দিল্লি, ২১ এপ্রিল– দুপুরের গনগনে রাক্ষুসে রোদ যেন গিলে খেতে আসছে। জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিচ্ছে শরীর। আবহাওয়াবিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ণের জেরে জলবায়ু বদলই এর কারণ। এমন দাবদাহের জন্য দায়ী যথেচ্ছ দূষণ, গাছ কেটে নগরোন্নায়ন ও অত্যধিক তেজস্ক্রিয় বিকিরণ। মানুষের যথেচ্ছাচারে ছ’টা ঋতুই যেন উধাও হয়ে গেছে ঋতুচক্র থেকে। আর এর মধ্যে যদি এল নিনো ফিরে আসে তাহলেই সর্বনাশ!
২০২৩ ও ২০২৪ সালে এল নিনোর ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রবল। এর জেরেই নাকি পৃথিবীর তাপমাত্রা চড়চড় করে বাড়বে। তীব্র তাপপ্রবাহ ছারখার করে দেবে সব, ফুটিফাটা হবে মাটি, শুকোবে জল, খরার হাহাকার দেখবে বিশ্ববাসী। প্রশান্ত মহাসাগরের চিলি ও পেরু উপকূল এবং মহাসাগরের মধ্যাঞ্চলে তৈরি হওয়া সেই ‘এল নিনো’র জেরে এ বার ওলটপালট হয়ে যেতে পারে ভারতের বর্ষার মরসুম। উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যেতে পারে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। এমন সবই সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিজ্ঞানীরা তো বটেই, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ বা ‘এসা’)-র উপগ্রহ চিত্রও এমন দুঃসময় আসার পূর্বাভাস দিয়েছিল অনেক আগেই। প্রশান্ত মহাসাগরে দু’রকমের আবহাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। এক হল, লা নিনা যার জেরে তাপমাত্রা কমে, আর দুই হল এল নিনো যা ভয়ঙ্কর। ভীষণ উত্তাপ নিয়ে সবকিছু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিতে আসে সে।
স্প্যানিশ শব্দ এল নিনোর অর্থ “বালক” বা ছোট ছেলে। এল নিনো হলে এক উষ্ণতম সামুদ্রিক জলস্রোত বা সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বাড়িয়ে দেয়। চিলি, পেরু-সহ দক্ষিণ আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলবর্তী দেশগুলিতে এল নিনোর প্রভাব দেখা যায় প্রায় ২ থেকে ৭ বছর অন্তর। ওই সময় মহাসাগরের পৃষ্ঠের (সি সারফেস) জল দ্রুত হারে অসম্ভব গরম হয়ে যায়। কারণ, ওই সময় প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্ত থেকে গরম জলের স্রোত ধেয়ে আসে মহাসাগরের পূর্ব দিকে। প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তের জলস্তর অনেকটাই গরম। তুলনায় ঠান্ডা চিলি, পেরু-সহ দক্ষিণ আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলবর্তী জলস্তর।
২০১৫ সালে এমন এল নিনোর কব্জায় পড়েছিল ভারত। প্রচণ্ড খরায় শুকিয়ে গিয়েছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বহু এলাকা। সে বছর সারা দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমে গিয়েছিল উল্লেখযোগ্য ভাবে। ২০০৯ সালেও এল নিনোর প্রভাবে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কষ্ট পেতে হয়েছিল দেশের মানুষজনকে। পূর্ব ও মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরে জন্মানো ‘এল নিনো’ বড়সড় প্রভাব ফেলেছিল ভারতের বর্ষার মরশুমে। ২০০২ ও ২০০৪ সালের এল নিনো-র ততটা প্রভাব পড়েনি এ দেশে। তবে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ফের এল নিনোর সতর্কতা জারি হয়েছে।
ভারতে এল নিনোর প্রভাব কতটা পড়বে, তাপমাত্রা আরও কতটা বাড়বে, খরা পরিস্থিতি তৈরি হবে কিনা সে নিয়ে এখন থেকেই চিন্তায় রয়েছেন আবহাওয়াবিজ্ঞানীরা। এ বছরে যেমন উত্তপ্ত এপ্রিল দেখা গেছে, তাতে এল নিনোর প্রভাব পড়ার আশঙ্কাই করা হচ্ছে। তবে খরা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাসের জন্য এল নিনো ছাড়াও অন্য অনেক কারণ রয়েছে। গাছ কেটে নগরোন্নয়নই কলকাতা সহ বাংলার খামখেয়ালি আবহাওয়ার কারণ। এই কারণেই কলকাতা এখন হিট-আইল্যান্ড হয়ে গেছে।