কলকাতা, ১৬ মে – পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর চাকরি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর চাকরি পান ববিতা সরকার। এবার ববিতা সরকারের চাকরিও বাতিলের নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে ববিতার জায়গায় চাকরি পাবেন অনামিকা বিশ্বাস রায়। চাকরির খবর পেয়ে খুশিতে ভরপুর অনামিকা জানালেন এই দিনটির অপেক্ষাতেই তিনি ছিলেন। তাঁর কাছে আজকের দিনটি জীবনের সবথেকে খুশির দিন। এক সংবাদমাধ্যমে তিনি জানান , ‘খুব আনন্দ হচ্ছে। একজন চাকরিপ্রার্থীর কাছে চাকরি পাওয়ার থেকে ভাল খবর আর কিছু হয় না।’
অনামিকা জানিয়েছেন , তিনি যে চাকরি পাবেন, সে বিষয়ে তিনি গোড়া থেকেই আশাবাদী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি কখনও আশাহত হইনি। আমি জানতাম, চাকরিটা আমি পাবই। চাকরির মেধাতালিকায় আমার এবং ববিতার নাম পর পর ছিল। আমি ২১ নম্বরে, ববিতা ছিল ২০- নম্বরে ।’ অঙ্কিতা আসার পর তাঁদের র্যাঙ্ক পিছিয়ে যায়। অঙ্কিতার চাকরি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর মেধাতালিকা অনুযায়ী চাকরি পান ববিতা। কিন্তু পরে অনামিকা দেখেন, ববিতার নম্বর আসলে তাঁর চেয়ে কম। ববিতা অনামিকার চেয়ে ২ নম্বর কম পেয়েছিলেন। সেই হিসেবে চাকরি পাওয়ার কথা অনামিকারই । এর পর অনামিকা আদালতে যান ।
রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতার নিয়োগে কারচুপির অভিযোগে তাঁর চাকরি বাতিল ছাড়াও বেতনও ফেরাতে হয় আদালতকে। সেই বেতনের পুরো টাকাই তুলে দেওয়া হয় ববিতার হাতে। কিন্তু অনামিকার মামলার রায়ে ববিতার চাকরিও বাতিল করে দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। চাকরির পাশাপাশি অঙ্কিতার কাছ থেকে যে টাকা ববিতা পেয়েছিলেন, তা-ও অনামিকার হাতে তুলে দিতে হবে। মঙ্গলবার আদালতের রায় শোনার পর ববিতা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। কিছুটা সময় চেয়ে নেন তিনি।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই জারি রেখে চাকরি পেয়েছিলেন শিলিগুড়ির ববিতা সরকার। প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা বেআইনি ভাবে চাকরি পেয়েছেন এই অভিযোগ জানিয়ে মামলা করে জয় পেয়েছিলেন ববিতা। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে অঙ্কিতার চাকরি বাতিল হযে যাওয়ার পর সেই চাকরি পান ববিতা। মঙ্গলবার সেই কষ্টার্জিত চাকরিই হারাতে হল তাঁকে। শুধু তাই নয়, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে তিরস্কারও শুনতে হয় তাঁকে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আপনি আদালতকে যে ভাবে ভুল তথ্য দিয়ে পরিচালনা করেছেন, তাতে আমি আরও কড়া পদক্ষেপ করতে পারতাম। এই কয়েকমাস আপনি যা বেতন পেয়েছেন তা ফেরত নেওয়া হচ্ছে না। এটুকু সান্ত্বনা নিয়ে হাই কোর্ট থেকে যান। পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করুন। যা হয়েছে তা আপনার ভুলের জন্য।’’
আগামী ৬ জুনের মধ্যে ববিতাকে ১৫ লক্ষ টাকা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে জমা দিতে নির্দেশ দেয় আদালত। আগামী বুধবারের মধ্যে তাঁকে ১১ লক্ষ টাকা দিতে হবে। তবে চাকরি শুরুর পর যে বেতন ববিতা পেয়েছেন, সেই টাকা তাঁকে ফেরত দিতে হবে না। অঙ্কিতার চাকরি বাতিল হওয়ার পর তাঁর বেতন বাবদ প্রাপ্ত টাকা কিস্তিতে ববিতাকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া দিয়েছিল আদালত। সেই নির্দেশ মতো যে টাকাও পান ববিতা, সেই টাকা ফেরত দিতে মঙ্গলবার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। ববিতাকে মোট ১৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৮৪৩ টাকা অনামিকাকে ফেরত দিতে হবে।