শরীর সুস্থ রাখতে সুষম খাদ্যের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জল যেমন আমাদের সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখে, তেমনই ত্বক-চুল ভাল রাখতেও সহায়তা করে। তাই কথায় বলে, জলের আরেক নাম জীবন। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, পানীয় জল রাখার জন্য সেরা পাত্র হল মাটির কিংবা তামার। সারারাত তামার পাত্রে রাখা জল, খালি পেটে খাওয়ার উপকারিতা অনেক। প্রাচীন কাল থেকেই আমাদের দেশে তামার পাত্রে জল খাওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই অভ্যাস এখন অনেকটাই বদলে গিয়েছে। তামাতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য বর্তমান। এটি টক্সিন অপসারণ করতেও সাহায্য করে। তাহলে জেনে নিন, তামার পাত্রে জল পান করার বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।
১) ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:-
তামা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে পরিচিত, যা ফ্রি ব়্যাডিকালের বিরুদ্ধে লড়াই করার। ফ্রি ব়্যাডিকেল এবং তাদের ক্ষতিকর প্রভাবই মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টির মূল কারণ। তামা মেলানিন উৎপাদনে সহায়তা করে, যা ত্বক এবং চোখকে বর্ণ দেওয়ার পাশাপাশি, সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকেও রক্ষা করে।
২) উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে:- তামা কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে অত্যন্ত সহায়ক। শৈশব থেকেই যদি শরীরে কপারের ঘাটতি দেখা দেয়, তাহলে তা হাইপোটেনশন বিকাশের দিকে পরিচালিত করে। তবে প্রাপ্তবয়স্করা যদি তামার ঘাটতিতে ভোগেন, তাহলে তাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হতে পারে। তামার ট্রেস পরিমাণ আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৩) থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে:- বিশেষজ্ঞদের মতে, তামা থাইরয়েড গ্রন্থির অসঙ্গতি ব্যালেন্স রাখতে পারে, যা থাইরয়েড গ্রন্থিকে ভালভাবে কাজ করার জন্য শক্তি জোগায়। পাশাপাশি এটি থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে অত্যধিক ক্ষরণের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে। তামার অভাবের ফলে থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা বাধাপ্রাপ্ত হয়। তবে এটাও সত্য যে, অত্যধিক তামার মাত্রা থাইরয়েড গ্রন্থির কর্মহীনতা সৃষ্টি করে, যার ফলে রোগীর মধ্যে হাইপার বা হাইপোথাইরয়েডিজম দেখা দেয়।
৪) রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে:-
তামা হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে। এটি শরীরকে আয়রন শোষণ করতেও সহায়তা করে, এর অভাব হলে রক্তাল্পতা দেখা দেয়। তাছাড়া, মানবদেহে তামার ঘাটতির ফলে বিরল হেমাটোলজিকাল ডিসঅর্ডার হতে পারে, যার ফলে শ্বেত রক্তকণিকা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়।
৫) আর্থ্রাইটিস ও ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে- তামাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য বর্তমান। তামা দ্রুত ক্ষত নিরাময়ের পাশাপাশি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতেও সহায়তা করে। এছাড়া, আর্থ্রাইটিস এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের স্বস্তি প্রদান করে। তামা হাড় মজবুত করতেও সহায়তা করে।
৬) হজমে সহায়ক-
আয়ুর্বেদ মতে, তামার পাত্রে জল পান করলে পেট ডিটক্সিফাই এবং পরিষ্কার হয়। তামায় এমন কিছু বৈশিষ্ট্য বর্তমান, যা পেরিস্টালসিসকে উদ্দীপিত করে, পেটের আস্তরণের প্রদাহকে কমায় এবং হজম ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করে। এছাড়া, তামা পেটের আলসার, বদহজম এবং পাকস্থলীর সংক্রমণের চিকিৎসার ক্ষেত্রে চমৎকার প্রতিকার।
৭) ওজন হ্রাস করে-
তামা শরীরের অতিরিক্ত চর্বিকে দ্রবীভূত করে এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে। মানব শরীর যখন বিশ্রাম গ্রহণ করে, তখনও তামা শরীরে অতিরিক্ত চর্বিকে দহন করতে সহায়তা করে। তবে শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় তামার উপস্থিতি, শরীরে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।