যুদ্ধের আবহে নতুন সমীকরণে আমেরিকায় জিনপিং

ওয়াশিংটন, ১৫ নভেম্বর– যুদ্ধে বিপর্যস্ত ইউক্রেন। রক্তাক্ত ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন। কামানের গর্জনে কেঁপে কেঁপে উঠছে সুদান। গৃহযুদ্ধে জর্জর ইয়েমেনে শুধুই হাহাকার। বিশ্বজুড়ে ক্রমাগত বেজে চলা রণদুন্দুভির কান ফাটানো আওয়াজের মাঝেই মঙ্গলবার আমেরিকায় পা রাখলেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

এদিন সান ফ্রান্সিস্কো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামে ‘এয়ার চায়না’র বিশেষ বিমান। দরজা খুলতেই হাত নাড়তে নাড়তে বেরিয়ে আসেন জিনপিং। তাঁকে স্বাগত জানাতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি জেনেট ইয়েলেন, চিনে নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত নিকোলাস বার্নস। তাঁদের সঙ্গে সৌজন্য আলাপের পর লাল পতাকা লাগানো চিনা হংকি বা লিমোজিন সদৃশ গাড়িতে চেপে শহরের উদ্দেশে রওনা দেন চিনা প্রেসিডেন্ট। মনে করা হচ্ছে, মানবাধিকার হনন, গণতন্ত্রের দমনের মতো বিষয়ে আমেরিকায় বিক্ষোভের মুখে পড়তে পারেন জিনপিং।

প্রসঙ্গত, শেষবার ২০১৭ সালে শেষবার আমেরিকা গিয়েছিলেন চিনের ‘সর্বশক্তিমান’ রাষ্ট্রপ্রধান। দুই দেশের মধ্যে চলা বাণিজ্য যুদ্ধের আবহে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। সেবারে ক্ষত মেরামত কতটা হয়েছিল তা তর্কসাপেক্ষ হলেও আধিপত্যের লড়াই আরও জটিল মোড় নেয়।


হোয়াইট হাউস সূত্রে খবর, আজ বুধবার সান ফ্রান্সিস্কোয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন শি। ইউক্রেন যুদ্ধ ও আরব-ইহুদি সংঘাতের আবহে এই আলোচনার দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব। তার পর এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনোমিক কোঅপারেশন ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি। চারদিনের এই সফরে ঠাসা কর্মসূচি রয়েছে চিনা প্রেসিডেন্টের।

উল্লেখ্য, ইউক্রেন যুদ্ধে ঠান্ডা লড়াইয়ের দুনিয়া কাঁপানো দিনগুলো ফিরেছে বলেই মত বিশ্লেষকদের। ঘনাচ্ছে পরমাণু যুদ্ধের মেঘও। জল্পনা আরও বাড়িয়ে কম্প্রিহেন্সিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট ব্যান ট্রিটি বা সিটিবিটি চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াতে চাইছে রাশিয়া। এই প্রেক্ষাপটে পরমাণু অস্ত্রে রাশ টানা নিয়েও আলোচনা হতে পারে শি ও বাইডেনের। একই সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের প্রসঙ্গও উঠে আসতে পারেে। বলে রাখা ভাল, ইউক্রেন সংঘাতে রাশিয়ার উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে আরও কাছাকাছি এসেছে মস্কো এবং বেজিং। এটা যে আমেরিকার না পসন্দ, তা স্পষ্ট করেছেন বাইডেন। চিনের অর্থনীতিতে আমেরিকা সহ পশ্চিমা শক্তিগুলোর অবদান উল্লেখ করে কার্যত বেজিং-কে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন তিনি। গত জুলাই মাসে একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, আমেরিকা এবং পশ্চিমের দেশগুলির বিনিয়োগের উপর দাঁড়িয়ে আছে চিনের অর্থনীতি। এটা যেন তারা মনে রাখে।

বলে রাখা ভালো, হামাসকে মদত জোগাচ্ছে ইরান, চিন ও রাশিয়া। ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে মধ্যপ্রাচ্যে সেকেন্ড ফ্রন্ট খুলতে হামাসকে ব্যবহার করছে মস্কো। আমেরিকাকে চাপে ফেলে ইউক্রেনে কিছুটা চাপমুক্ত হওয়ার জন্যই এই ছক কষেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। লেবাননে ঘুঁটি সাজাচ্ছে ইরান। অন্যদিকে, তাইওয়ানের কাছে মহড়া চালিয়ে তৃতীয় ফ্রন্ট খোলার সম্ভাবনা জিইয়ে রেখেছে চিন। ইয়েমেন ও সিরিয়ায় হাউথিদের মদত দিচ্ছে ইরান। সব মিলিয়ে, আমেরিকাকে চক্রব্যুহে বিভ্রান্ত করে কোণঠাসা করার খেলায় মেতেছে ইরান-চিন-রাশিয়া অক্ষ। এই পরিস্থিতিতে জিনপিংয়ের এই সফরকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।