্তাবের দীর্ঘতম হয়ে উঠল।
তবে এই রেকর্ড গড়া ভাষণে বর্তমানে দেশের অন্যতম সেনসেটিভ ইস্যু মণিপুর পেয়েছে মাত্র কয়েক মিনিট। প্রধানমন্ত্রীর লম্বা এই ভাষণে কেন মণিপুরের জন্য মাত্র কয়েক মিনিট তাই নিয়ে অভিযোগ উঠেছে বৃহস্পতিবার। শুধু তাই নয়, সেই প্রসঙ্গ এসেছে বক্তৃতের প্রথম ৯৩ মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পরে! অর্থাৎ দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় অন্য প্রসঙ্গে কথা বলার পরে মণিপুর নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। ততক্ষণে বিরোধীরা সকলে ওয়াকওভার দিয়ে বেরিয়েও গেছেন।আসলে মণিপুরের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতেই সংসদের মধ্যে মোদির বিবৃতির দাবিতে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোট।
মণিপুর নিয়ে কথা বলার আগে মোদি ভাষণের দেড় ঘণ্টা দিয়েছেন বিরোধী শিবিরকে আক্রমণের জন্য। এদিন তিনি বলেন, ‘আপনাদের একটা গোপন কথা বলি, ঈশ্বরের কাছে এক অদ্ভুত বর পেয়েছেন বিরোধীরা। ওঁরা যাঁদেরই খারাপ চেয়েছেন, তাঁদেরই ভাল হয়েছে। ভগবান চান, এনডিএ ২০২৪ সালেও সরকার গঠন করুক ভারতে। তার জন্যই তিনি বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবের মধ্যে দিয়ে এই সুযোগ করে দিয়েছেন আমাদের।’
এছাড়াও তিনি বারবার নিশানা করেন গান্ধি পরিবারকে। রাহুল গান্ধির ‘রাবণ’ কটাক্ষ করে বলেন, ‘লঙ্কাকে রাবণের অহঙ্কারই ডুবিয়েছিল। যেমন কংগ্রেসকে ওদের অহঙ্কার ডুবিয়েছে। রামরূপী জনতা ওদের ৪০০ থেকে ৪০-এ নামিয়ে এনেছে। এই জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ নয়, ঘমন্ডিয়া (অহঙ্কারী) হওয়া উচিত ছিল।’
তবে এদিন বিরোধী বেঞ্চ থেকে ঘনঘন স্লোগানও উঠলেও এড়িয়ে যান মোদি। বরঞ্চ মোদি বলেন, ‘আপনারা স্লোগান দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে যাবেন।’ এর পরে সংসদ থেকে বিরোধী সাংসদরা ওয়াক আউট করলে কয়েক মিনিটের মণিপুর জায়গা পায় মোদির ভাষণে। সেক্ষেত্রেও তিনি লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লাকে উদ্দেশ্য করে খানিক অভিযোগের সুরে বলেন, ‘এঁরা অভিযোগ করতে পারেন, অথচ এঁদের জবাব শোনার ধৈর্যটুকুও নেই। এঁরা এখন পালিয়ে যাচ্ছেন!’
এর পরে মোদি দাবি করেন, মণিপুরের অশান্তির ‘জননী’ হল কংগ্রেসই। তাঁর কথায়, ‘মণিপুরে নিশ্চয়ই শান্তির সূর্য উঠবে। মণিপুর আবার নতুন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যাবে। মণিপুরের মা-বোনেদের আমার আবেদন, গোটা দেশ আপনাদের সঙ্গে আছে। সংসদ সঙ্গে আছে। ওখানে সমস্যার সমাধান হবে। শুনে খারাপ লাগছে, এই সংসদ থেকেই কেউ কেউ ভারতমাতার মৃত্যু কামনা করছেন। ওই মন্তব্যে ভারতবাসী দুঃখ পেয়েছে।’