কেরলের কোঝিকোড়ে নিপা ভাইরাসে ফের আক্রান্ত ১, মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬ 

কোঝিকোড়, ১৫ সেপ্টেম্বর –  কেরলের কোঝিকোড় জেলায় আরও একজনের শরীরে নিপা ভাইরাসের জীবাণু মিলল। শুক্রবার কেরল  স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে  এই খবর নিশ্চিত করা হয়।  ফলে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ছয়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জানা গিয়েছে , আক্রান্ত ব্যক্তি এর আগে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানেও তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করে নিপা ভাইরাসের জীবাণু পাওয়া যায়। বেসরকারি হাসপাতালের তরফে নিপা ভাইরাস নিশ্চিত করার পর তাঁর শরীরের উপসর্গ দেখে ওই ব্যক্তিকে আইসোলেশনে পাঠানো হয়।  এরপর স্বাস্থ্য দফতরের তরফে নিপা ভাইরাস নমুনা পরীক্ষা করানো হয়। সেই রিপোর্ট পসিটিভ আসার পরেই সরকারিভাবে ওই ব্যক্তিকে নিপা আক্রান্ত বলে চিহ্নিত করা হয়।

সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কোঝিকোড়ের কন্টেনমেন্ট জোন এলাকার সমস্ত স্কুলগুলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। নতুন করে রাজ্যে নিপা ভাইরাসে আক্রান্তের খবর নিশ্চিত করেছে কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জের দফতর। জানা গেছে, ৩৯ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি কয়েকদিন ধরেই জ্বরে ভুগছিলেন। সেই সময় থেকে তাকে নজরে রেখেছিলেন চিকিৎসকরা। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের নমুনায় নিপা ভাইরাসের যে স্ট্রেনটির হদিশ মিলেছে, তা বাংলাদেশের রূপ। এটা মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এই স্ট্রেনে মৃত্যুর হার বেশি বলে দফতরের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে । কেরালায় নিপা ভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ। সংক্রমণ রুখতে প্রয়োজনীয় মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি পাঠানো হয়েছে কেরালায়। নিপা ভাইরাসের চিকিৎসায় এটিই একমাত্র অ্যান্টিভাইরাল বলে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে।

পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কেরালায় গেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের একটি বিশেষজ্ঞ দল। জোর দেওয়া হয়েছে নমুনা পরীক্ষায়। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার কোঝিকোড়ের এক স্বাস্থ্যকর্মী নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে সরকারি তরফে জানানো হয়েছিল। নিপা আক্রান্তদের সংস্পর্শ এসেছে, এমন ৭০৬ জনকে চিহ্নিত করেছে কেরালা সরকার। তাঁদের মধ্যে ১৫৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী। এদের মধ্যে আবার ৭৭ জন উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানা গেছে। এদের নিপায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানিয়েছেন কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী।


এদিকে, বুধবার পর্যন্ত নিপা ভাইরাস আক্রান্ত এমন ১১টি ওয়ার্ডকে চিহ্নিত করে সেই এলাকাগুলিকে কন্টেনমেন্ট জোন হিসেবে করা হয়েছে ঘোষণা করে কোজিকোড় প্রশাসন। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া এলাকার মানুষদের ঘরে থাকার জন্য করা হয়েছে আবেদন। কন্টেনমেন্ট জোনগুলির স্কুলগুলি বন্ধ রাখার রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এর আগে বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার স্কুলগুলি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করে শনিবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কোঝিকোড়ের পাশাপাশি কান্নুড়, ওয়েনাড় এবং মলপ্পুরমেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কেন্দ্রের পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল কেরলের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন।

কেরলের পাশাপাশি কর্নাটক এবং রাজস্থানেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাজস্থান সরকার বৃহস্পতিবার নিপা নিয়ে নির্দেশিকা জারি করেছে। একই সঙ্গে, সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালগুলিকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কর্নাটকেও নিপা ঠেকাতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত গত ৩০ আগস্ট নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তিও মৃত্যুর খবর জন্য যায়. কেরলের কোঝিকোড়েই নিপার থাবা ক্রমশ চওড়া হচ্ছে।  এই রাজ্যে ২০১৮ ও ২০২১-এর পর ফের নিপার আতঙ্ক গ্রাস করছে।