কলকাতা, ৩০ জুন – সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর মেয়াদ বাড়াল কেন্দ্রীয় সরকার। তাঁর মেয়াদবৃদ্ধির আবেদন জানিয়ে কেন্দ্রকে অনুরোধ জানিয়েছিল রাজ্য সরকার। চাকরিজীবনের শেষ দিন, ৩০ জুন , দিল্লি থেকে এসে পৌঁছয় সম্মতিপত্র। শুক্রবারই ছিল মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর চাকরিজীবনের শেষ দিন। তাই আগে থেকেই তাঁর চাকরির মেয়াদবৃদ্ধির আবেদন জানিয়ে দিল্লিকে আবেদন জানিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে কোনও সাড়া না পাওয়ায় আশঙ্কা তৈরি হয় নবান্নে। তবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনে সাড়া দিলেন প্রধানমন্ত্রী। নবান্নে পাঠিয়ে দেওয়া হল সম্মতিপত্র। বর্তমান মুখ্যসচিবের মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ানো হল।
২০২১ সালের ৩১ মে মুখ্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। তার আগে দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর ধরে রাজ্যের অর্থ দফতরের প্রধান সচিব হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন। ২০১২ সালে অর্থসচিব পদে দায়িত্ব নেন, ২০২০ সালে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব পদে। উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, অনেকে যদিও বলছেন দ্বিবেদীর মেয়াদ না-বাড়ানোর জন্য শুভেন্দু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু আমলাদের মেয়াদবৃদ্ধির বিষয়টি কেন্দ্রের ‘পার্সোনেল’ মন্ত্রকের অধীন। সেটি আবার অমিতের অধীন দফতর নয়। ওই দফতর সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অধীন। ফলে দ্বিবেদীর মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টিতে স্বয়ং মোদীর হস্তক্ষেপ রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দিক থেকে বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী দ্বিবেদীকে একাধিকবার আক্রমণ করেছেন এবং তিনি কেন্দ্রের শাসক দলের সদস্য হওয়ায় তাঁর সেই আক্রমণ বাড়তি গুরুত্ব পায়। সেক্ষেত্রে এই মেয়াদবৃদ্ধিতে স্বস্তি তৃণমূল শিবিরে ।
২০২১ সালের ৩১ মার্চ মুখ্যসচিব পদে বসেন হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। ঠিক তার আগের দিন কেন্দ্রের সঙ্গে টানাপোড়েনের জেরে তৎকালীন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে যোগদানের নির্দেশ দেয় কেন্দ্র। যদিও কেন্দ্রের চিঠি গ্রহণ না করে অবসরের সিদ্ধান্ত নেন আলাপন। সেই গোলমালের মধ্যেই নিজের পদের দায়িত্ব সামলান হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। আপাতত ৬ মাস মুখ্যসচিব থাকবেন তিনি।
উল্লেখ্য, হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর আগে মুখ্যসচিব ছিলেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ক্ষেত্রেও মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। তবে, সেই সময় রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে সংঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে হাজির হননি আলাপন। এরপর তাঁকে দিল্লিতে নর্থ ব্লকে রিপোর্ট করার নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। টালমাটাল সেই পরিস্থিতিতে মুখ্যসচিব পদ থেকে অবসর নিয়ে নেন আলাপন। মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে কাজে যোগ দেন।