• facebook
  • twitter
Wednesday, 30 October, 2024

মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে তছনছ সিকিমের বিস্তীর্ন এলাকা, নিখোঁজ ২৩ জন সেনা আধিকারিক  

শিলিগুড়ি, ৪ অক্টোবর –  মেঘভাঙা প্রবল বৃষ্টির জেরে বিধ্বংসী আকার ধারণ করল তিস্তা নদী। তিস্তার তাণ্ডবে লণ্ডভন্ড বিস্তীর্ণ এলাকা। মেঘভাঙা বৃষ্টিতে সিকিমের লোনক হ্রদ ফেটে তিস্তায় হড়পা বান দেখা দেয়। এর ফলে ভেসে যায় উত্তর সিকিমের একাংশ। ভেসে যান ২৩ জন জওয়ান। তাঁদের এখনও পর্যন্ত কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। সেনাবাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, আরও ২৫

শিলিগুড়ি, ৪ অক্টোবর –  মেঘভাঙা প্রবল বৃষ্টির জেরে বিধ্বংসী আকার ধারণ করল তিস্তা নদী। তিস্তার তাণ্ডবে লণ্ডভন্ড বিস্তীর্ণ এলাকা। মেঘভাঙা বৃষ্টিতে সিকিমের লোনক হ্রদ ফেটে তিস্তায় হড়পা বান দেখা দেয়। এর ফলে ভেসে যায় উত্তর সিকিমের একাংশ। ভেসে যান ২৩ জন জওয়ান। তাঁদের এখনও পর্যন্ত কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। সেনাবাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, আরও ২৫ ফুট জলস্তর বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখনই দোতলা বাড়ির ওপর দিয়ে বইছে জল। বর্তমান জলস্তর থেকে আরও ২৫ ফুট জল বাড়লে, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেবে বলে জানিয়েছেন সেনার ইস্টার্ন কমান্ড। এই পরিস্থিতিতে তিস্তার ধ্বংসলীলার জেরে পুজোর মুখে সিকিম ঘুরতে যাওয়া বহু পর্যটক আটকে পড়েছেন প্রতিবেশী রাজ্যেই। পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে, ঠিক কত সংখ্যক পর্যটক সিকিমে আটকে পড়েছেন, তার সঠিক সংখ্যাও এখনও জানা যাচ্ছে না।  জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ। ফলে ফেরার পথও আপাতত বন্ধ ।

লাগাতার প্রবল বৃষ্টি। তার সঙ্গী মেঘভাঙা বৃষ্টি। বিপর্যস্ত সিকিমে লাচেন উপত্যকায় লোনাক লেক উপচে ভেসে গেল সেনা জওয়ানদের একটি গাড়ি। নিখোঁজ ২৩ জন জওয়ান। শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। ঘটনার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । রাজ্য সরকারের তরফে সমস্ত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

তিস্তা নদীর জল অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকায় উত্তর ও পূর্ব সিকিমে জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। প্রায় একই পরিস্থিতি উত্তরবঙ্গে। মালবাজার মহকুমার গজলডোবায় তিস্তার একাধিক লকগেট খুলে দেওয়ায় হু হু করে জল ঢুকছে। ডুবে গিয়েছে বহু রাস্তা। তিস্তার সংরক্ষিত এলাকায় জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা।

সিকিমের মঙ্গন জেলার এসপি সোনম দেচু জানিয়েছেন, ”তিস্তায় আচমকা জলস্তর বৃদ্ধি হওয়ায় বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে । তিস্তার আশেপাশের এলাকা দ্রুততার সঙ্গে খালি করতে হবে। আমরা সব কটি থানাকে সতর্ক করেছি। জানতে পেরেছে, সিংতামের কাছে সেনাদের একটি গাড়ি দাঁড়ানো ছিল। জলের তোড়ে তা ভেসে গিয়েছে। ২৩ জন জওয়ানকে পাওয়া যাচ্ছে না। খোঁজ চলছে।” সিকিমের চুংথাংও মঙ্গনের মধ্যে যোগাযোগকারী সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় গোটা এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চুংথাং।

এদিকে, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সূত্রের খবর, গজলডোবার তিস্তা ব্যারেজ থেকে প্রায় ৭০০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে, যা এই বছরে সর্বোচ্চ বলে মনে করা হচ্ছে। তিস্তার ডাউনস্ট্রিমে বসবাসকারী সাধারণ মানুষজনের উদ্দেশে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে৷  তাঁদের অন্যত্র সরানোর ব্যবস্থাও চলছে। তিস্তায় অতিরিক্ত জলস্তর বৃদ্ধির জন্য গজলডোবায় জলের চাপ বেড়ে যায়। সেই কারণে বেশিরভাগ লকগেট খুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। খোলা হয়েছে ৩৫ টির মধ্যে ৩২ টি লকগেটই। বেলা যত বাড়ছে, জলের পরিমাণও বাড়ছে গজলডোবার তিস্তা নদীতে।

এদিকে লোনক হ্রদে আরও বড় ফাটল দেখা দেওয়ায় তিস্তা আরও বেশি ভয়াল রূপ ধারণ করেছে।  যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। লেহনক লেকের কাছাকাছি সেনা ছাউনি থেকে নীচের দিকে থাকা সেনা ছাউনিকে সতর্ক করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। মাঝরাত থেকে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে উত্তর সিকিমের লাচেন উপত্যকার লোনক হ্রদ উপচে পড়ে।  পাহাড়ি সিকিমের দু’পাশে সেনাছাউনি থাকায় মাঝরাতে জলস্তরে ভেসে যান ২৩ জন সেনা। সময় যত এগোচ্ছে, ভয়ঙ্কর তিস্তা আরও রুদ্ররূপ নিচ্ছে। সেনার তরফে ইতিমধ্যেই সতর্ক করা হয়েছে তিস্তার দোমহনী থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত অসংরক্ষিত এলাকায় লাল সতর্কতা জারি করেছে সেচ দফতর।

পর্যটন কেন্দ্র সিকিম তিস্তায় হড়পা বানের জেরে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।  পাকিয়ং, গ্যাংটক, নামচি এবং মঙ্গন জেলাবহু ক্ষয়ক্ষতি হয় । ভেসে যায় বহু সেতু। বেশ কিছু জায়গায় জলের তোড়ে সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়ে বড় বিল্ডিং।  চাপা পড়েছে বহু বসতি, রাস্তাঘাট, সেনাছাউনি। স্বভাবতই তিস্তার ধ্বংসলীলায় প্রাণহানির সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সূত্রের খবর, এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উত্তর সিকিমের বিকচুতে তিন জনের দেহ উদ্ধার করেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। পরিস্থিতি বিচার করে আগামী ৮ অক্টোবর পর্যন্ত পাকিয়ং, গ্যাংটক, নামচি এবং মঙ্গনের সমস্ত স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চালু করা হয়েছে একাধিক জরুরি পরিষেবার নম্বর। জলপাইগুড়ির সমস্ত স্কুল বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। 

সিকিম যাওয়ার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পথটি যায় ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক হয়ে ভায়া শিলিগুড়ি।  ফলে পর্যটকেরা প্রায় সকলেই ওই পথ ধরেই সিকিম যান। বুধবার সকাল থেকে সেই পথ বন্ধ। বুধবার ভোরে বিপর্যয়ের পর থেকে তাঁদের বেশির ভাগের সঙ্গেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে, ঠিক কত সংখ্যক পর্যটক বর্তমানে সিকিমে রয়েছেন, তারও কোনও স্পষ্ট হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। 

হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজ়ম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত সিকিমে কত পর্যটক আটকে রয়েছেন তার সঠিক কোনও খবর নেই। কেন্দ্র ও রাজ্যের কাছে অনুরোধ, এয়ারলিফ্‌টিং ছাড়া এত মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব নয়। সিকিমের সঙ্গে সমতলের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। মঙ্গলবার রাত থেকে সিকিমের স্থানীয় পর্যটন সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।  বিকল্প পথও  বন্ধ ।’’ ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক ছাড়াও বাংলা থেকে আরও একটি রাস্তা পৌঁছয় সিকিম। সেই পথ ডুয়ার্স, গরুবাথান, লাভা, কালিম্পং হয়ে চলে যায় সিকিম। সেই রাস্তার অবস্থাও খারাপ। কী করে পর্যটকদের উদ্ধার করে সমতলে নিয়ে আসা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে সরকারও।

রাজ্য ইকো টুরিজ়ম দফতরের চেয়ারম্যান রাজ বসু এক সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘পর্যটকদের সঠিক সংখ্যা হিসাব করাই এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহু পর্যটকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না ।  আমাদের আবেদন, এখনই কেউ রাস্তায় নামার চেষ্টা করবেন না। যে যেখানে আছেন, সেখানেই থাকুন।’’

গ্যাংটকের পুলিশ সুপার তেনজিং লোডেন লেপ্চা বলেন, ‘সিংতাম এবং রংপোর বাসিন্দাদের উঁচু এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নামানো হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।  মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং নিজে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন। উদ্ধারকাজ এবং ত্রাণ পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে।