লখনউ, ১০ ডিসেম্বর – বিএসপি সুপ্রিমো মায়াবতী ভরসা রাখলেন নিজের ভাইপোর ওপরই। ভাইপোকে নিজের উত্তরাধিকারী বেছে নিলেন পিসি মায়াবতী। তাঁর পরবর্তী সময়ে বহুজন সমাজ পার্টির দায়িত্ব সামলাবেন ২৮ বছরের আকাশ আনন্দ। ২০২৪ সালের আগে আকাশের কাঁধে গুরুত্বদায়িত্ব তুলে দেবেন পিসি, এমনটাই মনে করছিলেন দলের অন্দরের অধিকাংশ। রবিবার লখনউতে পার্টির একটি বৈঠকে যোগ দেন নেত্রী। সেখানে দলের পরবর্তী সুপ্রিমো হিসেবে ভাইপো আকাশের নাম ঘোষণা করেন পিসি মায়াবতী।
গত কয়েক বছর ধরে রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরত্বে থেকেছেন মায়াবতী। আগের দাপুটে নেত্রীর ভূমিকায় তাঁকে সাম্প্রতিককালে দেখা যায়নি। এরপরই জল্পনা শুরু হয়েছিল যে রাজনীতি থেকে কী দূরত্ব বাড়াচ্ছেন মায়াবতী? তার মধ্যেই লখনউতে রবিবার বিএসপি-র বৈঠকে পার্টির নেতা-কর্মীদের সামনে আকাশের নাম ঘোষণা করলেন মায়াবতী। তিনি জানান, তাঁর উত্তরাধিকারী হবেন ভাইপো আকাশ আনন্দ। অর্থাৎ মায়াবতীর পর বিএসপি সুপ্রিমো পদে বসবেন আকাশ। এদিনের বৈঠকে ডাকা হয়েছিল বিএসপি-র সমস্ত রাষ্ট্রীয় পদাধিকারী এবং শীর্ষনেতাদের। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উত্তর প্রদেশ বিধানসভায় বিএসপি দলনেতা উমাশংকর সিং এবং বিএসপি-র রাজ্য সভাপতি বিশ্বনাথ পাল। ২৮টি রাজ্যের বিএসপি নেতারাও উপস্থিত ছিলেন এই বৈঠকে।
এদিন সংবাদমাধ্যমের সামনে বিষয়টি জানিয়ে বিএসপি নেতা উদয়বীর সিং বলেন, ‘বিএসপি প্রধান মায়াবতী আকাশ আনন্দকে নিজের উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেছেন। আকাশ সম্পর্কে তাঁর ভাইপো হন।’
বাংলার রাজনীতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরাট ভরসার জায়গা তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছোটবেলা থেকেই লড়াকু মেজাজের অভিষেক যে একদিন বড় হয়ে শক্ত হাতে দলের হাল ধরবে তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি তৃণমূল সুপ্রিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অনেকটা সেভাবেই গত কয়েক বছর ধরে আকাশের বিএসপি দলে অন্তর্ভুক্তিকরণ হয়। আকাশ এখন রাজস্থানে বিএসপি-র জাতীয় কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ২০২৩-এর অগাস্ট মাস থেকে দলের মধ্যে আকাশের গুরুত্ব বাড়তে শুরু করে। দলের সর্বোচ্চ স্তরের প্রতিটি বৈঠকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায় মায়াবতীর ভাইপোকে। লখনউতে রাজ্য স্তরের রিভিউ বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন আকাশ। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে মায়াবতী আকাশকে দলের সদস্য হিসেবে ঘোষণা করেন। যদিও ২০১৭ সালে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার মিছিলে সাহারানপুর থেকে তাঁর সঙ্গে প্রথম পরিচয় করিয়ে দেন পিসি মায়াবতী। সেই থেকেই রাজনৈতিক যাত্রা শুরু আকাশ আনন্দর। ২০১৯ সালের জুন মাসে মায়াবতী আকাশের বাবা আনন্দ কুমারকে পার্টির সেকেন্ড-ইন-কমান্ডের পদে বসান। ভাইপোকে দেওয়া হয় জাতীয় কো-অর্ডিনেটরের পদ।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় এই আকাশ আনন্দকেই দেখা গিয়েছিল পিসির হয়ে প্রচারে নামতে। নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করায় নির্বাচন কমিশন মায়াবতীর উপর ৪৮ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সেই সময় আকাশই পিসির হয়ে প্রচারের হাল ধরেছিলেন।
দলের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে বিএসপি-র ভালো সময় আসেনি। ২০১৭ সাল থেকে পড়ে গেছে দলের ভোটব্যাঙ্ক। ২০১৭, ২০১৯-এ দল ধরাশায়ী হয়। ২০২২ সালে উত্তর প্রদেশ বিধানসভায় মাত্র একটি আসন ছিল বহুজন সমাজ পার্টির। সম্প্রতি চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিশেষ করে মধ্য প্রদেশ ও রাজস্থানে বিএসপির প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন আকাশ। মধ্য প্রদেশে সন্তোষজনক ভোট পেয়েছে বিএসপি। রাজস্থানে দুই আসনে জয়ীও হয়েছে বিএসপি।ফলে আকাশের গুরুত্ব বাড়িয়ে ২০২৪-এর আগে তরুণ প্রজন্মের কাছে দলের প্রতি আস্থা গড়ে তোলা পিসি মায়াবতীর এখন প্রধান লক্ষ্য।