কলকাতা , ২ অগাস্ট – পঞ্চায়েত নির্বাচনের আবহে রাজভবনে ‘পিসরুম’ খুলেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই চমকের পর সম্প্রতি এসেছে ‘আমনে–সামনে’ কর্মসূচি। যেখানে রাজ্যপাল সরাসরি কথা বলবেন ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে। এবার রাজভবনে খোলা হল ‘অ্যান্টি কোরাপশন সেল’ বা দুর্নীতি বিরোধী সেল। যে কোনও দুর্নীতি নিয়ে এখানে অভিযোগ জানানো যাবে। রাজ্যপাল জানান, এই সেল খোলার উৎসাহ তিনি পেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। এই সেল খোলার অর্থই হল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এই সেলে অভিযোগ জমা পড়ুক, এটাই চান রাজ্যপাল। সুতরাং নবান্ন–রাজভবন সংঘাত নয়া মোড় নিতে চলেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এনিয়ে বুধবার ফের সোচ্চার হন শিক্ষামন্ত্রী। রাজ্যপাল এভাবে রাজভবনে অ্যান্টি-করাপশন সেল খুলতে পারেন কিনা তা নিয়েও মতবিরোধ দেখা দিয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।
১ অগাস্ট থেকে এই ‘করাপশন’ সেল হেল্প লাইন চালু করেছে। গত ২৪ ঘন্টায় সেখানে শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি-সহ রাজ্যের অন্যান্য দুর্নীতি নিয়েও কয়েকটি ফোন আসে। এখানে যেসব অভিযোগ জমা পড়বে , সেগুলি প্রতিটির ক্ষেত্রেই পদক্ষেপ করা হবে।
একজন রাজ্যপালের এই ধরণের সেল খোলার এক্তিয়ার আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই সেল সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যকেই হাতিয়ার করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী ‘ তে ফোন করে অভিযোগ জানাতে বলেছিলেন এবং বলেছিলেন তিনি নিজেই ব্যবস্থা নেবেন , ঠিক সেই ধাঁচেই এটি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ। রাজ্যপাল বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যা করতে চান, আমিও তাই করতে চেয়েছি।’
এই বিষয়টি নিয়ে সুর চড়িয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এদিন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘সম্পূর্ণভাবে একটা রাজভবন থেকে উচ্চশিক্ষাকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা চলছে। এটা একটা অবিজেপি শাসিত রাজ্য। যে কোনও অবিজেপি রাজ্যেই এই চেষ্টা চলছে। তবে এই রাজ্য নজিরবিহীন। উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে আলোচনা না করে, এটা যখন উনি করছেন, তখন উনি ধরে নিচ্ছেন প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির আখড়া। এটা অগণতান্ত্রিক। শীর্ষ আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছি।’
রাজ্যপাল এভাবে রাজভবনে ‘অ্যান্টি করাপশন সেল’ খুলতে পারেন কিনা এই নিয়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে। ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় বলেন, ‘বেআইনি কাজ কেন হবে? তথ্য রাখার দায় তো রাজ্যপালের, উনি করতেই পারেন।’ কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘যেখানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার আছে, সেখানে রাজ্যপালের ভূমিকা অত্যন্ত সীমিত। রাজ্যপালকে পরামর্শের উপর চলতে হয়। স্বাধীন ক্ষমতা নেই। তিনি অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারবেন আইনসভা বললে। রাজভবনে আইনত বিকল্প প্রশাসনিক ব্যবস্থা রাজ্যপাল চালু করতে পারেন না।’