৫ বছরের দাগ থাকলেই ভোটে প্রার্থী নয়, দাওয়াই নির্বাচন কমিশনের 

দিল্লি, ১১ এপ্রিল– নির্বাচন-সহ সামগ্রিক রাজনীতিকে অপরাধমুক্ত রাখতে ভোট প্রার্থীদের জন্য নতুন নিয়ম জানাল নির্বাচন কমিশন। একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ন্যূনতম পাঁচ বছর জেল হতে পারে, কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অপরাধের যুক্ত থাকার মামলা বিচারাধীন থাকলে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

তারা বলেছে, নির্বাচন-সহ সামগ্রিক রাজনীতিকে অপরাধমুক্ত রাখতে হলে এছাড়া কোনও উপায় নেই। কমিশনের বক্তব্য, মামলার চার্জগঠন হয়ে গেলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার হারাবেন। তবে এই বিধান কার্যকর হবে শুধুমাত্র ভোট ঘোষণার ছয় মাস আগে চার্জ গঠন হয়ে গেলে।

প্রসঙ্গত, মামলায় চার্জ গঠন হল, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট বা চার্জশিটের ভিত্তিতে কোন কোন ধারায় বিচার হবে তা সব পক্ষের উপস্থিতিতে ঠিক হয়। তখনই ঠিক হয়ে যায় অভিযুক্ত সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযুক্ত হলে সাজা কী হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তার ন্যূনমত পাঁচ বছর জেল হতে পারে, এমন ব্যক্তির ভোটে প্রার্থী হওয়া নিষিদ্ধ হোক দেশে।


পাঁচ বছর জেলের সাজা সাধারণত দাঙ্গা-হাঙ্গামা, খুন, খুনের চেষ্টার ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকা, দলবদ হামলার মতো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে হয়ে থাকে। এছাড়া শিশুর উপর যৌন লাঞ্ছনার অপরাধেও পাঁচ বছর জেলের সাজা হয়। যদিও সুপ্রিম কোর্ট একাধিক মামলায় বলেছে, ন্যূনতম সাত বছর জেল হওয়ার মতো অপরাধগুলিই গুরুতর অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।

 কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, ভোট ঘোষণার ছয় মাস আগের মামলার ক্ষেত্রেই তাদের এই সুপারিশ কার্যকর হবে।

যদিও দুটি মৌলিক কারণে কমিশনের প্রস্তাবকে ভয়ঙ্কর ও বিস্ময়কর বলে বর্ণনা করছে রাজনৈতিক মহল ও আইনজ্ঞদের একাংশ। তাদের বক্তব্য, ভারত-সহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই নাগরিকের এই আইনি ও সাংবিধানিক রক্ষাকবচ রয়েছে যে আদালতে দোষী সাব্যস্ত এবং সাজা ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত তারা নিরপরাধ। নির্দোষ ব্যক্তির কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া যেতে পারে। যেখানে জেল থেকেও প্রার্থী হওয়ার অধিকার বহাল আছে দেশে।

দ্বিতীয় আপত্তির জায়গাটি হল, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসা। অনেকেই মনে করছেন, প্রতিপক্ষকে ভোটে প্রার্থী হওয়া থেকে দূরে রাখতে কেউ মিথ্যা মামলা সাজাতে পারে।কমিশনের সুপারিশে আপত্তি তুলে অনেকেই বলছেন, এটা রাজনীতিকদের স্বাভাবিক নাগরিক জীবন বিঘ্নিত করবে। মামলায় ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা যেমন থাকবে, তেমনই রাজনৈতির রেষারেষি, মিথ্যা মামলার প্রবণতাও বৃদ্ধি পাবে।