বিলে স্বাক্ষর করতে বিলম্ব হওয়ায় সুপ্রিম কোর্টে তিরস্কৃত রাজ্যপাল

দিল্লি, ১০ নভেম্বর – রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলে স্বাক্ষর করতে বিলম্ব হওয়ায় সুপ্রিম কোর্টে তিরস্কৃত হলেন পাঞ্জাব ও তামলিনাড়ুর রাজ্যপাল৷ এই দুই রাজ্যের রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টের  প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূডে়র নেতৃত্বধীন শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ শুক্রবার বলে, ‘‘অনুগ্রহ করে যথাযথ ভাবে নির্বাচিত আইনসভায় পাশ করা বিলের পদ্ধতিকে এডি়য়ে যাবেন না৷ এটা খুবই গুরুতর উদ্বেগের বিষয়৷’’ পাঞ্জাবের রাজ্যপাল বানওয়ারিলাল পুরোহিতকে আদালতের বক্তব্য,”আপনি আগুন নিয়ে খেলছেন৷ আমাদের দেশ একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে চলে৷ সেই পদ্ধতি মেনেই চলতে দিন৷”

পাঞ্জাবের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অন্তত ৭টি বিল আটকে রাখার অভিযোগ রয়েছে৷ ওই বিলগুলি রাজ্য বিধানসভার জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ রাজ্যপাল বিল আটকে রাখায় রাজ্যে নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে৷ এই অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় পাঞ্জাবের আপ সরকার৷ সেই মামলার প্রেক্ষিতেই রাজ্যপালকে কড়া কথা শোনায় শীর্ষ আদালত৷
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিংহ মান সরকারের সঙ্গে রাজ্যপাল তথা প্রাক্তন বিজেপি নেতা বানোয়ারীলাল পুরোহিতের বিবাদ তীব্র৷ রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ করে, বিধানসভায় পাশ হওয়া বেশ কয়েকটি বিল তিনি আটকে রেখেছেন৷ শুক্রবার পাঞ্জাবের রাজ্যপালের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘আপনি আগুন নিয়ে খেলছেন৷ এক জন রাজ্যপাল কী ভাবে এমন করতে পারেন? পাঞ্জাবে যা হচ্ছে তাতে আমরা খুশি নই৷ আমরা কি সংসদীয় গণতন্ত্র বজায় রাখব?’’

গত ৭ নভেম্বর মামলাটি ওঠার পরে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানিয়েছিলেন, একই অভিযোগে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কেরল এবং তামিলনাড়ুর সরকারও৷ সেখানেও রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত চরমে উঠেছে৷ সরকারের পাশ করা বিল ঝুলিয়ে রেখেছেন রাজ্যপালেরা৷ বস্তুত মামলার প্রথম শুনানির দিনই প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ‘‘রাজ্যপালদের সামান্য একটু আত্মানুসন্ধান করা জরুরি৷ তাঁদের মনে রাখতে হবে, রাজ্যপাল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন৷ বিধানসভা কোনও সিদ্ধান্ত নিলে তাকে গুরুত্ব দেওয়াটা জরুরি৷’’


রাজ্যপালদের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানিয়েছিলেন, মানের সরকার মোট ২৭টি বিল বিধানসভায় পাশ করিয়েছে৷ তার মধ্যে ২২টিতে রাজ্যপাল বানোয়ারীলাল ছাড়পত্র দিলেও পাঁচটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছেন৷ শুক্রবার সওয়াল-পর্বে মান সরকারের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘ওই সাতটি বিল গত জুলাই এবং তার আরও আগে রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়েছিল৷ কিন্ত্ত এখনও তিনি কোনও সিদ্ধান্ত নেননি৷’
তামিলনাড়ুতেও রাজ্যপাল আরএস রবির সঙ্গে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে নেতা স্ট্যালিনের বিবাদ তীব্র হয়েছে৷ রাজ্যপাল একাধিক বিলে সই না করায় প্রতিবাদ জানিয়ে গত ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসে চেন্নাইয়ের রাজভবনে আয়োজিত চা চক্রের অনুষ্ঠান বয়কট করেছিলেন স্ট্যালিন এবং তাঁর মন্ত্রীরা৷
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যপাল বনওয়ারিলাল পুরোহিতকে মনে করিয়ে দিল, বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল অনন্তকাল আটকে রাখা যায় না৷ শীর্ষ আদালতের বক্তব্য, আমাদের গণতন্ত্রে কাজ করার কিছু প্রথা এবং রীতি আছে৷ সেটা ভেঙে দেওয়া যায় না৷ রাজ্যপালের আচরণে আদালত যে অখুশি সেটাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে৷ ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য,”পাঞ্জাবে যা হচ্ছে, তাতে আমরা একেবারেই খুশি নই৷ এটা গভীর উদ্বেগের বিষয়৷”