এবার বারানসির সঙ্গে রামেশ্বরম বা কন্যাকুমারী থেকেও ভোট চাইতে পারেন মোদি   

দিল্লি, ১৭ জুন– এবার আর শুধু বারানসি নয় শোনা যাচ্ছে মোদি তামিলনাড়ু থেকেও প্রার্থী হতে পারেন। তার কারণ দেখা দিয়েছিল কিছুদিন আগেই। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎ করেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একেবারে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা শুরু করেছেন। রাজ্যপাল এন রবিকে নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরোধ চরমে উঠলেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম থেকেই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছিলেন ডিএমকে নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ক’দিন হল সুর বদলে গিয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর।

গোড়ায় ধারণা করা হয়েছিল তাঁর এক মন্ত্রীকে ইডি দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার করাতেই বুঝি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন এমকে স্ট্যালিন। কিন্তু সেটা মুখ্য কারণ নয়। জানা যাচ্ছে, আসল কারণ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মোদী বারাণসীর পাশাপাশি তামিলনাড়ু থেকেও প্রার্থী হতে চলেছেন। এই ব্যাপারে টিম-মোদীর কাজ অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর ২০২৪-এ তামিলনাড়ু থেকে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা নতুন নয়। সম্প্রতি তা নয়া মাত্রা পায় সংসদের নতুন ভবন উদ্বোধনের দিন সেখানে সেঙ্গোল স্থাপন করায়। সেটি ক্ষমতা হাতবদলের তামিল সংস্কৃতির প্রতীক। শুধু তাই নয়, নয়া সংসদ ভবন উদ্ধোধনে যাবতীয় পূজাপাঠেও ছিল তামিল পুরোহিতদের উপস্থিতি। তখন অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে শুধু বিজেপির দাক্ষিণাত্য বিজয়ের কৌশল হিসাবে দেখা হচ্ছিল।


বিষয়টি জানাজানি হয়েছে, গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের তামিলনাড়ু সফরে। চেন্নাইয়ে রাজ্য বিজেপির নেতাদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠকে শাহ বলেন, আগামী লোকসভা ভোটের পর তামিলনাড়ুর কেউ যাতে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন সেই ব্যাপারে আপনারা প্রস্তুত হন। পরে ভেলোরের সভায় শাহ বলেন, এইচডি দেবগৌড়ার পর আরও কেউ যাতে দাক্ষিণাত্য থেকে প্রধানমন্ত্রী হননি। নরেন্দ্র ভাই মোদি নিশ্চয়ই চেষ্টা করবেন আপনাদের আক্ষেপ দূর করতে।

এখন জানা যাচ্ছে, রামেশ্বরম এবং কন্যাকুমারীর যে কোনও একটি থেকে প্রার্থী হতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। দুটিই দক্ষিণে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

তবে বারাণসী থেকেও প্রার্থী হবেন। ২০১৪-এ মোদি গুজরাতের বদোদরা এবং উত্তরপ্রদেশের বারাণসী থেকে প্রার্থী হন।

এখন জানা যাচ্ছে এর পিছনে প্রধানমন্ত্রীর দক্ষিণ ভারত থেকে প্রার্থী হওয়ার অঙ্কও আছে। কারণ, দেশের ওই প্রান্তেই বিজেপি এখনও তেমন দাঁত ফোটাতে পারেনি। উল্টে ক্ষমতায় থাকা একমাত্র রাজ্য কর্নাটক সদ্য হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে তাদের। বিজেপি মনে করছে প্রধানমন্ত্রী তামিলনাড়ু থেকে লড়াই করলে গোটা দক্ষিণ ভারতে বিজেপির ভোট বাক্সে তার প্রভাব পড়বে। যেমন বারাণসী খেরে প্রার্থী হওয়ায় আশপাশের ২৪টি লোকসভা আসনের কুড়িটি বিজেপির দখলে গিয়েছিল ২০১৪-তে।

দক্ষিণে প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যপূরণে প্রধানমন্ত্রী ধারাবাহিক প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে এগিয়েছেন। গত বছর তাঁর উদ্যোগেই বারাণসীতে অনুষ্ঠিত হয় একমাস ব্যাপী কাশী-তামিল সঙ্গম উৎসব। প্রধানমন্ত্রী সেই উৎসবের উদ্বোধন করেন। এক মাস ধরে প্রধানমন্ত্রীর সংসদীয় কেন্দ্রে বারাণসী-সহ উত্তর ভারতের বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে তামিলনাড়ু এবং দক্ষিণ ভারতের নানা অংশের প্রাচীন যোগসূত্রগুলি নিয়ে আলোচনার আয়োজন হয়। ছিল আধ্যত্মিক ও ধর্মীয় যোগাযোগ নিয়ে চর্চা, গুণিজন সংবর্ধনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পরনে ছিল শার্ট-লুঙ্গি। দক্ষিণী পোশাকের অঙ্গ গামছাও ছিল গায়ে জড়ানো। বিমান বন্দরে তাঁকে সেদিন ‘বনাক্কাম কাশী’ (তামিলে কাশীতে স্বাগত) এবং হর হর মহাদেবের ধ্বনিতে স্বাগত জানান দক্ষিণী ব্রাহ্মণেরা।

প্রধানমন্ত্রী ভাষণে বলেন, তামিলনাড়ু এবং উত্তর ভারত, দুটোই শিবময় এবং শক্তিময়। প্রধানমন্ত্রী তামিলনাড়ুর মঠ-মন্দিরের নয়জন শৈব মহন্ত-কে অনুষ্ঠান মঞ্চে সম্মান জানান।

রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, মোদির উদ্যোগে কাশী-তামিল সঙ্গমের মেগা আয়োজনের পিছনে রাজনীতির অঙ্ক কাজ করেছিল। যা এখন সামনে আসছে।

এখন স্পষ্ট বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রী লোকসভা নির্বাচনে তামিলনাড়ুতে ডিএমকে-র প্রধান প্রতিপক্ষ হতে পারেন। এটা ধরে নিয়েই অস্ত্রে শান দিতে শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন। দুটি অনুষ্ঠানে তিনি মোদীর জমানায় দেশ তথা তামিলনাড়ুর কত বড় সর্বনাশ হয়েছে তার খতিয়ান তুলে ধরেছেন।