বিজেপির হয়ে কাজ করছে না তো কমিশন, প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS/File)

নিজস্ব প্রতিনিধি – ভােটের মুখে চার পুলিশ কর্তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই নিয়ে কমিশনের সঙ্গে সংঘাত শুরু হয়ে গেছে তাঁর। পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযােগ তুলে কমিশনের কাছে শনিবার কড়া চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, কেন্দ্রের অঙ্গুলিহেলনে এই পুলিশ কর্তাদের বদলি করা হয়নি তাে? শুক্রবার গভীর রাতে কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা সহ আরও তিন পুলিশ কর্তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন। উল্লেখ্য মাত্র মাস দেড়েক আগে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদে রাজীব কুমারের পরিবর্তে আসেন অনুজ শর্মা। কমিশনের নির্দেশে বর্তমানে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন ড. রাজেশ কুমার। পাশাপাশি বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার পদে এলেন নটরাজন রমেশবাবু। এছাড়া অভন্যু রবীন্দ্রনাথকে বীরভূমের এবং শ্রীহরি পাণ্ডেকে ডায়মন্ডহারবারের পুলিশ সুপারের দায়িত্বে নিয়ে আসা হয়েছে। কমিশনের তরফে জানানাে হয়েছে সরিয়ে দেওয়া চার পুলিশ কর্তাকে ভােটের কাজে ব্যবহার করা হবে না। আর কমিশনের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী।

কমিশনের কাছে পাঠানো দীর্ঘ চিঠিতে তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযােগ আনা হয়েছে। কার অঙ্গুলিহেলনে বা নির্দেশে এই কাজ হয়েছে, তা নিয়ে তদন্তের দাবি করেছেন মখ্যমন্ত্রী। তিনি প্রশ্ন তােলেন, চার পদস্থ অফিসারের বদলির ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে কোনও প্যানেল চাওয়া হয়নি। আর সেটা না করেই কমিশনের পক্ষ থেকে এই কাজ করা হয়েছে। কমিশনের তরফে অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় বসু অবশ্য জানিয়েছেন তাঁরা এই ধরনের চিঠি পেয়েছেন। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। প্রসঙ্গত কিছুদিন আগেই বেশ কিছু পুলিশ কর্তার বিরুদ্ধে অভিযােগ তুলেছিলেন বিজেপি নেতারা। যেকারণে বদলির বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের তির বিজেপির দিকেই বলে মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী।

কমিশনের কাছে লেখা চিঠিতে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর কোনও স্বাক্ষর ছিল না। চিঠিটি তাঁর প্যাডেও লেখা হয়নি তবে এই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত বিষয়টিকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি লিখেছেন, কমিশনের প্রতি তাঁর সম্মান রয়েছে। কিন্তু যা করা হয়েছে, তার জন্য তিনি প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য হচ্ছেন। দুই পুলিশ কমিশনারের বদলির বিষয়টি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর সাফ কথা, কলকাতা এবং বিধাননগরের মতাে দুটি অঞ্চলে বিভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতির মানুষ বসবাস করেন। এই দুই কসমােপলিটন এলাকায় দায়িত্ব নিয়ে ভালাে কাজ করছিলেন তাঁরা। নির্বাচনের আগে কমিশনের নির্দেশে প্রচুর সােনা, টাকা এবং দেশী মদ উদ্ধার করা হয়েছে এদেরই নেতৃত্বে। একথা জানিয়ে কমিশনের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, এই দুই পুলিশ অফিসার যেভাবে বেআইনি কাজকর্ম দমনের বিষয়টিতে জোর দিয়েছিলেন তাতে করে কারও কোনও রাজনৈতিক স্বার্থে আঘাত আসেনি তাে?


পুলিশ কর্তাদের বদলির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরােধ করে তিনি বলেছেন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা বিষয়টি পুরােপুরি রাজ্য সরকারের অধীনে। নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব হল অবাধ এবং শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা। কিন্তু সেখান থেকে সরে গিয়ে বিজেপির হয়ে কমিশন কাজ করছে না তাে বলেও প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী?

কিছুদিন আগেই বিজেপির পক্ষ থেকে রাজ্যের কিছু অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযােগ করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং টিভি চ্যানেলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তােলেন। আর তারপরেই এই বদলির সিদ্ধান্তের পেছনে কোনও চক্রান্ত রয়েছে কিনা, সেটা খুজে বের করতে কমিশনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য অবশ্য চার পুলিশকর্তার বদলির পিছনের কোনও চক্রান্ত নেই বলেই মনে করছেন।