সিপিএমের প্রেস্টিজ ইস্যু পুথুপল্লি ধরতে মরিয়া হাত থেকে পদ্মশিবির 

তিরুবন্তপুরম, ২ সেপ্টেম্বর– আগামী মঙ্গলবার দেশের যে ছয় রাজ্যের সাতটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের জন্য ভোট নেওয়া হবে কেরলের পুথুপল্লি তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । তাই কেরল বিধানসভার ওই আসনটির উপ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে তুমুল আগ্রহী কংগ্রেস এবং সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বও । দুই প্রধান দলের তৎপরতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রচারে জোর দিয়েছে পদ্ম শিবিরও।

যদিও রাজ্য-রাজনীতির নিরিখে এই আসনে হার-জিতে কোনও প্রভাব পড়ার কথা নয়। কেননা কংগ্রেস হারলে বিধানসভায় তাদের একটি আসন কমে যাবে। সিপিএম জিতলে তাদের একটি আসন বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে, বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কিন্তু তবুও এই আসন নিয়েও চলছে ওঠা-পড়ার খেলা। 

আসলে সেই ১৯৭০ সাল থেকে টানা ৫৩ বছর পুথুপল্লির বিধায়ক ছিলেন কংগ্রেস নেতা তথা কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমেন চণ্ডী। গত মাসে মারা গিয়েছেন কেরলের এই প্রবীণ নেতা। বাংলায় একটা সময় মালদহ লোকসভা আসন বলতে যেমন প্রয়াত কংগ্রেস নেতা গনিখান চৌধুরীকে বুঝত মানুষ, কেরলের পুথুপল্লিতে ওমেন চণ্ডী ছিলেন তাই। গনিখানকেও সিপিএম কখনও হারাতে পারেনি। ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতা এমন পর্যায়ে ছিল যে সিপিএম প্রার্থীরা প্রতিবার বড় মার্জিনে হেরেছেন।


পাটনা, বেঙ্গালুরুর পর বৃহস্পতি ও শুক্রবার মুম্বইয়ে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকেও সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং রাহুল গান্ধি দীর্ঘসময় একান্তে কথা বলেন। মুম্বইয়ের বৈঠকে পাশাপাশি বসেছিলেন রাহুল ও সীতারাম। বৈঠক শেষেও দু’জনের কথা হয়। একটা সময় বৈঠকে সঙ্গ দেন সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজাও। জাতীয় রাজনীতি নিয়ে সিপিএম এবং কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা যখন গলায় গলায় ভাব চালিয়ে যাচ্ছেন তখন কেরলে দুই দল একে অপরের প্রতি যুদ্ধংদেহী  । যদিও দুই শিবিরই একান্তে মানছে যতই জোট হোক, কেরলে লোকসভা ভোটেও এই রণনীতির বদল হবে না। অর্থাৎ সিপিএম এবং কংগ্রেস কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বে না।

গত মাসে কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চণ্ডীর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে রাজ্যে ছুটে গিয়েছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং রাহুল গান্ধি । শোকসভার ফাঁকে কংগ্রেস নেতারা পুথুপল্লির উপনির্বাচন নিয়ে একদফা আলোচনা সেরে নেন। রাহুল গান্ধি রাজ্য নেতাদের বলেন, উপনির্বাচনে পুথুপল্লি হাতছাড়া হলে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা মানসিক আঘাত পাবে। লোকসভা ভোটের মুখে তাতে খারাপ বার্তা যাবে। অন্যদিকে সিপিএম এবং কংগ্রেসের কাছে পুথুপল্লির ফল প্রেস্টিজ ইস্যু, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

অন্যদিকে, চিন্তায় পড়েছে সিপিএমও। সেই ১৯৭০ থেকে চেষ্টা চালিয়েও বামেরা ওমেন চণ্ডীকে হারাতে পারেনি। তাঁর মৃত্যুর পরও আসনটি হাতছাড়া থাকলে দলের মুখ পুড়বে, ভালই জানেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন-সহ কেরল সিপিএমের নেতারা। তাঁরাও মনে করছেন, পুথুপল্লির  উপনির্বাচনে জয়লাভ লোকসভা ভোটের আগে অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন পর্যন্ত নাওয়া খাওয়া ভুলে বিধানসভার ওই একটি আসনের উপনির্বাচনের প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এখনও পর্যন্ত চারটি সভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী, যা এককথায় নজিরবিহীন। রবিবার প্রচার শেষের আগে পিনারাই আরও সভা এবং রোড শো করবেন বলে ঠিক আছে।

অন্যদিকে, কেরলর ওয়ানাডের সাংসদ রাহুল গান্ধি রাজ্য কংগ্রেসের নেতাদের পুথুপল্লিতে প্রচারের আর্জি রক্ষা না করলেও দলের শীর্ষ নেতাদের ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কেসি বেণুগোপাল, শশী তারুররা একাধিক সভা করেছেন। কংগ্রেস এমনকী বয়সের ভারে ন্যুজ, অসুস্থ একে অ্যান্টনিকেও প্রচারে নামিয়েছে। কংগ্রেস আসনটি ধরে রাখতে ওমেন চণ্ডীর পুত্র চণ্ডী ওমেনকে প্রার্থী করেছে। সিপিএম প্রার্থী করেছে দলের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যকে। বিজেপি প্রচারে নামিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদেরও।