হিরের মুকুট, মুক্তোর সাজ গুয়াহাটিতে, কেদারনাথ দর্শন খাস দিল্লিতেই 

দিল্লি, ২০ অক্টোবর–  দূর্গা পুজো মানেই বাংলা। সারারাত প্যান্ডেল হপিং, বেজায় খাওয়া-দাওয়া। প্রবাসী বাঙালিরাই জানে এই সময় তারা কলকাতাকে কিভাবে মিস করে। তবে এবার বঙ্গের বাইরেও পুজোর ষোলো আনা মজা পাবেন বাঙালিরা। বিশেষ করে গুয়াহাটি, দিল্লিবাসীরা। বঙ্গের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবার গুয়াহাটিতেও পুজো শুরু ষষ্ঠীর বিকেলে। ষষ্ঠীর সকাল অবধি বেশির ভাগ মণ্ডপে ‘ফিনিশিং টাচ’ চলে। কিন্তু এ বছর কলকাতার হাওয়া লেগেছে গুয়াহাটিতে। শহরের আমেরিকান কলোনির পুজো মহালয়ার দিন আর রেস্ট ক্যাম্প কালীবাড়ির পুজো প্রথমাতেই উদ্বোধন হয়ে গেল।

গুয়াহাটির সবচেয়ে পুরনো বায়োয়ারি পুজো উজানবাজার বারোয়ারি। আহোম রাজার শুরু করা পুজো সেই ১৮৮৯ সালে বারোয়ারি হয়েছিল। অদূরে লতাশিলের মাঠে পুজোয় তৈরি হয়েছে ৬৫ ফুট উঁচু শিবলিঙ্গ।

গুয়াহাটির সবচেয়ে ভিড় টানা দু’টি পুজো রেস্ট ক্যাম্প কালীবাড়ি ও বিষ্ণুপুর সর্বজনীন বাজেটের নিরিখেও শীর্ষে। তাঁদের থিম অ্যাকোয়ারিয়াম। মূর্তি সাদা ও সাবেকি। মণ্ডপের ভিতরে মেঝে ও চার দিকের দেওয়াল জুড়ে রয়েছে অ্যাকোয়ারিয়াম। এই প্রথম নবরাত্রির আয়োজন হচ্ছে এখানে। উদ্বোধনেই সেখানে সপ্তমী সন্ধ্যার ভিড়। বিষ্ণুপুর সর্বজনীন দুর্গা পুজোয় এ বারের থিম বৃন্দাবনের চন্দ্রোদয় মন্দির। ১১০ ফুট উঁচু মণ্ডপ তৈরি করা হচ্ছে। মন্দিরের ভিতরে থাকবে আমেরিকার ইস্কন মন্দিরের প্রতিচ্ছবি। মালিগাঁও কালীবাড়ির পুজো সকলকে মুগ্ধ করে দুর্গাপ্রতিমার জোরে। উত্তরবঙ্গ থেকে এসেছেন প্রতিমা শিল্পী। পুজোর চার দিন মণ্ডপের পাশেই সকলের জন্য প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা থাকছে। একেবারে কলকাতার পুরনো প্রতিমার কায়দায় পাণ্ডু ফ্রেন্ডস ক্লাবের একচালা প্রতিমা মন কেড়ে নেয়। ৭১তম বছরে নিউ কলোনির আজাদ হিন্দ ক্লাবের প্রতিমা ২৩ ফুট উঁচু। মা দুর্গার মাথায় থাকবে হিরের মুকুট।


দিল্লি বাসীদের জন্য কেদারনাথ দর্শন। তাও খাস দিল্লিতেই। এবার পুজোয় রাজধানী দিল্লি সংলগ্ন ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিয়নের (এনসিআর) দুর্গাপুজোয় অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠল কেদারনাথের মন্দির। ১৮ বছরে পা দেওয়া গাজিয়াবাদের বৈশালীর রচনা পার্কের  সর্বজনীন শ্রী শ্রী কালী পূজা সমিতির দুর্গাপুজো প্রতিবারেই অভিনবত্বে দিল্লি ও তার আশপাশের পুজোর তালিকায় উল্লেখযোগ্য জায়গাও করে নিয়েছে। প্রতি বছরই পরিবেশ বান্ধব প্যান্ডেল, এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শুধুমাত্র কাঁচা বাঁশ ব্যবহার করেই উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথ মন্দিরের মডেল তৈরি করা হয়েছে।

বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব শারদোৎসবের সঙ্গে দেশের অন্যান্য জায়গায় মানুষেরাও যুক্ত হোক, এই ভাবনা সামনে রেখে প্রতি বছরেই দেশের ভিন রাজ্যকে থিম হিসেবে তুলে ধরা হয় পুজোতে। আগে গুজরাত, রাজস্থানের পর এবারের থিম উত্তরাখন্ড। পুজোর চারদিনই উত্তরাখণ্ডের খাবার, সংস্কৃতি, উৎসব এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে পুজো মন্ডপে তুলে ধরা হবে। অন্যবারের মতো এবারেরও পুজো কমিটির পক্ষ থেকে সামাজিক অসরকারি সংগঠনকে অর্থ সাহায্য করা হবে। উত্তরাখন্ডের বহু মানুষ সেনা বাহিনীতে রয়েছেন। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে এবার বিশেষভাবে সক্ষম ভারতীয় সেনাদের জন্য কাজ করা একটি এনজিওকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সেই সংস্থারই প্রধান ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে লড়াই করা কিংবদন্তি সেনা কর্তা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ইয়ান কার্ডোজো এবার পঞ্চমীর দিন পুজো উদ্বোধন করেছেন।