• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজ, গণতন্ত্রের হত্যা, মত মমতার

দিল্লি, ৮ ডিসেম্বর– অবশেষে এথিক্স কমিটির রিপোর্টের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হল। ‘প্রশ্নঘুষ’ কাণ্ডে মহুয়া মৈত্রের লোকসভার সাংসদ পদ খারিজ করে দিলেন লোকসভার  স্পিকার ওম বিরল । শুক্রবার দুপুর ১২টার সময় এথিক্স কমিটির রিপোর্ট পেশ করেন কমিটির প্রধান তথা বিজেপি সাংসদ বিজয় সোনকার। জল্পনা মতোই ওই রিপোর্টে মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। যদিও এদিন এথিক্স কমিটির রিপোর্ট পড়ার

দিল্লি, ৮ ডিসেম্বর– অবশেষে এথিক্স কমিটির রিপোর্টের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হল। ‘প্রশ্নঘুষ’ কাণ্ডে মহুয়া মৈত্রের লোকসভার সাংসদ পদ খারিজ করে দিলেন লোকসভার  স্পিকার ওম বিরল । শুক্রবার দুপুর ১২টার সময় এথিক্স কমিটির রিপোর্ট পেশ করেন কমিটির প্রধান তথা বিজেপি সাংসদ বিজয় সোনকার। জল্পনা মতোই ওই রিপোর্টে মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। যদিও এদিন এথিক্স কমিটির রিপোর্ট পড়ার জন্য তৃণমূল, কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলির তরফে কিছুটা সময় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই আবেদনে সাড়া দেননি স্পিকার। মহুয়াকে কিছু বলার অনুমতিও তিনি দেননি। আলোচনার পর ভোটাভুটিতে তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে গিয়েছে।

এদিন বিজয় সোনকার এথিক্স কমিটির রিপোর্ট পেশের পরই কার্যত তুমূল শোর-গোল বেঁধে যায় লোকসভায়। মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে সরকার বিরোধী স্লোগান দেওয়া শুরু করেন তৃণমূল সাংসদরা। পাশে দাঁড়ান কংগ্রেস-সহ ইন্ডিয়া জোটের অন্যান্য শরিকরা। মোদি বিরোধী স্লোগানে কেঁপে ওঠে অধিবেশন কক্ষ। রিপোর্টের কপি সব সাংসদকে দিতে হবে, স্বৈরাচার চলবে না, দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন বিরোধীরা। শেষ পর্যন্ত দুপুর দুটো পর্যন্ত অধিবেশন মূলতুবি করে দিতে হয়।

অধিবেশন মূলতুবি হওয়ার পর জোড়া দাবিতে স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লিখেছে তৃণমূল। এরাজ্যের শাসকদলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আবেদন করেছেন, ওই রিপোর্টের কপি সব সাংসদদের হাতে যাওয়ার পর সেটা নিয়ে আলোচনার জন্য অন্তত ৪৮ ঘণ্টা সময় দিতে হবে। তারপর সেটা নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করতে হবে। এবং মহুয়াকেও বলতে দিতে হবে। যদিও এই রিপোর্ট নিয়ে মহুয়ার বিরুদ্ধে কী সিদ্ধান্ত হয়, সবটাই নির্ভর করছে স্পিকারের উপর।

বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হতেই তীব্র বিরোধিতা করতে দেখা যায় মহুয়াকে। বিজেপির বিরুদ্ধে আরও ঝাঁঝ বাড়ালেন মহুয়া মৈত্র। তিনি জানিয়েছেন, এই ঘটনার শেষ দেখে তিনি ছাড়বেন। শুধু বর্তমানে নয়, আগামী ৩০ বছর লোকসভার ভিতরে এবং বাইরে লড়াই করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূলের বহিষ্কৃত সাংসদ।

লোকসভা থেকে বেরিয়ে মহুয়া বলেন, ‘‘লোকসভার এথিক্স কমিটিতে ‘এথিক্স’ বলে কিছু অবশিষ্ট নেই। তারা সব নিয়ম ভেঙে ফেলেছে। এমন একটা কারণে আমাকে বহিষ্কার করা হল, যা লোকসভার সকল সদস্যের মধ্যে প্রচলিত একটি অভ্যাস। আমি কারও কাছ থেকে টাকা নিয়েছি বা কোনও উপহার নিয়েছি, তার কোনও প্রমাণ নেই।’’

মহুয়া জানান, এথিক্স কমিটি ভাল করে যাচাই না করেই তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষের করেছে এবং শাস্তি নিশ্চিত করেছে। টাকা নেওয়া বা উপহার নেওয়ার কোনও প্রমাণ নেই কোথাও। তিনি বলেন, ‘মোদি সরকার আমাকে চুপ করিয়ে দিতে চাইছে। মহিলা সাংসদকে হেনস্থা করা হচ্ছে। আগামী ছ’মাসও হেনস্থা করা হবে।আমাকে কিছু বলতে পর্যন্ত দেওয়া হল না।’
যদিও মহুয়ার অভিযোগের উত্তরে বিজেপির তরফে সাংসদ অপরাজিতা সরঙ্গি বলেন, ‘‘মহুয়াকে বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তিনি সুযোগ পেলেও তখন কিছু বলেননি। ওয়াক আউট করে গিয়েছিলেন।’’
এদিন রিপোর্টের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে তুমুল হট্টগোল বেঁধে যায় সংসদে। মহুয়াকে বলতে না দেওয়ার তৃণমূলের তরফে বলতে শুরু করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, আগে কী হয়ে গিয়েছে, তা এখন যুক্তি হতে পারে না। মহুয়াকে বলতে না দিয়ে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন তিনি। কল্যাণ জানান, দর্শন হিরানন্দানির বয়ানই নেওয়া হয়নি।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তৃণমূলের তরফে তিনি কথা বলবেন না। কথা বলবেন মহুয়া নিজে। এ ভাবে এথিক্স কমিটির রিপোর্ট নিয়ে মহুয়াকে বলার সুযোগ করে দিতে চাইছে তৃণমূল। বিজেপি তার বিরোধিতা করেছে।
উল্লেখ্য, প্রশ্ন-ঘুষ কাণ্ড তথা মহুয়া মৈত্র বিতর্কে আগাগোড়া কৃষ্ণনগরের সাংসদের পাশে থাকল কংগ্রেস। এমনকী মহুয়াকে সংসদ থেকে বহিষ্কারের পর সদ্য প্রাক্তন সাংসদ যখন সাংবাদিকদের সামনে উত্তেজিত হয়ে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, দেখা গেল ঠায় পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সত্তরোর্ধ্ব সনিয়া গান্ধি ।
কংগ্রেস সাংসদ মনীশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘১২টায় রিপোর্ট পেশ করে ২টোয় তা নিয়ে আলোচনা স্বাভাবিক নয়। তিন-চার দিন রিপোর্ট পড়ার জন্য সময় দিলে পৃথিবী উল্টে যাবে না। বিচারব্যবস্থার সাধারণ নিয়ম এখানে মানা হচ্ছে না। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁকে কথাই বলতে দেওয়া হচ্ছে না। তা ছাড়া, এথিক্স কমিটি শুধু সুপারিশ করতে পারে। কী সাজা হবে, তা তারা ঠিক করে দিতে পারে না।’
অধীর লোকসভায় স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, ‘‘এত বড় চিঠি এত কম সময়ে পড়া সম্ভব নয়। ভাল করে পড়ে এটা নিয়ে চর্চা করা উচিত। আদালতেও কারও সাজা হলে বিচারক আসামির বক্তব্য শোনেন। কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে, তাঁকে বলার সুযোগ দেওয়া উচিত। এই সংক্রান্ত বিবেচনা আমি আপনার উপরেই ছাড়ছি।’
মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ করেছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। অক্টোবর মাসের ১৭ তারিখ নাগাদ প্রথমবার সেই অভিযোগ তুলেছিলেন নিশিকান্ত। কিন্তু দু’দিন পর তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়ে দিয়েছেন, এ ব্যাপারে দল কোনও মন্তব্য করবে না। অর্থাৎ মহুয়াকে তাঁর নিজের লড়াই নিজেই করে নিতে হবে বলে বুঝিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল।