দিল্লি, ১৮ নভেম্বর– এখন ই-মেল, হোয়াটস আপের যুগ৷ দু’দিনের রাস্তা পেরিয়ে চিঠি না পেঁৗছে সেকেন্ডে ম্যাসেজ পেঁৗছে যাচ্ছে দেশ থেকে দেশান্তরে৷ তা সত্ত্বেও দূর-দূরান্তের আত্মীয় কিংবা বন্ধুর কাছে উপহার কিংবা দরকারি জিনিস পাঠাতে আজও অনেকেরই ভরসা ভারতীয় ডাক বিভাগ৷ দেরি করে পার্সেল পৌঁছানোর অভিযোগ থাকলেও খুচরো ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, ইন্ডিয়া পোস্টের মাধ্যমে জিনিস আদান প্রদান করার ক্ষেত্রে অনেকেই আজও দুটো ইতিবাচক জিনিসের কথা উল্লেখ করেন৷ এক, জিনিস খোয়া যাওয়ার ভয় নেই৷ আর দুই, বেসরকারি সংস্থার তুলনায় খরচ অনেকটাই কম৷
কিন্ত্ত খরচ আর কম রইল না৷ কারণ এবার রেজিস্টার্ড চিঠি থেকে শুরু করে পার্সেল, যে কোনও কিছুই ইন্ডিয়া পোস্টের মাধ্যমে পাঠাতে গেলে গুনতে হবে অতিরিক্ত গাঁটের কড়ি৷ এমনটাই ব্যবস্থা করলেন মোদি সরকার৷ তবে এই জিএসটি সম্পর্কে আগে কোনও ঘোষণা করা হয়নি৷ এ সম্পর্কে অাঁধারে রয়েছেন ইন্ডিয়া পোস্টের কর্মীরা৷ হঠাৎ করেই ভারতীয় ডাক বিভাগের ২৭টি পরিষেবায় ১৮% জিএসটি চাপিয়েছে কেন্দ্র৷
ডাক বিভাগের মোট ২৭টি পরিষেবা এখন থেকে আরও মহার্ঘ হল৷ এর মধ্যে রয়েছে আনরেজিস্টার্ড পার্সেল, রেজিস্টার্ড চিঠি, মানি অর্ডার, পোস্ট বক্স, বুক প্যাকেট, রেজিস্টার্ড সংবাদপত্রের মতো পরিষেবাও৷ এর ফলে মধ্যবিত্তের পকেটে এক ধাক্কায় অনেকটাই টান পড়ল৷ ১৮ শতাংশ জিএসটি চাপানোর আগে ৫০০ গ্রাম ওজনের পার্সেল পাঠাতে যেখানে পোস্ট অফিসকে দিতে হত ৩৬ টাকা, সেটাই এখন বেডে় দাঁডি়য়েছে ৪৩ টাকায়৷ খরচ বাড়ছে রেজিস্টার্ড চিঠিরও৷ ২০ গ্রাম ওজন পর্যন্ত চিঠির ক্ষেত্রে এতদিন খরচ হত ২২ টাকা৷ এখন তার জন্য দিতে হবে ২৬ টাকা৷ চিঠির ওজন ৪০ গ্রাম পর্যন্ত হলে ২৭ টাকা থেকে চার্জ বেডে় দাঁডি়য়েছে ৩২ টাকায়৷ আর ৪০ থেকে ৬০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের চিঠির ক্ষেত্রে ৩২ টাকার বদলে এখন লাগবে ৩৮ টাকা৷
গত ১ নভেম্বর থেকেই লাগু হয়েছে এই অতিরিক্ত কর৷ সরকারের এমন সিদ্ধান্তের কথা গ্রাহকরা তো জানতেন না বটেই, এমনটা যে হতে চলেছে, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি পোস্ট অফিসের কর্মীরা৷ কার্যত, লুকিয়ে লুকিয়েই গ্রাহকদের ওপর আচমকা করের বোঝা চাপাল কেন্দ্র৷ ডাকঘরের কর্মীরা জানাচ্ছেন, তাঁদের আগে থেকে কোনও সরকারি সার্কুলার পাঠানো হয়নি৷ ১ তারিখ যখন তাঁরা চিঠি ইসু্য করতে যান, তখনই প্রকাশ্যে আসে বিষয়টা৷
সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশে আসার পর গ্রাহকরা তো খুশি নন বটেই, সেই সঙ্গে ক্ষুন্ন পোস্ট অফিসের কর্মীরাও৷ তাঁদের দাবি, এমনিতেই এখন বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কম্পিটিশনে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে ভারতীয় ডাক বিভাগ৷ তার মধ্যে কেন্দ্রের এমন সিদ্ধান্তে মানুষ আরও বেশি করে সরকারি পরিষেবা বিমুখ হয়ে পড়বেন বলে মনে করছেন তাঁরা৷ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষের উপর পরের বোঝা চাপিয়ে এভাবে রাজকোষ ভরানো কতটা যুক্তিযুক্ত, উঠছে সেই প্রশ্নও৷