দিল্লি, ৮ নভেম্বর– বৃহস্পতিবারই তাঁকে নিয়ে দ্বিতীয় বৈঠকে বসার কথা লোকসভার এথিক্স কমিটি। তার আগেই টাকার বদলে প্রশ্ন বিতর্কে এবার বিপদ বাড়ল তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের । মহুয়ার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন লোকপাল। এমনটাই দাবি করলেন মহুয়ার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগকারী বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে।মহুয়া মৈত্রর প্রাক্তন বন্ধু তথা আইনজীবী জয় অনন্ত দেহদ্রাইয়ের একটি চিঠির ভিত্তিতে, মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে শিল্পপতি দর্শন হিরানন্দানির কাছ থেকে নগদ ও দামী উপহার নিয়ে, তাঁর তৈরি করে দেওয়া প্রশ্নই সংসদে আওড়াতেন তৃণমূল সাংসদ।
দুবের দাবি, যেহেতু মহুয়ার বিরুদ্ধে আইনি কোনও পদক্ষেপ করার অধিকার করার অধিকার এথিক্স কমিটির নেই। সেটা করতে পারেন লোকপাল। সেই লোকপালই এবার তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
বুধবার সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে নিশিকান্ত দুবে দাবি করেছেন, তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে জাতীয় সুরক্ষা তাকে রেখে দুর্নীতি করার দায়ে মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন লোকপাল। বিজেপি সাংসদের অভিযোগ সত্যি হলে, টাকার বদলে প্রশ্ন ইস্যুতে মহুয়ার বিপদ বাড়বে বৈ কমবে না।
সংসদের এথিক্স কমিটি ইতিমধ্যেই তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। দুবের দাবি সত্যি হলে, এবার কৃষ্ণনগরের সাংসদের বিরুদ্ধে তদন্ত করবে সিবিআইও। যদিও লোকপাল বা সিবিআই কারও তরফেই এ নিয়ে সরকারিভাবে জানানো হয়নি।
উল্লেখ্য, মহুয়ার বিরুদ্ধে প্রথম টাকার বদলে প্রশ্ন করার অভিযোগ তুলেছিলেন নিশিকান্ত দুবেই। তিনিই তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে স্পিকারকে চিঠি লেখেন। লোকপালকেও চিঠি লেখেন তিনিই। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই মহুয়ার বিরুদ্ধে এথিক্স কমিটিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন স্পিকার ওম বিড়লা। এথিক্স কমিটি এ নিয়ে দুটি বৈঠক করেও ফেলেছে। বৃহস্পতিবার ফের বৈঠক এথিক্স কমিটির। সেদিনই সাংসদ হিসাবে মহুয়ার ভাগ্য নির্ধারণ হবে।
একদিকে যখন নিশিকান্ত মহুয়ার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের খবর দিচ্ছেন অন্যদিকে তখন মহুয়া নয়া তিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং শিল্পপতি গৌতম আদানিকে বিদ্ধ করছেন। তাঁর অভিযোগ, এথিক্স কমিটিতে বিরোধীদের সংখ্যালঘু করার জন্যই মঙ্গলবারের বৈঠক পিছিয়ে বৃহস্পতিবার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এথিক্স কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা ছিল ৭ নভেম্বর, মঙ্গলবার। কিন্তু গত সোমবার জানা যায়, সেই বৈঠক হবে ৯ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার। ঠিক কেন বৈঠক দু দিন পিছিয়ে দেওয়া হল, তার কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। মহুয়ার অভিযোগ, এথিক্স কমিটিতে বিজেপি সাংসদদের সংখ্যা বেশি রাখার জন্যই রাতারাতি বদলে দেওয়া হয়েছে বৈঠকের দিন।
বুধবার সোশাল মিডিয়ায় তৃণমূল সাংসদ লিখছেন,”আমার বিরুদ্ধে কোনও খসড়া প্রকাশ করা হয়নি। সেটা অবশ্য নিয়মেই আছে। কিন্তু রাতারাতি বৈঠকের তারিখ পালটে দেওয়া হল কারণ ওই দিন কংগ্রেসের এক সাংসদের মনোনয়নের দিন। তিনি যাতে আসতে না পারেন। বিজেপি নিজেদের জোটসঙ্গীদের ফোন করছে সাংসদদের পাঠানোর জন্য। মধ্যপ্রদেশ বিজেপি সভাপতিকে উড়িয়ে আনা হচ্ছে চাটার্ড ফ্লাইটে। শুধুই নিজেদের সাংসদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য। মোদি, আদানির এত ভয় কীসের!”
বস্তুত বৃহস্পতিবার এথিক্স কমিটির বৈঠকে সত্যিই বিরোধী সাংসদের সংখ্যা অনেকটা কম হতে চলেছে। প্রথমত বিজেপি এবং জোটসঙ্গীদের সব সাংসদ ওইদিন সংসদে হাজির থাকবেন। তার উপর আবার কংগ্রেসের নরেশ উত্তম রেড্ডি ওইদিনই তেলেঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দেবেন। অর্থাৎ তিনি বৈঠকে থাকতে পারবেন না। তাই মহুয়ার শাস্তি নিয়ে বৃহস্পতিবার যে প্রস্তাবই পেশ করা হোক, সেই প্রস্তাব পাশ করাতে বিজেপির বিশেষ অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। মহুয়ার অভিযোগ, সবটা জেনেই তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন মোদি-আদানিরা।