২৮ মাস পর জেল থেকে মুক্তি পেলেন সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান
SNS
লখনৌ ,২ ফেব্রুয়ারী — ২ বছরেরও বেশি সময় পর উত্তরপ্রদেশের জেল থেকে মুক্তি পেলেন সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান। কেরলের বাসিন্দা সিদ্দিক একটি মালওয়ালি সংবাদমাধ্যমের দিল্লির সংবাদদাতা। উত্তরপ্রদেশের হাথরসে এক দলিত তরুণীকে গণধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় গোটা দেশে আলোড়ন পরে যায়। সেই সংবাদ তুলে ধরেন সাংবাদিক কাপ্পান। ২০২০ সালের অক্টোবরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি ছিল, হাথরসে কাপ্পান যাওয়ায় অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছিল। কাপ্পানের বিরুদ্ধে ইউএপিএ আইনে দেশদ্রোহিতার মামলা করা হয়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের মামলা করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। অভিযোগ ছিল, নিষিদ্ধ সংগঠন পিপলস ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া-র থেকে টাকা নিতেন কাপ্পান।
হাইকোর্ট, এবং সুপ্রিম কোর্টে লড়াইয়ের পর কয়েক মাস আগে সাংবাদিক কাপ্পানের জামিন মঞ্জুর হলেও নিয়মের গেরোয় আটকে যায় জেল থেকে মুক্তি।দু বছরেরও বেশি সময় উত্তরপ্রদেশের জেলে আটক থাকা সাংবাদিক কাপ্পান বৃহস্পতিবার মুক্তি পাওয়ার পর বলেন, আমি নির্দোষ। সাংবাদিকতা করার জন্য আমাকে জেলে কাটাতে হল। তিনি বলেন, ‘আমি আমার লড়াই জারি রাখব। জামিন পাওয়ার পরও আমাকে জেলে আটকে রাখা হয়েছিল। এভাবে জেলে আটকে রেখে কার কি লাভ হল আমি জানি না।এই সময়কালে আমি জীবনের কঠিন সময় পেরিয়েছি। কিন্তু আমি কখনও ভয় পাইনি।’
হাথরসের সেই ঘটনায় গোটা দেশে যোগী সরকার কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে । দিনের বেলা দলিত সম্প্রদায়ের একটি মেয়েকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করে গ্রামেরই একদল তরুণ। তারা উচ্চবর্ণের ঠাকুর সম্প্রদায়ের। পুলিশের বিরুদ্ধে ঘটনার তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। প্রশাসনের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগও করে পরিবার। শেষ পর্যন্ত মেয়েটিকে বাঁচানো যায়নি।
গ্রামে জনবিক্ষোভের ভয়ে পুলিশ মৃতদেহ পরিবারের হাতে না দিয়ে ভোররাতে নিজেরাই দাহ করে। গ্রাম সিল করে দিয়ে বাইরের লোকজনের যাওয়া আটকে দেওয়া হয়। বাধা দেওয়া হয় সাংবাদিকদেরও। এই ঘটনার সপ্তাহ দুয়েক পর হাথরস যাচ্ছিলেন সিদ্দিক। পুলিশ তাঁকে আটক দীর্ঘ সময় জেরা করে এবং গ্রেফতার করে।
উত্তরপ্রদেশ সরকার বারে বারে তাঁর জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে। জামিন আরও আটকে যায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তাঁর বিরুদ্ধে বেআইনি পথে অর্থ লেনদেনের মামলা করায় । বুধবার ইডির মামলাতেও জামিন জটিলতা থেকে মুক্ত হন সিদ্দিক।
তবে কেন সিদ্দিকের প্রতি এত কঠোর মনোভাব নেয় উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে । হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট তাঁর জামিন মঞ্জুর করতে চাইলেও সরকার দেশের স্বার্থ বিপন্ন হওয়ার কথা বলে বারংবার বিরোধিতা করে। সাংবাদিকের মুক্তি চেয়ে দেশ-বিদেশের সাংবাদিক সংগঠন, বিশিষ্ট মানুষেরা উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে আর্জি জানালেও কাজ হয়নি। মাস দেড়েক আগে সুপ্রিম কোর্ট এই সাংবাদিকের জামিন মঞ্জুর করে।