সূয্যিমামার দেশে পাড়ি দিল ইসরোর মহাকাশযান আদিত্য-এল ১, অভিনন্দন বার্তা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর 

কলকাতা, ২ সেপ্টেম্বর –  চাঁদমামার পর এবার সূয্যিমামার দেশে পাড়ি দিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর মহাকাশযান আদিত্য-এল ১। শনিবার সকাল ১১ টা বেজে ৫০ মিনিটে আদিত্যকে নিয়ে মহাকাশের পথে রওনা দিল পিএসএলভি এক্সএল রকেট। বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারতের এই সূর্যাভিযান।  অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা সতীশ ধাওয়ান স্পেস রিসার্চ সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে সূর্যের উদ্দেশে সফল উৎক্ষেপণ হয়  আদিত্য-এল ১ এর। এরপরই অভিনন্দনের ঝড় বয়ে যায় ইসরো-তে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু , প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসরোকে অভিনন্দন বার্তা জানান। সূর্য ও পৃথিবীর আকর্ষণ অঞ্চলের মাঝামাঝি এল-১ পয়েন্টে এই মহাকাশযান স্থাপন করা হবে। পৃথিবী থেকে এই এল-১ পয়েন্টের দূরত্ব ১৫ লক্ষ কিলোমিটার। সময় লাগবে প্রায় ১২০ দিন। শনিবার বিভিন্ন জায়গা থেকে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে আদিত্য-এল১-এর উৎক্ষেপণের মুহূর্ত দেখতে পাওয়া গিয়েছে।   

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘ভারতের প্রথ সূর্যাভিযান আদিত্য এল-১ এর উৎক্ষেপণ ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ভারতের মহাকাশ গবেষণাকে এটি আরও সমৃদ্ধ করবে। আমি ইসরোর বিজ্ঞানী ও কলাকুশলীদের অভিনন্দন জানাই এই অভিযানের সাফল্যকে আমি শুভেচ্ছা জানাই।’    
ইসরোর এই সাফল্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লেখেন, ‘চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্যের পর ভারত তার মহাকাশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ইসরোর বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনীয়ারদের আমি অভিনন্দন জানাই ভারতের প্রথম সৌর অভিযান আদিত্য এল-১ এর সফল উৎক্ষেপণের জন্য।  মানবজাতির বিকাশের জন্য এবং মহাকাশ মন্পর্কে আরো জানতে আমাদের বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টা জারি থাকবে।’
 ২৩ অগস্ট চাঁদে পা রেখেছিল ইসরোর চন্দ্রযান-৩। সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথম দেশ হিসেবে সফলভাবে অবতরণ করে ভারতের চন্দ্রযান। তার ১০ দিনের মধ্যেই এ বার সূর্যের দিকে সফল ভাবে রওনা হয়ে গেল ইসরোর সৌরযান আদিত্য-এল১। আদিত্য-এল ১ ভারত থেকে সূর্যের দিকে পাঠানো প্রথম মহাকাশযান। সূর্যের অপর নাম আদিত্যের নামে নাম রাখা হয়েছে এই মহাকাশযানের। সূর্যের বায়ুমণ্ডল এবং সূর্য সংক্রান্ত নানা তথ্য ইসরোকে পাঠাবে আদিত্য-এল ১।

ইসরো সূত্রে খবর, উৎক্ষেপণের পর প্রায় ১৬ দিন পৃথিবীর চারিদিকে পাক খাবে আদিত্য-এল ১। এই ১৬ দিনে সূর্যের দিকে পাড়ি দেওয়ার জন্য পাঁচটি ধাপে গতিবেগ বাড়াবে আদিত্য। এর পর ১১০ দিন সূর্যের অভিমুখে যাত্রা করে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে নক্ষত্রটিকে পর্যবেক্ষণ করবে, কারণ সেখান থেকেই সরাসরি সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে এবং তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে আদিত্য এল-১। এই পয়েন্ট, অর্থাৎ যেখান থেকে পর্যবেক্ষণ করবে তাকে বলে ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট। সূর্য এবং পৃথিবীর আকর্ষণ এবং বিকর্ষণ বল এই পয়েন্টে একসঙ্গে ক্রিয়াশীল। ফলে এই অঞ্চলে পৌঁছে কৃত্রিম উপগ্রহ স্থির থাকতে পারে। মহাকাশের পরিবেশ, আবহাওয়া, সূর্যের চারিদিকের বাতাসে রাসায়নিক উপাদান, উত্তাপ, সে সব তথ্যই জানার চেষ্টা করবে আদিত্য-এল ১।

আদিত্য-এল ১ যানটিতে মোট সাতটি পেলোড রয়েছে। এগুলি সূর্যের বিভিন্ন স্তর খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ফোটোস্ফিয়ার থেকে ক্রোমোস্ফিয়ার কিংবা সূর্যের একেবারে বাইরের দিকের স্তর করোনাল হিটিং এবং সূর্যের বায়ুমণ্ডলের গতিশীলতা এবং তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করবে এই পেলোডগুলি। এ ছাড়া, সূর্যের উত্তাপ, অগ্নিশিখা ও পৃথিবীর কাছাকাছি স্থানের আবহাওয়া, সৌরঝড়ের মতো সূর্যকেন্দ্রিক বিষয়গুলি সম্পর্কে নানা তথ্য পাবেন বিজ্ঞানীরা। ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট পৌঁছানোর পরে ভিইএলসি পেলোড প্রতিদিন ১,৪৪০টি ছবি তুলে পাঠাবে। তাই এই পেলোডটিকেই আদিত্য-এল ১-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পেলোড বলে মনে করা হচ্ছে।


শনিবার সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে এক সাক্ষাৎকারে ইসরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান জি মাধবন নায়ার বলেন, ‘এই মিশনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্টে পৃথিবী ও সূর্য একে অন্যের আকর্ষণ শক্তিকে প্রশমিত করেছে। ফলে সেখানে অনেক কম জ্বালানিতে মহাকাশযানটি থাকতে পারবে। আদিত্য এল-১ সূর্যকে ২৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষণ করবে।’