মহিলাদের বিক্ষোভে ফের অগ্নিগর্ভ মণিপুর , নামল সেনা বিক্ষোভের আঁচ মিজোরামেও

ইম্ফল, ২২ জুলাই –  গত কয়েকদিনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফের অশান্ত মণিপুর। মহিলাদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদে রাস্তা আটকে তুমুল বিক্ষোভে শামিল হন মণিপুরের মহিলারা। বিক্ষোভ সামাল দিতে নামাতে হয় সেনাবাহিনী। রাস্তার মাঝখানে টায়ার জ্বালানো হয়, প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে রাস্তা অবরুদ্ধ করে দেন বিক্ষোভকারী মহিলারা। পাশাপাশি মণিপুরকাণ্ডের প্রভাব পড়ল পাশের  রাজ্য মিজোরামেও।  মিজোরামের  বাসিন্দা মেইতেইদের রাজ্য ছাড়ার ডাক দিল ‘পামরা’ নামে একটি সংগঠন। সংগঠনের তরফে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মেইতেইদের রাজ্য ছাড়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। আরও জানানো হয়েছে, মেইতেইদের উপর এরপর কোনও অত্যাচারের ঘটনা ঘটলে তারাই দায়ী থাকবে। এই বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে মেইতেইদের নিরাপত্তা বাড়াচ্ছে মিজোরাম সরকার

ইম্ফলের ঘড়ি এলাকার ব্যস্ত ও জনবহুল রাস্তায় শনিবার মকাল থেকে বিক্ষোভ প্রতিবাদ শুরু করেন মহিলারা। তাঁদের সঙ্গে সামিল হন পুরুষরাও।বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন মহিলারাই। হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়েন তাঁরা। রাস্তা সম্পূর্র্ণভাবে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ চলে। বিক্ষোভকারীরা রাস্তার মাঝখানে টায়ার জ্বালিয়ে দেন। মনিপুরে দুই মহিলাকে নগ্ন করে হাঁটানো ও অত্যাচারের প্রতিবাদেই মূলত পথে নামেন মহিলারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে সশস্ত্র পুলিশবাহিনীর পাশাপাশি, পাঠানো হয় সেনা জওয়ানদেরও। তাঁরা গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন বিক্ষোভকারীদের আটকাতে ইম্ফলের জায়গায় জায়গায় প্রচারমূলক মিছিলও করা হয়।

এদিকে মণিপুরকাণ্ডের প্রভাব পড়ল মিজোরামেও।এ বার মিজোরামে বসবাসকারী মেইতেইদের রাজ্য ছাড়ার ডাক দিল ‘পামরা’ নামে এক সংগঠন। শুক্রবার সংগঠনের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়, মণিপুরের নারী নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই মিজো যুবকরা ক্ষুব্ধ। তাই তাদের নিজেদের ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ মেইতেইদের রাজ্য ছাড়তে বলা হচ্ছে। এরপরে  ‘অপ্রীতিকর’ কিছু ঘটলে মেইতেইরাই দায়ী থাকবেন বলে ওই বিবৃতিতে জানানো হয়।


মিজোরাম প্রশাসনের একটি সূত্র মারফত জানা গেছে, বিবৃতিটি প্রকাশ্যে আসার পরই দ্রুত পদক্ষেপ করেছে প্রশাসন। মেইতেইদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এর আগেই মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংকে  মিজোরামের বাসিন্দা মেইতেই জনগোষ্ঠীর মানুষদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছিলেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা।

গত মে মাস থেকে কুকি এবং মেইতেই জনজাতির সংঘর্ষে উত্তপ্ত মণিপুর। এখনও পর্যন্ত ১৫০-র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বহু ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ঘরছাড়া হয়ে কাটাচ্ছেন অনেকে। অশান্তির আবহে মণিপুর ছেড়ে অন্য রাজ্যেও পালিয়েছেন কেউ কেউ। এই পরিস্থিতিতে মণিপুরের একটি ভিডিওকে ঘিরে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য। মনিপুরের হিংসা নিয়ে মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের পদত্যাগের দাবি ওঠে ।  মণিপুরের পরিস্থিতির কড়া সমালোচনা করেছে সুপ্রিম কোর্টও। এই পরিস্থিতিতেই উত্তর-পূর্বের রাজ্যটিতে শনিবার মহিলাদের বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আবার উত্তেজনা ছড়াল।