উত্তরকাশী, ১৮ নভেম্বর – উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে নির্মীয়মান টানেলের মধ্যে গত রবিবার থেকে আটকে রয়েছেন শ্রমিকরা৷ গত রবিবারের পর আবার ফিরে এল রবিবার , কিন্তু এখনও পর্যন্ত একজন শ্রমিককেও উদ্ধার করা সম্ভব হল না৷ তাঁদের উদ্ধার করার জন্য ধ্বংসস্তুপ সরানোর কাজ চলছে৷ দিল্লি থেকে আনা হয়েছে আমেরিকার ড্রিল মেশিন৷ সেটি ধ্বংসস্তুপের ভেতরে ২৪ মিটার পর্যন্ত পঁছোতে পেরেছে৷ আরও একটি ড্রিল মেশিন আনা হয়েছে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর থেকে৷ এই ড্রিল মেশিনটি দেরাদুনে নিয়ে আসা হয় ভারতীয় বায়ুসেনার বিমানে৷
এদিকে শ্রমিকদের নিরাপদে উদ্ধার করে আনতে তাইল্যান্ড এবং নরওয়ের দু’টি সংস্থাকেও ডেকে পাঠায় উত্তরাখণ্ড সরকার৷ অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে উদ্ধার করে সারা বিশ্বে খ্যাত তাইল্যান্ডের এই উদ্ধারকারী সংস্থা তাদের অভিজ্ঞতাকে উত্তরাখণ্ডেও কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে৷ আশা করা হয়েছিল শুক্রবারের মধ্যেই উদ্ধারকাজ শেষ করা যাবে৷ কিন্ত্ত ঘটনাস্থলে ফের নতুন করে ধস নামায় তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে৷ ১৬৫ জন উদ্ধারকারী উত্তরকাশীর টানেলে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন৷ রয়েছেন জাতীয় এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, ইন্দো টিবেটান পুলিশ এবং বর্ডার রোডওয়েজ বাহিনী৷ ধসে যাওয়া টানেলে আটকে আছেন পশ্চিমবঙ্গের তিন শ্রমিক৷ হুগলির বাসিন্দা জয়দেব প্রামাণিক, সৌভিক পাখিরা এবং কোচবিহারের মনির তালুকদারের পরিবারের ঘুম উডে়ছে৷ উৎকণ্ঠার প্রহর গুনছেন তাঁরা৷
প্রসঙ্গত, ১২ নভেম্বরের সকালে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলার ব্রহ্মকাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কের উপর সিল্কিয়ারা এবং ডন্ডালহগাঁওর মধ্যে সাডে় চার কিলোমিটার দীর্ঘ নির্মীয়মাণ টানেলের একাংশ ভেঙে পডে়৷ এর জেরেই ওই টানেলের মধ্যে আটকে পডে়ন ৪০ জন শ্রমিক৷ তবে তাঁদের সুস্থ রাখতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখা হচ্ছে না৷ টানেলে খাবারদাবার, ওষুধপত্র-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা হচ্ছে৷ আটকে পড়া ৪০ জন শ্রমিকের মনোবল অটুট রাখতে নিয়মিত তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগও রাখা হচ্ছে৷ কিন্ত্ত এত প্রচেষ্টার পরেও উদ্ধারকাজের প্রক্রিয়া ক্রমশ দীর্ঘায়িত হচ্ছে ৷ ফলে ওই শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়েও ক্রমশ মনে সংশয় দানা বাঁধছে৷
৪০ জন শ্রমিকের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখা হয়েছে৷ তবে টানেল থেকে এখনও কাউকে উদ্ধার করা যায়নি৷ শুক্রবার নতুন করে ধস নামায় উদ্ধারকাজ আপাতত স্থগিত৷ পাইপের মাধ্যমেই তাঁদের কাছে খাবার ও অন্যান্য দরকারি জিনিস পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে৷ শুক্রবার দুপুর ২.৪৫ নাগাদ টানেল খুঁডে় পঞ্চম পাইপটি ঢোকানোর সময় বিপদ ঘটে৷ টানেল ভাঙার তীব্র শব্দ কানে আসে উদ্ধারকারীদের৷ তৎক্ষণাৎ উদ্ধারকাজ থামিয়ে দেওয়া হয়৷
আপাতত টানেলের ৬০ মিটার দীর্ঘ ধ্বংসস্তূপের পিছনে আটকে রয়েছেন শ্রমিকেরা৷ তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত খোঁড়া গিয়েছে মাত্র ২৪ মিটার৷ শনিবার উত্তরকাশীর উদ্ধারকাজ পরিদর্শনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে একটি দল ঘটনাস্থলে যায়৷ টানেলে আটকে থাকা শ্রমিকদের পরিবারে উদ্বেগ বাড়ছে৷ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পাইপের মাধ্যমে কথা বলছেন তাঁরা৷ কিন্ত্ত তাতে চিন্তা কমছে না৷ প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, টানেলের ভিতরে প্রত্যেক শ্রমিকই সুস্থ আছেন৷ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ এক বারের জন্যেও বিচ্ছিন্ন হয়নি৷ দ্রুত উদ্ধারের চেষ্টা চলছে৷
শুক্রবার দুপুরে খননযন্ত্র দিয়ে টানেলের মুখে আটকে থাকা পাথর সরানোর সময় জোরে ফাটল ধরার শব্দ পান উদ্ধারকারীরা৷ তারপর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় উদ্ধারকাজ৷ উদ্ধারকারীদের ধারণা, টানেলের ভিতরে আরও একটি ধস নেমেছে৷ উদ্ধারকাজ চালিয়ে নিয়ে গেলে আরও ধস নামতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের কী ভাবে উদ্ধার করা হবে, তা ঠিক করতে বিশেষজ্ঞদের একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে৷ পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বৈঠকে বসছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা৷
এদিকে আটকে পড়া শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা টানেলে আসছেন। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দিয়ে একটি পাইপ বসিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ওই পাইপের মধ্যে দিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন তাঁদের আত্মীয় পরিজনেরা।