দিল্লি, ১৬ অক্টোবর – কেন্দ্রীয় তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের কাছে সমস্ত সাংসদদের অবস্থান ও লগইনের যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করার আর্জি জানালেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন করার অভিযোগ এনেছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। মহুয়ার লোকসভার অ্যাকাউন্টের তথ্য খতিয়ে দেখার আর্জিও জানান তিনি। এবার তৃণমূল সাংসদ অশ্বিনী বৈষ্ণবের কাছে সব সাংসদের লোকেশন ও লগইন-এর বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করার আর্জি জানিয়েছেন।
সোমবার নিজের এক্স হ্যান্ডলে মহুয়া মৈত্র লিখেছেন, ‘সব সংসদ সদস্যের সমস্ত সংসদীয় কাজ পিএ , সহকারী , ইন্টার্ন ও বড় বড় দল করে থাকে। শ্রদ্ধেয় অশ্বিনী বৈষ্ণব , অনুগ্রহ করে সিডিআর-সহ সমস্ত সাংসদের অবস্থান এবং লগইন বিশদ বিবরণ প্রকাশ করুন। লগইন করার জন্য কর্মীদের দেওয়া প্রশিক্ষণের তথ্য প্রকাশ করুন। লগইন করার জন্য কর্মীদের দেওয়া প্রশিক্ষণের তথ্য প্রকাশ করুন।’
দুবাই-কেন্দ্রিক ব্যবসায়ীর থেকে নেওয়া অর্থ ও উপহারের বিনিময়ে লোকসভায় প্রশ্ন করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, এই অভিযোগ তুলে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে মহুয়াকে সাংসদ পদ থেকে সাসপেন্ড করার আর্জি জানিয়েছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য স্পিকারের কাছে দাবিও জানান দুবে। পাশাপাশি মহুয়াকে সংসদ থেকে অবিলম্বে বরখাস্ত করার দাবিও জানান তিনি।
এই খবর জানাজানি হতে রবিবার সন্ধ্যাতেই এক্স হ্যান্ডেলে নিজের বক্তব্য জানান মহুয়া। সেখানে একযোগে বিজেপি, আদানি গোষ্ঠী এবং সিবিআইকে আক্রমণ করেছিলেন তিনি। একের পর এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘আদানি গোষ্ঠী যদি আমাকে চুপ করানোর জন্য বা আমাকে টেনে নিচে নামানোর জন্য সঙ্ঘবাদী আর ভুয়ো ডিগ্রিওয়ালাদের মিথ্যা দলিলে বিশ্বাস করবে বলে ঠিক করে থাকে, তবে আমি বলব, আপনাদের সময় নষ্ট করবেন না, বরং আইনজীবীদের ভাল কাজে ব্যবহার করুন।’’ বিজেপিকে আক্রমণ করে মহুয়া লেখেন, ‘জাল ডিগ্রিওয়ালা এবং অন্যান্য বিজেপির ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মুলতুবি রয়েছে একাধিক প্রিভিলেজ। লোকসভার অধ্যক্ষ সেগুলি আগে শেষ করুন, তারপরে আমার বিরুদ্ধে যে কোনও প্রস্তাব নেওয়া হলে তাকে স্বাগত জানাচ্ছি। ‘
সোমবার আইনি চিঠিতে মহুয়া পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত এবং আইনজীবী দেহাদরির বিরুদ্ধে। চিঠিতে ফেসবুক, এক্স, ইউটিউব, গুগ্ল ছাড়াও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের নামও লিখেছেন মহুয়ার আইনজীবী সমুদ্র সারঙ্গী। তাতে মূলত অভিযোগ নিশিকান্ত এবং দেহাদরির বিরুদ্ধে। মহুয়ার দাবি, অতীতে নিশিকান্তের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে সংসদে তাঁর সংঘাত হয়। তাঁর দাবি, ২০২১ সালেও মহুয়ার সাংসদপদ খারিজের দাবি তুলেছিলেন নিশিকান্ত। এনেছিলেন স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ। এর পিছনের কারণ হিসাবে আইনজীবীর দাবি, ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা আসনের সাংসদ নিশিকান্তের তরফে লোকসভা নির্বাচনের সময়ে পেশ করা হলফনামায় যে শিক্ষাগত যোগ্যতার উল্লেখ রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মহুয়া।
আইনজীবী দেহাদরির বিরুদ্ধে আরও মারাত্মক অভিযোগ মহুয়ার। আইনি চিঠিতে লেখা হয়েছে, দেহাদরি ও মহুয়া ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বেশ কয়েক বছরের ঘনিষ্ঠতায় কিছুদিন আগে ব্যাঘাত ঘটে ব্যক্তিগত কারণে। এর পর থেকেই দেহাদরি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠেন। তিনি মহুয়াকে বার বার হুমকি দিয়েছেন। জঘন্য, নোংরা, অশ্লীল মেসেজ পাঠাতে থাকেন। এখানেই না থেমে অভিযোগ করা হয়েছে, দিল্লিতে সাংসদ হিসাবে পাওয়া মহুয়ার বাংলোয় অজান্তে ঢুকে পড়েন দেহাদরি এবং অনেক ব্যক্তিগত জিনিস চুরি করেন। শুধু তা-ই নয়, দেহাদরি মহুয়ার পোষ্য কুকুরকে নিয়ে যান বলেও অভিযোগ। যদিও তা পরে মহুয়া ফেরত পান।
এ নিয়ে পরে দেহাদরি মহুয়ার সঙ্গে আপোষে মিটমাটের চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ। তার প্রেক্ষিতে গত ৪ অক্টোবর মহুয়া বড়খাম্বা পুলিশ স্টেশনে একটি চিঠি দিয়ে পুরনো অভিযোগ দু’টি প্রত্যাহারের কথা জানান। অভিযোগ প্রত্যাহারের পরেও দেহাদরি নতুন করে মহুয়ার সম্পর্কে নানা কথা রটাতে থাকেন বলে অভিযোগ তৃণমূল সাংসদের আইনজীবীর। এর পরে গত শনিবার বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ তুলে দেহাদরি সিবিআইকে চিঠি দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
গত কয়েকদিনে সমাজমাধ্যমে মহুয়ার কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। সেই প্রসঙ্গও আইনি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। মহুয়ার পক্ষে দাবি করা হয়েছে, তাঁর বন্ধু আইনজীবী এএস নাদকারনির জন্মদিনের নৈশভোজে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে তোলা তাঁর কিছু ব্যক্তিগত ছবি বিজেপি সদস্য গত শনিবার এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন। কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরের সঙ্গের সেই ছবিতে আইনজীবী দেহাদরিও ছিলেন বলে দাবি মহুয়ার। যদিও প্রকাশ্যে আনা ছবি থেকে নিজেকে বাদ দেন দেহাদরি। এই সব ছবিগুলি প্রকাশ্যে নিয়ে আসার সঙ্গে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্তেরও যোগ রয়েছে বলে দাবি মহুয়ার।
সোমবার এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে সব সাংসদদের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করার দাবি জানান তৃণমূল সাংসদ। যদিও এর পরিপ্রেক্ষিতে লোকসভার অধ্যক্ষ বা অশ্বিনীর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।