নিজস্ব প্রতিনিধি – নাম না করে রবিবার মাথাভাঙার সভা থেকে সারদা-নারদ কাণ্ডের জন্য মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে তােপ দেগেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায়। এই আক্রমণের পাল্টা হিসাবে কয়েকঘন্টা পরেই বিস্ফোরক দাবি করেন মুকুল রায়। তিনি জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যেই সুদীপ্ত সেনকে দেখেন তিনি। মাত্র দুবার তিনি সারদার মালিকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বলেও দাবি মুকুলের। যদিও এই নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
আসন্ন লােকসভা ভােটের আগে ফের আলােচনার কেন্দ্রে উঠে এল সারদা-নারদা কাণ্ড। রবিবার রাসমেলার মাঠে এই প্রসঙ্গে রাজ্য প্রশাসনকে আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী। মােদি এই সভায় বলেছিলেন, সারদা, নারদা, রােজভ্যালি দুর্নীতিতে রাজ্যের সাধারণ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছেন। কোথায় গেছে এই টাকা তার খোঁজ নেবেন ‘চৌকিদার’ অর্থাৎ মােদি নিজে। দেশবাসীকে রক্ষা করতে সবসময় সজাগ রয়েছেন তিনি, এমনটাও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপর এই আক্রমণের পাল্টা হিসাবে মােদির দিকে তােপ দাগেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, যে লােকটা আপনার সভার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেই সারদা-নারদকাণ্ডে সবথেকে বড় অভিযুক্ত।
এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই রবিবার রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুকুল রায়। সৎসাহস না থাকায় মাথাভাঙার সভায় আক্রমণের সময় মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নাম নেননি বলেও দাবি করেন তিনি। মুকুল রায় দাবি করেন, সারদা-নারদের ঘটনায় সবথেকে বড় সুবিধাভােগীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দৌলতেই প্রথম সুদীপ্ত সেনকে দেখেন বলেও জানান মুকুল। তাঁর কথায়, ব্যক্তিগতভাবে তিনি সারদার মালিককে চিনতেন না। একবার ডেলােয় এবং আরেকবার কলকাতায় নিজাম প্যালেসে, মাত্র দুবার তিনি সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে দেখা করেন।
সারদাকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযােগ প্রমাণ করতে পারলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন বলেও জানান মুকুল রায়।
পাশাপাশি সারদা কাণ্ডের তদন্তে রাজ্যের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তােলেন তিনি । তৃণমূলের প্রাক্তন সেকেন্ড ইন কমান্ড প্রশ্ন তােলেন, যদি তাঁকে অভিযুক্ত বলে মনে হয় তাহলে এই চিটফান্ড কাণ্ডে তদন্তের জন্য তৈরি ‘সিট’ কেন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি? মুকুল রায়ের কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্বাবধানে সেই সময় ‘সিটের দায়িত্ব ছিল প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের ওপর। কিন্তু সেই সময় তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযােগ ওঠেনি। পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তােপ দেগে তিনি জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী করার জন্য সংবাদমাধ্যমে বিনিয়ােগ করেছিলেন সুদীপ্ত সেন। আর এই বাজে বিনিয়ােগ’ই সারদা গােষ্ঠীর পতনের অন্যতম কারণ হিসাবে দাবি করেন তিনি।
নারদ প্রসঙ্গে মুকুল রায় জানান, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। তাই এই নিয়ে কিছু বলব না। যদিও নারদ প্রসঙ্গে ফিরহাদ হাকিম, অপরূপা পােদ্দারের বিরুদ্ধে সুর চড়ান তিনি। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যােগ দিলেও এতদিন পর্যন্ত সারদা-নারদ প্রসঙ্গে মুখ খুলতে দেখা যায়নি মুকুল রায়কে। কিন্তু লােকসভা নির্বাচনের আগে হঠাৎ তাঁর এই বিস্ফোরক মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতির মহল। পাশাপাশি এদিন মুকুল রায় জানান, অবাধ নির্বাচনের জন্য বেশ কিছু আধিকারিকের বদলি চেয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি, এমনটাও জানান তিনি।