জয়পুর, ২৭ অক্টোবর– রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলতের ছেলে বৈভবকে বিদেশি মুদ্রা আইন লঙ্ঘনের মামলায় তলব করেছে ইডি। শুক্রবার তাঁকে জয়পুরের ইডি অফিসে হাজির হতে বলা হয়েছে। ভোটের রাজস্থানে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর ‘সক্রিয়তা’ নিয়ে মুখ খুললেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রবীণ কংগ্রেস নেতা অশোক গেহলত । এদিন জয়পুরে এক সাংবাদিক বৈঠকে গেহলত শুধু ইডি প্রসঙ্গে মুখ খুলেই ক্ষান্ত হননি, কদর্য ভাষায় ইডিকে কুকুরের সঙ্গে তুলতে করে মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যের পথেঘাটে এখন নেড়ি কুকুরের চেয়েও বেশি ইডি ঘুরছে।’’
নরেন্দ্র মোদি সরকার বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিরোধীদের উপর চাপ বাড়াতে ইডি এবং আর এক কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইকে ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ছেলেকে তলবের পরই ইডি-সিবিআইয়ের ওপর বেজায় চটেছেন গেহলত। বিধানসভা ভোটের আগে ইডি-র এই তৎপরতা নিয়ে ক্ষুব্ধ গেহলত বৃহস্পতিবারও বিজেপিকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেন। পাশাপাশি এদিন রাজস্থান কংগ্রেসের প্রধান গোবিন্দ সিং দোতাসারার বাড়িতে অভিযান চালায় ইডি। একইসঙ্গে দলের প্রথম সারির নেতা ওমপ্রকাশ হুদলার ঠিকানাতেও তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
২০২০ সালে জয়পুরের দুই ব্যক্তি গেহলত -পুত্রের বিরুদ্ধে ‘শিবনার হোল্ডিংস’ নামে একটি মরিশাস-ভিত্তিক কোম্পানির মাধ্যমে বেআইনি ভাবে অর্থ পাচারের অভিযোগ তুলেছিলেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, ২০১১ সালে বৈভব ওই কোম্পানির মাধ্যমে বেনামে ট্রাইটন হোটেলের ২,৫০০ শেয়ার কিনেছিলেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বিজেপি সাংসদ কিরোরিলাল মিনা ইডির কাছে গেহলত পুত্রের বিরুদ্ধে তদন্তের আবেদন জানিয়েছিলেন। তিন বছর পরে বিধানসভা ভোটের মুখে সেই তদন্তে সক্রিয় হয়েছে ইডি।
শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকেও মোদি সরকারের বিরুদ্ধে রাজস্থানের গরিব জনতার জন্য উন্নয়ন প্রকল্পে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন গেহলত । সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি সিবিআই এবং ইডি আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করার সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু সময় দেওয়া হয়নি। মোদিজি বুঝতে পেরেছেন, তাঁর দিন ঘনিয়ে এসেছে। তাই এমন করছেন।’’
বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে রাজস্থান এখন সরগরম। এই রাজ্যে ২৫ নভেম্বর বিধানসভা নির্বাচন। এই সময় বিদেশি মুদ্রা আইন লঙ্ঘনের মামলায় রাজস্থানের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলতের ছেলে বৈভবকে তলব করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। আর এতেই বিজেপির ষড়যন্ত্র নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় সংস্থার এই সক্রিয়তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বলে মনে করছে কংগ্রেস।বিধানসভা ভোটের আগে রাজস্থানে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছে ইডি। বৃহস্পতিবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বিধায়ক গোবিন্দ সিংহ দোতাসরা এবং দলের প্রথম সারির নেতা ওমপ্রকাশ হুদলার ঠিকানায় তল্লাশি চালান কেন্দ্রীয় সংস্থাটির আধিকারিকেরা। পাশাপাশি, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয় মুখ্যমন্ত্রী গেহলতের ছেলে তথা কংগ্রেস নেতা বৈভব গেহলতকে।
গেহলতের ভাইকে চলতি মাসেই সার দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি। হানা দিয়েছিল আরও কয়েক জন কংগ্রেস নেতার ঠিকানা সে দিন গেহলত এক্স হ্যান্ডলে লিখেছিলেন, ‘‘এই ঘটনাই প্রমাণ করছে রাজস্থানে কংগ্রেস জিততে চলছে।’’ বৃহস্পতিবার ইডি অভিযান চলাকালীন তাঁর পোস্ট— ‘‘রাজস্থানে মহিলাদের জন্য নতুন প্রকল্প চালু করেছে কংগ্রেস সরকার। তার পরেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গোবিন্দ সিংহের দোতাসারার বাড়িতে ইডির অভিযান। আমার পুত্র বৈভবকে ইডির সামনে হাজির হওয়ার জন্য সমন। বুঝতেই পারছেন, বিজেপি চায় না যে রাজস্থানের মহিলা, কৃষক এবং দরিদ্ররা কংগ্রেসের দেওয়া প্রকল্পের সুবিধা পান।’’
ইডি সূত্র জানিয়েছে, দু’টি পুরনো মামলার সূত্র ধরেই মরুরাজ্যে ইডির এই তৎপরতা। সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বেআইনি আর্থিক লেনদেনের সন্ধান পেতেই গোবিন্দ এবং ওমপ্রকাশের একাধিক ঠিকানায় তল্লাশি হয়েছে। অন্য দিকে, বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন (ফেমা) লঙ্ঘনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে গহলৌত-পুত্রকে। যদিও সব কিছু ছাপিয়ে সামনে চলে এসেছে বিজেপির রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রশ্ন।
অন্য দিকে, গত বছরের ডিসেম্বরে রাজস্থান পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)-এর অন্তর্গত শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এই মামলায় আগে বাবুলাল কাটারা এবং অনিলকুমার মীনা নামে পিএসসির দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তের সেই সূত্র ধরেই গোবিন্দ এবং ওমপ্রকাশের জয়পুর, সিকার এবং মহুয়ার ঠিকানায় তল্লাশি অভিযান হয় বলে ইডি জানিয়েছে। প্রসঙ্গত, ওই দুই কংগ্রেস নেতাই এ বারের বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছেন।
নরেন্দ্র মোদীর ন’বছরের প্রধানমন্ত্রিত্বে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ উঠেছে বারে বারেই। গত মে মাসে কর্নাটকে বিধানসভা ভোটের কিছু দিন আগে বেআইনি আর্থিক লেনদেনের মামলায় ইডি নোটিস পাঠিয়েছিল প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ডিকে শিবকুমারকে। রাজস্থানে বিধানসভা ভোট আগামী ২৫ নভেম্বর। তার আগে বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের নেতাদের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার ইডি-র অভিযান ঘিরে উঠেছে প্রশ্ন।