দিল্লি, ১০ অক্টোবর – ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। ক্রমশই বেড়ে চলেছে মৃত্যুসংখ্যা। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফোন করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর জানিয়েছেন মোদি নিজেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানান, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছেন। মোদি লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফোন করে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছেন। এর জন্য আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। ভারতের মানুষ এই কঠিন সময়ে দৃঢ়ভাবে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে। ভারত দৃঢ়ভাবে এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করে।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পোস্টটি আবার পোস্ট করেন ভারতে নিযুক্ত ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত নোয়ার গিলন। তিনিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। একইসঙ্গে ভারতের তরফে যাঁরা ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।
এদিকে ইজরায়েলে আটকে পড়ছেন বহু ভারতীয়। এঁদের মধ্যে বড় সংখ্যক কেরলের বাসিন্দা। তাঁর রাজ্যের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন সোমবার চিঠি লেখেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরকে। বিজয়নের চিঠি মারফত জানা গিয়েছে, ইজরায়েলের প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে প্রায় ৭ হাজার কেরলের নাগরিক। তাঁদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “দুই দেশের শত্রুতার জেরে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন ইজরায়েল প্রবাসী কেরলের প্রায় ৭ হাজার বাসিন্দা। তাঁদের পরিবারের লোকেরা চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।” বিজয়ন আর লিখেছেন, “ইজরায়েলে আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। এই বিষয়ে সম্ভাব্য যাবতীয় উপায়ে হস্তক্ষেপের জন্য অনুরোধ করছি আপনাকে।”
প্রসঙ্গত, হামাস-ইজরায়েল যুদ্ধে প্রথম থেকেই হামাসের হামলার সমালোচনা করেছে ভারত সরকার। গত শনিবার ইজরায়েলে হামাসের হামলার পরই, এই হামলার নিন্দা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তিনি লিখেছিলেন, “ইজরায়েলে সন্ত্রাসবাদী হামলার খবরে গভীরভাবে শোকাহত। হতাহতদের এবং তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। তাদের জন্য প্রার্থনা করছি। এই কঠিন সময়ে আমরা ইজরায়েলের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি।”
মঙ্গলবার, ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ চতুর্থ দিনে পড়েছে। আর এই চার দিনেই দুই পক্ষ মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা ১,৬০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। ইজরায়েলে ৯০০-র বেশি এবং গাজা ভূখণ্ডে ৬০০-র বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হামাস বাহিনীকে হুঁশিয়ারি দিলেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। মঙ্গলবার নেতানিয়াহু বলেন, ‘‘ওরা শুরু করেছে , শেষ করব আমরা।’’ হামাসকে উচিত শিক্ষা দিতে ইতিমধ্যেই পাল্টা জবাব দিতে শুরু করেছে ইজ়রায়েল। ইজরায়েল সেনার খবরে প্রকাশ , ১৫০০ হামাস জঙ্গিকে নিকেশ করেছে ইজরায়েলের সেনা। সেই সঙ্গে গাজা সীমান্তেও হামাসকে কোনঠাসা করেছে। জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই হামাসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে জোরালো আক্রমণ শানায় ইজরায়েল। প্রসঙ্গত, প্রায় তিন লক্ষ সেনা মোতায়েন করে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। হামাসের বিরুদ্ধে সংঘাত তীব্র করার বার্তা দিয়েছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার সকাল থেকেই গাজার একাধিক জায়গায় বোমাবর্ষণ করে ইজরায়েলের যুদ্ধবিমান। তার আগে গাজার বাসিন্দা ইজরায়েলের নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। জানা গিয়েছে, ইজরায়েলি সেনার আক্রমণে ঘরছাড়া হয়েছেন গাজার প্রায় ১০ হাজার নাগরিক।
এদিকে লাগাতার ইজরায়েলি বিমান হানার জেরে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে হামাস। হুঁশিয়ারি বার্তায় হামাস জঙ্গিরা জানিয়েছে, গাজায় সাধারণের উপর এমন বিমানহানা হলে তাদের হাতে বন্দিদের হত্যা করা শুরু করবে। হামাস জানিয়েছে, ইজরায়েলের প্রতিটা বিমান হানায় একজন করে বন্দিদের হত্যা করা হবে। হামাসের শাখা সংগঠন আল-কাসিম ব্রিগেড এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘প্রতিটি লক্ষ্যবস্তু কোনওরকম সতর্কতা ছাড়াই আমাদের জনগণকে লক্ষ্য করে হামলা হলে, তার জবাব দেওয়া হবে একজন বন্দিকে হত্যা করে। আমাদের শত্রুরা মানবতা ও নৈতিকতার ভাষা বোঝে না, তাই তারা যে ভাষায় বোঝে আমরা তাদের জবাব দেব।’
রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিভাগের প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, “অসামরিক নাগরিকদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থেকে বঞ্চিত করে তাদের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে এই অবরোধ। এটা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে নিষিদ্ধ।”