ইডির দফতরে হাজিরা এড়ালেন কেজরিওয়াল 

দিল্লি, ২ নভেম্বর – আবগারি দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার ইডির দফতরে হাজিরা দিলেন না দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি জানিয়ে দেন ইডির সামনে তিনি হাজির হবেন না। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে কেজরিওয়াল ইডিকে নোটিশ প্রত্যাহার করার আবেদন জানিয়েছেন। ইডির নোটিশকে তিনি ‘অবৈধ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়েছেন। আবগারি দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। কিন্তু সেই সমনে সাড়া না দিয়ে মধ্যপ্রদেশে ভোটের প্রচারে যান দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার ইডির হাজিরা এড়ালেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বরং ইডির নোটিশকে বেআইনি বলে দাবি করে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপির আর্জি মেনেই ইডি  তাঁকে সমন পাঠিয়েছে বলেও গুরুতর অভিযোগ তোলেন কেজরিওয়াল। চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটের প্রচারে যাওয়া থেকে আটকাতেই তাঁকে তলব করেছে ইডি, এমনটাই মনে করছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ইডিকে জানিয়েছেন তিনি মধ্যপ্রদেশে প্রচারে ব্যস্ত থাকবেন।  এরই মধ্যে আপ আশঙ্কা, হাজিরার দিনই গ্রেফতার করা হতে পারে আম আদমি পার্টি প্রধানকে।
 
দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় দিল্লির প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া এবং আপ সাংসদ সঞ্জয় সিংহকে আগেই গ্রেপ্তার করেছে ইডি। বৃহস্পতিবার সকালেই দিল্লির আরেক মন্ত্রী রাজকুমার আনন্দের বাড়ি সহ ১০ টি জায়গায় অভিযান চালিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। আম আদমি পার্টির বিধায়ক ও দিল্লি সরকারের মন্ত্রী রাজকুমার আনন্দের বাড়িতে এদিন খুব ভোরে হানা দেয় ইডি। জানা যাচ্ছে আর্থিক তছরুপ মামলার তদন্তে ইডি রাজকুমার আনন্দের বাড়িতে পৌঁছে তল্লাশি শুরু করে ইডি। শুধু তাই নয়, রাজকুমার আনন্দের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রায় ১০টি জায়গায় সকাল থেকেই ইডির অভিযান চলে ।
আপের আশঙ্কা ছিল, বৃহস্পতিবার হাজিরা দিলে কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হবে। এই মামলাতেই গ্রেপ্তার হওয়া দিল্লির প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়াকে গত সোমবার জামিন দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। তার পরেই কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারি নিয়ে আপে এখন শঙ্কার মেঘ। মঙ্গলবার আম আদমি পার্টির নেতা তথা দিল্লির  মন্ত্রী অতিসি বলেন, ‘আমার আশঙ্কা মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে আগামী ২ নভেম্বর ইডি গ্রেফতার করবে। তাঁর হাজিরার পরই তাঁকে সম্ভব গ্রেফতার করতে পারে কেন্দ্রীয় এজেন্সি।’  এমন আশঙ্কা কেন ? দিল্লির মন্ত্রীর কথায়, ‘অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ভয় পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাই ইডির হাতে তাঁকে গ্রেফতার করানো হতে পারে।’ একই আশঙ্কা আমি আদমি পার্টির একাংশের। অপর আপ নেতা রাঘব চাড্ডারও আশঙ্কা, কেজরিকে গ্রেপ্তার করার ‘ছক’ কষছে বিজেপি। তিনি বলেন, নেতাদের উপর প্রতিহিংসার রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। আম আদমি পার্টি ইন্ডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শরিক। সে জন্যই এই দলের প্রধান কেজরিওয়ালের প্রতি প্রতিহিংসার রাজনীতি করছেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা।
উল্লেখ্য, গত বছর আগস্টে দায়ের হওয়া আবগারি মামলার প্রথম এফআইআরে দিল্লির মুখ‌্যমন্ত্রীর নাম না থাকলেও চার্জশিটে কেজরির নাম রয়েছে। গত ১৬ এপ্রিল কেজরিওয়ালকে প্রায় সাড়ে নয় ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল আর এক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। পরে এই মামলায় বেআইনি আর্থিক লেনদেনের খোঁজ পেতে সমান্তরাল তদন্ত শুরু করে ইডি।
ভোটের প্রচারে ব্যস্ততার কারণে ইডি-সিবিআইয়ের হাজিরা এড়ানোর নজির আগেও আছে। গত মাসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে তৃণমূলের কর্মসূচি থাকায় ইডির হাজিরা এড়ান।সম্প্রতি কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমারকে রাজ্য বিধানসভার ভোটের প্রচারের সময় ইডি এবং সিবিআই তলব করেছিল। তিনি প্রচারে ব্যস্ত থাকার কারণ দেখিয়ে যাননি। কিন্তু তদন্তকারীদের কতবার এড়ানো সম্ভব?  ইডি-সিবিআই সূত্রে বলা হচ্ছে, তদন্তের প্রয়োজনে তারা কাউকে হাজিরা দিতে বাধ্য করতে পারে। আইনে সে ক্ষমতা দেওয়া আছে। তবে খুব কম ক্ষেত্রেই তা করা হয়। কারণ মামলা-মোকদ্দমায় আদালতে প্রমাণ করতে হয় কেন হাজিরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাতে তদন্তের অগ্রগতি জানাজানি হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই খুব জরুরি না হলে নোটিস উপেক্ষা করা মাত্র কাউকে গ্রেফতার করা হয় না।

তবে সাধারণ নিয়ম হল, একজনকে সর্বোচ্চ তিনবার নোটিস পাঠানো হয়। তৃতীয়বারও সাড়া না দিলে আদালত থেকে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা বের করা হয়। সেই পরোয়ানার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তদন্তকারীরা যে কোনও সময় গ্রেফতার করতে পারে। ইডির ব্যাখ্যা, নোটিস প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী এরপর আদালতে যেতে পারেন। তবে আদালত থেকে এই ব্যাপারে স্বস্তি মেলার সম্ভাবনা কম, মনে করছে আইনজ্ঞ মহল। কারণ, যে দুর্নীতির তদন্তে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে তলব করা হয়েছে সেই  আবগারি দুর্নীতিকাণ্ডে জমা দেওয়া প্রাথমিক চার্জশিটে কেজরিওয়ালের নাম আছে। 

অরবিন্দ কেজরিওয়াল গ্রেফতারি হলে জেল থেকেই দিল্লির সরকার চলবে বলে হুঙ্কার দিয়েছেন আম আদমি পার্টি নেতারা। এ প্রসঙ্গে দিল্লির মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, ‘আপাতত এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে না আম আদমি পার্টি। কেজরিই আমাদের নেতা। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বেই দল লড়বে।’

যদিও দিল্লির বিজেপি নেতৃত্বের তরফে অভিযোগ , গ্রেফতারির ভয়েই জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়েছেন কেজরি।


এদিকে, সোমবার আবগারি দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় দিল্লির উপ মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়ার জামিনের আবেদন নাকচ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তারপরেই দিল্লি মুখ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইডির সমন তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।