পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কমিশনকে তিরস্কার হাইকোর্টের 

কলকাতা, ১৫ জুন –  আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে অশান্ত রাজ্যের বিভিন্ন জেলা। মনোনয়নকে ঘিরে নজিরবিহীন হিংসার ঘটনায় রাজ্য এবং নির্বাচন কমিশনকে তিরস্কার করল আদালত। কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি  টিএস শিবজ্ঞানম  বলেন, ‘‘স্পর্শকাতর বুথ নিয়ে যদি কমিশন সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, তবে আদালত গোটা রাজ্যেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেবে।’’ আদালত আরও বলে, ‘‘পঞ্চায়েত মামলা নিয়ে রায় কার্যকর না হলে আদালতও নীরব দর্শক হয়ে থাকবে না ।’’

পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বিরোধীদের করা জনস্বার্থ মামলায় হাই কোর্ট যে রায় ঘোষণা করেছিল, তা পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানিয়ে বৃহস্পতিবার আদালতে যান রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হয় বিরোধী দল বিজেপিও  ।
ওই মামলার শুনানিতে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন আদালতে বলেন, ‘‘ আদালত সাতটি স্পর্শকাতর জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু স্পর্শকাতর এলাকা এখনও চিহ্নিত হয়নি। তাই এই রায় পুনর্বিবেচনা করা হোক।’’  শুনানিতে রাজ্যের তরফে জানানো হয়, “গত পরশু আইএসএফ ১৫ হাজার সমর্থক নিয়ে মনোনয়ন পেশ করতে যান। মনোনয়ন কেন্দ্র ভাঙচুর করে।  গোটা রাজ্যজুড়ে বিজেপি সহ বিরোধীরা অশান্তি তৈরি করছে।” প্রধান বিচারপতি জানান, “১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। পুলিশ পদক্ষেপ করুক।” কিছুটা তিরস্কারের সুরে প্রধান বিচারপতি রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে বলেন, “আমি সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দেব?”

প্রধান বিচারপতি আরও জানান, “আমি কমিশনকে উপদেশ দেওয়ার জন্য বসে নেই যে আপনারা উচ্চ আদালতে যান। আপনাদের হাতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আপনারা যদি আমাদের নির্দেশকে কার্যকর না করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন, তাহলে আমরা শুধু দর্শক হয়ে বসে থাকব না। আমাদের প্রাথমিক মত, নির্বাচন কমিশন আমাদের নির্দেশকে কার্যকর না করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে।”

কমিশনের বক্তব্য, তারা পর্যালোচনা করে স্পর্শকাতর বা অতিস্পর্শকাতর জেলা, এলাকা বা বুথের এমন কোনও তালিকাই তৈরি করেনি। হাইকোর্ট যা বলেছে তাতে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই এদিন পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সেই মামলায় বড় মন্তব্য করল প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।


প্রধান বিচারপতি এদিন কমিশনের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আদালতের ভিতরে এবং বাইরে রাজ্য নির্বাচন কমিশন দু’রকম মনোভাব দেখাচ্ছে। বুধবার মনোনয়ন পর্বে ভাঙড়-সহ রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকায় অশান্তি, হিংসার ছবি দেখা যায় সেসব প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ বলে, আদালত সাধারণ ভোটারদের নিয়ে চিন্তিত। কমিশন তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারছে না। বরং আদালত যা বলছে তাকে মান্যতা না দেওয়ার মনোভাব দেখাচ্ছে। দুপুর দু’টোর সময়ে ফের এই মামলার শুনানি শুরু হবে। এখন দেখার কী নির্দেশ দেয় আদালত।