জি-২১ -এর ঘোষণায় আফ্রিকান ইউনিয়ন জি-২০ স্থায়ী সদস্য 

দিল্লি, ৯ সেপ্টেম্বর– শনিবার সকাল সাড়ে দশটায় জি-২০ সম্মেলন শুরু হতেই জি-২০ হয়ে গেল জি-২১ । সম্মেলনের আয়োজক তথা সভাপতি দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদি শুরুতেই ঘোষণা করেন আফ্রিকান ইউনিয়নকে জি-২০ স্থায়ী সদস্য করা। বাকি সদস্যরা হাততালি দিয়ে এই ঘোষণাকে স্বাগত জানান। বিদেশেমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আফ্রিকান ইউনিয়নের সভাপতি আজালি আসাউমনকে হাত ধরে উদ্বোধনী মঞ্চে বসিয়ে দেন।

কূটনৈতিক মহল মনে করছে, ভারতের মাটি থেকে এই ঘোষণা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। দু সপ্তাহ আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানেও আফ্রিকান ইউনিয়নকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে সদস্য করা হয়নি। যদিও ইথিওপিয়ার মতো আফ্রিকার দেশকে সদস্য করা হয়েছে।

আফ্রিকান ইউনিয়ন হল একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। আফ্রিকার ছোট-বড় মিলিয়ে ৫৫টি দেশ এই মঞ্চের সদস্য। ১৯৬৩ সালে তৈরি এই মঞ্চ আফ্রিকার দেশগুলির মধ্যে সংহতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এই সংস্থার সদর দফতর বর্তমানে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায়।


তবে এর পিছনে একটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল চিন। চিনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিংপিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড অর্থাৎ এক অঞ্চল-এক পথ নীতিতে বিশ্বের দেড়শোর বেশি দেশকে যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগচ্ছেন। সেই তালিকায় আফ্রিকার কিছু দেশও আছে। লক্ষ্য ওই সব দেশের সঙ্গে চিনের বাণিজ্যে বৃদ্ধি করা। চিনের এই তৎপরতায় বাধা দিতেও জি-২০’তে আফ্রিকান ইউনিয়নকে যুক্ত করে নেওয়া হল। এরফলে চিনের সঙ্গে একক উদ্যোগে এগনোর আগে সদস্য দেশগুলিকে জি-২০’র সুবিধার কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। সম্নেলনের আয়োজক দেশ যেমন নিজের পছন্দের অতিথিদের সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানাতে পারে, তেমনই নতুন সদস্য গ্রহণেও প্রস্তাব দিতে পারে। আফ্রিকান ইউনিয়নকে সদস্য করতে ভারতের প্রস্তাবে সায় দেয় বেশিরভাগ দেশ।

ওয়াকিবহাল মহলের ব্যাখ্যা, এই মঞ্চ তৈরি হয়েছিল বিশ্ব আর্থিক মন্দাকে যৌথভাবে মোকাবিলা করার লক্ষ্যে। ১৯৯৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলেও তা সক্রিয় হয় ২০০৭ সালে বিশ্ব মন্দা মোকাবিলার লক্ষ্যে। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের তৎপরতায় বিশ্বনেতারা ২০০৭ থেকে প্রতি বছর জি-২০’র সম্মেলনে যোগ দেওয়া শুরু করেন। আর্থিক মন্দার মোকাবিলায় এই মঞ্চকে পারস্পরিক সহযোগিতার লক্ষ্যে সক্রিয় করে তোলা হয়।

ভারত-সহ সব সদস্য দেশই মনে করছে, বিশ্ব মন্দা আরও ভয়ানক আকার নিয়ে পারে আগামী দিনে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খাদ্য উৎপাদনে ব্যাপক মন্দা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। সেই অস্থির পরিস্থিতি যৌথভাবে মৌকাবিলার লক্ষ্যেই আফ্রিকান ইউনিয়নকে যুক্ত করা হল।