বয়োজ্যেষ্ঠ গব্বর দাদা সুড়ঙ্গে আগলে রেখেছিলেন বাকি ৪০ ভাইকে 

উত্তরকাশী, ২৯ নভেম্বর – উত্তরকাশীর টানেলে আটকে পড়া শ্রমিকদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ ছিলেন তিনি। বয়সে বড় হওয়ায় বিপদের মধ্যেও ছোটদের প্রতি কর্তব্যে অবিচল ছিলেন তিনি। তিনি হলেন উত্তরাখণ্ডের গব্বর সিংহ নেগি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা-বারকোট টানেল থেকে তখন একে একে বেরিয়ে আসছেন শ্রমিকেরা। ৪০ জন শ্রমিক বেরিয়ে আসার পর সবার শেষে বেরোলেন গব্বর সিং। শুধু তাই নয়, টানেলে বন্দিদশা অবস্থাতেও শ্রমিকদের মনোবল বাড়িয়েছেন তিনি। যোগাসন করিয়ে তাঁদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। আলোয় ফেরার পর তাঁকে আরও আলোকোজ্জ্বল করলেন তাঁর সহকর্মীরা। গব্বর সিংয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই। প্রশংসায় মুখর উদ্ধারকারীরাও। 

মোট ১৬ দিনের বন্দি জীবন। শুধু বন্দি নয়, প্রাণ হাতে করে বেঁচে থাকা। অন্ধকূপ থেকে মুক্তি মিলবে কিনা তা অনিশ্চিত। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা গেলেও প্রতিটি মুহূর্তে জীবনহানির আশঙ্কায় মৃত্যুভয় গ্রাস করত শ্রমিকদের।  সেই সংকটের সময়ে ভরসা জুগিয়েছেন সবার বড় দাদাস্থানীয় গব্বর সিং নেগা। সবাইকে যোগাসন শিখিয়েছেন,  বিপদের মধ্যেও কিভাবে অবিচল থাকা যায় তার পথ দিয়েছেন মানসিক শক্তি জুগিয়েছেন।  সিল্কিয়ারা টানেল খননের কাজে গব্বর সিং নেগি ছিলেন সুপারভাইজারের দায়িত্বে। এর আগেও এমন সুড়ঙ্গ-ধসের মুখে পড়েছেন তিনি। তাঁর  নিজের সেই পুরনো অভিজ্ঞতা থেকেই বাকিদের মনোবল বাড়ানোর কাজ করেছেন উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা গব্বর। কার্যত ১৬ দিন ধরে সহকর্মী শ্রমিকদের নেতৃত্ব দেন তিনি। যে কাজ বাইরে থেকে করছিলেন অস্ট্রেলিয় বিশেষজ্ঞ আর্নল্ড ডিস্ক।

দুর্ঘটনার পর ওয়াকিটকি মারফত সেনা এবং এনডিআরএফ-এর উদ্ধারকারী দল আলাদা করে প্রশিক্ষণ দেয় গব্বরকে, যাতে উদ্ধারকাজ চলার সময় তিনি ভিতরে সবাইকে চাঙ্গা রাখতে পারেন। সেই কাজ সম্পূর্ণ দায়িত্বের সঙ্গে পালন করে গিয়েছেন গব্বর। শরীর সুস্থ রাখতে এবং শ্রমিকদের মন তরতাজা রাখতে নিয়ম করে হাঁটা এবং যোগ ব্যায়াম করিয়ে গিয়েছেন গব্বর।


 উত্তরাখণ্ডের পাওড়ি গঢ়ওয়াল জেলা গব্বর সিংয়ের ঠিকানা। উত্তরকাশীর টানেলের থেকে যার দূরত্ব প্রায় ২৬০ কিলোমিটার। গব্বরের  সাহসিকতার কথা  শোনা গিয়েছে বাড়়ির লোকেদের মুখ থেকেও। প্রথমে পাইপের মাধ্যমে, পরে ফোনের মাধ্যমে কয়েক দিন ধরেই গব্বরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন তাঁর ভাই জয়মল। তিনি এক সংবাদমাধ্যমে বলেন, , “দাদা খুব সাহসী। দাদাকে বললাম, উদ্ধারকাজ শুরু হলে তো বেরোনোর জন্য হুড়োহুড়ি শুরু হবে। তখন কী করবে? বলল, আমি বড়। আমি সবার শেষে বেরোব।”

আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গব্বর। সেখানেই তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে । আপাতত তিনি সুস্থ। তাঁর এই নির্ভীক, নিঃস্বার্থ সত্তাকে সেলাম জানায় দেশ।