বেইজিং, ১১ আগস্ট– ২০০৫ সালে জন্মগ্রহণ করেছেন এমন বহু জাপানি নারী নাকি সন্তানের জন্ম দেওয়া নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত। আর তাদের এই মনোভাব যে জাপানের সামাজিক পরিস্থিতির পরিপন্থী হয়ে উঠছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । জাপানি মহিলাদের নিয়ে এমনটাই বলছে জাপানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৫ সালে জন্ম নিয়েছেন অথচ কোনও দিন ‘মা’ ডাক শুনতে চান না, এমন তরুণীর সংখ্যা প্রায় ৪২ শতাংশ।
জাপানে ২০০৫ সালে জন্ম নেওয়া প্রায় ৪২ শতাংশ তরুণী তাদের জীবদ্দশায় কখনওই সন্তানধারণ করতে চান না। জাপানের সরকারি গবেষণার অনুমানকে উদ্ধৃত করে এমনটাই জানিয়েছে, সংবাদমাধ্যম ‘নিক্কেই’। আর এর ফলে জাপানের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে চলে যেতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
. ‘নিক্কেই’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাপানের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি রিসার্চ’ একটি গবেষণা চালিয়ে দাবি করেছে, ২০০৫ সালে জন্ম নেওয়া নারীদের ৪২ শতাংশ কখনও মা হতে চান না।
পরিস্থিতি মোটামুটি থাকলে, সেই সংখ্যা হবে ৩৩.৪০ শতাংশ। পরিস্থিতি খুব ভাল হলে আশা করা যাচ্ছে সংখ্যা হবে ২৪.৬০ শতাংশের কাছাকাছি।
রিপোর্ট অনুযায়ী, জাপানে পুরুষদের মধ্যেও বিয়ে না করার প্রবণতা বাড়ছে। ১৮ বছর বয়সিদের অর্ধেকই নাকি জানিয়েছেন- তারা বাবা হতে চান না।
জাপানের পুরুষ এবং নারীদের মধ্যে সন্তান জন্ম দেওয়ার অনীহার কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
সংখ্যায় অনেক কম হলেও অনুরূপ প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।
গবেষণা বলছে, প্রথম বিশ্বের দেশগুলো অর্থনীতির দিক থেকে ফুলেফেঁপে উঠলেও তাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিয়ে না করার এবং সন্তান জন্ম না দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
পশ্চিমা দেশগুলোতে, ১৯৭০ সালে জন্মগ্রহণকারী নারীদের প্রায় ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ সন্তানধারণ করেননি। জাপানে এই সংখ্যা ২৭ শতাংশের কাছাকাছি।
কয়েক বছরের মধ্যে জাপানের এই সংখ্যা পশ্চিমি দেশের তুলনায় দ্বিগুণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে ব্রিটেন এবং জার্মানির মতো দেশগুলোতে এই প্রবণতা কিছুটা কমেছে। ওই দুই দেশের বেশির ভাগ দম্পতি অন্তত একজন সন্তানধারণে ইচ্ছুক।
জাপান সরকারও তরুণ প্রজন্মকে সন্তানধারণের জন্য উৎসাহিত করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পুরুষদের বিয়ে করার বিষয়েও উৎসাহ জোগানোর চেষ্টা করছে সরকার।
হিটোতসুবাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক রিসার্চের অধ্যাপক তাকাশি ওশিও বলেন, “পেনশন তোলা থেকে চিকিৎসা করানো— অনেক ক্ষেত্রেই অবিবাহিতদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আর তা ছাড়া এভাবে তরুণ প্রজন্ম বিয়ে এবং সন্তানবিমুখ হয়ে গেলে জাপানের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে চলে যাবে।”
জাপানে জন্মহার বছরের পর বছর ধরে কমে যাওয়ার কারণে সরকার বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ২০২২ সালে সে দেশে জন্মহার ছিল সব থেকে কম।