তিন মুখে আহ্বায়ক নিয়ে সন্ধিহান ‘ইন্ডিয়া’

দিল্লি, ৩০ আগস্ট– ফের তৃতীয়বার বসতে চলেছে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’। বৃহস্পতি ও শুক্রবার মুম্বইতে এই  দু’দিনের বৈঠকে একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবার কথা। এই আলোচনার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ২৬ টি দলের এই জোটের দুই মুখ অর্থাৎ চেয়ারপারসন এবং কনভেনর বা আহ্বায়ক বেঁছে নেওয়া।  এছাড়া, অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আসন সমঝোতা তো রয়েছেই। এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে আসন সমঝোতা নিয়ে বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্ত হবে। বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী আসন বোঝাপড়ার বিষয়ে আঞ্চলিক স্তরে আলোচনা করা হবে। উপর থেকে কিছু চাপিয়ে দেওয়া হবে না। যৌথ আন্দোলনের প্রশ্নেও একই অবস্থান নেবে জোট। অর্থাৎ আঞ্চলিক বাস্তবতা মেনে যৌথ সভা-সমাবেশ হবে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস ও তৃণমূলের যৌথ সভা সম্ভব নয়, তিন দলই স্পষ্ট করে দিয়েছে। কেরলেও সিপিএম এবং কংগ্রেস বিজেপিকে হারাতে এক মঞ্চে দাঁড়াবে না।

ঠিক হয়েছে জোটের সচিবালয় হবে দিল্লিতে। তবে সেটা কোনও রাজনৈতিক দলের অফিস নাকি ভিন্ন কোনও জায়গা এ জন্য বেছে নেওয়া হবে, সেই ব্যাপারেও মুম্বইয়ের বৈঠকে কথা হবে। রাহুল গান্ধির তৈরি ‘ভারত জুড়েগা, ইন্ডিয়া জিতেগা’—এই স্লোগানকেই ইন্ডিয়া জোটের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হতে পারে বলেই খবর 

তবে ইন্ডিয়া জোটের চেয়ারপারসন কে হতে পারেন, এই বিষয় বৃহৎ দলগুলির সিদ্ধান্তই প্রাধান্য পাবে না। এ বিষয়ে কংগ্রেসের পাশাপাশি শরিক দলগুলি নিজেদের মতামত জানাবে। গোল বেঁধেছে তিন প্রথম সারির নেতৃত্বকে নিয়ে। সোনিয়া গান্ধি, মল্লিকার্জুন খাড়গে তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। এই তিন মুখই আহ্বায়ক পদের দাবিদার।


মনে করা হচ্ছে আগের জোট ইউপিএ-র চেয়ারপারসন ছিলেন সোনিয়া গান্ধি । ইউপিএ-তে কোনও আহ্বায়ক পদ ছিল না। ইন্ডিয়া জোটে আহ্বায়ক পদ রাখার প্রস্তাব নিয়ে ঘরোয়া আলাপ-আলোচনা হয়েছে। সেই রীতি মেনে কংগ্রেস চাইছে সোনিয়া গান্ধিই ইউপিএ-র মতো ইন্ডিয়া জোটেরও চেয়ারপারসন হোন। কিন্তু সমস্যা সোনিয়াকে নিয়েই। কারণ তিনি এই সিদ্ধান্তে রাজি নন। দলকে নিজের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন। মুম্বইয়ের বৈঠকে তাঁর নাম প্রস্তাব করা হলে সেখানেও একই কথা বলবেন। প্রথমত, তিনি অসুস্থ। তবে এই কারণ নগন্য। দ্বিতীয়ত এবং ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কারণ যা ভেবেই সোনিয়া রাজি নন তা হল, গান্ধি পরিবারের কেউ জোটের মুখ হলে বিজেপি-র হাতই শক্ত হবে। নরেন্দ্র মোদি গান্ধি পরিবারকে আক্রমণের ইস্যু করে নেবেন। সোনিয়ার রাজি না হওয়ার পিছনে দ্বিতীয় কারণটিই মুখ্য বলে মনে করা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস দলীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে চেয়ারপারসন করার প্রস্তাব দিতে পারে। দলিত খাড়গে আক্রমণ করা বিজেপির পক্ষে তেমন সহজ কাজ হবে না। খাড়গের ব্যাপারে শরিক দলগুলিও তেমন একটা আপত্তি করবে বলে মনে করছে না কংগ্রেস।

কিন্তু চিন্তা রয়েছে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে নিয়ে। তিনি গত তিন দিনে তিনবার বলেছেন, আমি কোনও পদ চাই না। আমার কাজ ছিল বিরোধী দলগুলিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা। সেই কাজ করে দিয়েছি। আমি পদের আসায় এই উদ্যোগ নিইনি।

নীতীশ পদ চাই না বললেও জোটের নেতারা বুঝতে পারছেন এসবই বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর গোসার কথা। তাঁর দল চায় তাঁকেই জোটের মুখ করা হোক। কারণ নীতীশই রাজ্যে রাজ্যে গিয়ে বিরোধী নেতাদের জোটবদ্ধ করেছেন। তাঁর এবং দল জনতা দল ইউনাইটেড আশা করেছিল বেঙ্গালুরুর বৈঠকে অন্তত জোটের আহ্বায়ক হিসাবে নীতীশের নাম ঘোষণা করা হবে।

কিন্তু ওই বৈঠকের আয়োজক কংগ্রেস এই ব্যাপারে কোনও আগ্রহ দেখায়নি। নীতীশ যে তাতে অসন্তুষ্ট তা বুঝিয়ে দেন বৈঠক শেষ হওয়া মাত্র বেঙ্গালুরু ত্যাগ করে। সাংবাদিক বৈঠকেও ছিলেন না। পাটনায় ফিরে বহুদিন তিনি বেঙ্গালুরুর বৈঠক নিয়ে টুঁ শব্দটি করেননি।

দিন কয়েক হল তিনি মুম্বইয়ের বৈঠক নিয়ে মুখ খুলেছেন। বেঙ্গালুরুর বৈঠকে ঠিক হয়েছিল জোট পরিচালনায় একটি কো-অর্ডিনেশন কমিটি গড়া হবে। নীতীশকে জোটের নাকি ওই কমিটির আহ্বায়ক করা হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।