জয়পুর, ৭ নভেম্বর– এক দুই নয়, পুরো ৫০ বছর৷ কিন্তু একবারের জন্যও ভাগ্য সুপ্রশন্ন হয়নি তার ওপর৷ জয়ের মুখ না দেখতে পেয়েও ১৯৭০ থেকে একনাগাড়ে নির্বাচনে লড়ে চলেছেন তিতার সিং৷ তিনি ভোটে দাঁড়ালেই হারবেন, এ যেন নিয়ম হয়ে গেছে৷ এমনকী, শুধু হার নয়, এমন গোহারা হার, যে প্রতিবারই তাঁর জামানত জব্দ হয়েছে৷ তবু হাল ছাড়েননি ৭৮ বছরের বৃদ্ধ৷ রাজস্থানের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনেও আরও একবার ভাগ্য পরীক্ষা করবেন বলে মনস্থ করেছেন তিনি৷ তিতার সিং দিনমজুরের কাজ করে পেট চালান৷ আগামী ২৫ নভেম্বর রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনে করণপুর বিধানসভা কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তিনি৷
গত ৫০ বছর ধরে পঞ্চায়েত স্তর থেকে লোকসভা পর্যন্ত ২০টি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিতার সিং৷ প্রতিটিতেই হেরেছেন৷ তবু আবার ভোটে দাঁড়াবেন? তিনি জানিয়েছেন, তিনি অর্থের লোভে কিংবা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য ভোটে দাঁড়ান না৷ ‘কেন লড়ব না? সরকারের দায়িত্ব হল মানুষের জন্য কাজ করা৷ জমি, খাবার এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া৷ নির্বাচন সেই অধিকার আদায়ের লড়াই,’ জানিয়েছেন বৃদ্ধ৷
রাজস্থানের ‘২৫এফ’ গ্রামের বাসিন্দা তিতার দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত৷ ১৯৭০ সালে তিতার যখন দেখেন, ক্যানাল কমান্ড এলাকায় সরকার যে জমি বরাদ্দ করছে সাধারণ মানুষের জন্য, তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দলিতরা৷ তারপরেই প্রথমবার ভোটে দাঁড়াবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন তিতার৷ তাঁহার দাবি ছিল সরকার যেন ভূমিহীন ও দরিদ্র শ্রমিকদের জন্য জমি বরাদ্দ করে৷ সেই শুরু, তারপর থেকে যতবার সুযোগ এসেছে, একবারও ছাড়েননি তিতার৷ প্রত্যেকবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এবং হেরেছেন৷
এই মুহূর্তে আমানত মূলধন হিসাবে তাঁর কাছে মাত্র ২ হাজার ৫০০ টাকা নগদ রয়েছে৷ তবে কোনও জমি, সম্পত্তি বা যানবাহন নেই৷ এর আগে ২০০৮, ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন তিতার৷ ২০০৮ সালে ভোট পেয়েছিলেন ৯৩৮টি৷ পরের বিধানসভা নির্বাচনে সেই সংখ্যা আরও কমে হয় ৪২৭৷ ২০১৮ সালে ৬৫৮টি ভোট পেয়ে হেরে যান তিতার৷ এমনিতে মহাত্মা গিান্ধ জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন- এর অধীনে দিনমজুর হিসাবে কাজ করেন তিতার৷ তবে নির্বাচন এলেই পুরোদমে ভোটপ্রচারের কাজে লেগে পড়েন৷ এবারের অন্যথা হয়নি৷ বিধানসভা নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হিসেবে এবারেও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তিনি এবং কোমর বেঁধে পূর্ণ উদ্যমে জেতার লক্ষ্যে প্রচার শুরু করেছেন৷