গেহলট-পুত্র বৈভবকে ইডি-র তলব , প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির বাড়িতে তল্লাশি 

জয়পুর, ২৬ অক্টোবর – রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের ছেলে বৈভবকে  বিদেশি মুদ্রা আইন লঙ্ঘনের মামলায় তলব করল ইডি। বিধানসভা ভোটের আগে ইডি-র এই তৎপরতা  নিয়ে ক্ষুব্ধ গেহলট বৃহস্পতিবার বিজেপিকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেন।  পাশাপাশি এদিন রাজস্থান কংগ্রেসের প্রধান গোবিন্দ সিং দোতাসারার বাড়িতে অভিযান চালায় ইডি। একইসঙ্গে দলের প্রথম সারির নেতা ওমপ্রকাশ হুদলার ঠিকানাতেও তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী  সংস্থা। 

বিদেশি মুদ্রা আইন লঙ্ঘনের মামলায় রাজস্থানের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের ছেলে বৈভবকে তলব করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। শুক্রবার তাঁকে জয়পুরের ইডি অফিসে হাজির হতে বলা হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে রাজস্থান এখন সরগরম।  এই রাজ্যে ২৫ নভেম্বর বিধানসভা নির্বাচন।  এই সময় মুখ্যমন্ত্রীর পুত্রকে ইডির তলব নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় সংস্থার এই সক্রিয়তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বলে  মনে করছে কংগ্রেস। এক্স হ্যান্ডেলে বিজেপিকে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী গেহলট এবং সর্বভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। মুখ্যমন্ত্রী গেহলট তাঁর ছেলেকে তলব এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির বাড়িতে তল্লাশিকে বিজেপির প্রতিহিংসা বলে বর্ণনা করেছেন। বলেছেন, ‘বুধবার আমার সরকার মহিলাদের জন্য নানা সুযোগ সুবিধার কথা ঘোষণা করেছে। আর পরদিনই রাজ্য কংগ্রেস সভাপতির বাড়িতে ইডি হানা দিয়েছে, ডেকে পাঠিয়েছে আমার ছেলেকে।’ গেহলট লেখেন, “আমি যা বলে আসছিলাম আপনারা নিশ্চয়ই এখন বুঝতে পারছেন। রাজস্থানে রোজ রোজ ইডির রেড এইজন্যে হয়, যেহেতু বিজেপি চায় না রাজ্যের মহিলা, কৃষক এবং দরিদ্ররা কংগ্রেসের দেওয়া গ্যারান্টির সুবিধা পান।”
এক্স হ্যান্ডেলে খাড়গে লেখেন, “নির্বাচন এলেই ইডি, সিবিআই, আইটি ইত্যাদি হয়ে ওঠে বিজেপির আসল ‘পান্না প্রধান’। রাজস্থানে নিজেদের নিশ্চিত পরাজয় দেখে শেষ পদক্ষেপ  ভারতীয় জনতা পার্টির ! ছত্তিশগড়ের পর এবার রাজস্থানে কংগ্রেস নেতাদের বিরুদ্ধে তৎপর হয়েছে ইডি। মোদি সরকারের স্বৈরাচার গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকারক। কেন্দ্রীয়  সংস্থাগুলির অপব্যবহারের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে, জনগণ বিজেপিকে যোগ্য জবাব দেবে।”

বৈভব গেহলটকে তলব করা হয়েছে  ২০২০ সালে জয়পুরের দুই ব্যক্তি বৈভবের  বিরুদ্ধে ‘শিবনার হোল্ডিংস’ নামে একটি মরিশাস-ভিত্তিক কোম্পানির মাধ্যমে বেআইনি ভাবে অর্থ পাচারের অভিযোগে । তাঁদের অভিযোগ ছিল, ২০১১ সালে বৈভব ওই কোম্পানির মাধ্যমে বেনামে ট্রাইটন হোটেলের ২,৫০০ শেয়ার কিনেছিলেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বিজেপি সাংসদ কিরোরিলাল মিনা ইডির কাছে বৈভবের বিরুদ্ধে তদন্তের আবেদন জানিয়েছিলেন। তিন বছর পরে বিধানসভা ভোটের মুখে সেই তদন্তে সক্রিয় ইডি।


ইডির সূত্র ধরে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, পুরনো দুই মামলার সূত্র ধরেই রাজস্থানে  ইডির এই তৎপরতা। একই দিনে মরুরাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গোবিন্দ সিং দোতাসারার দুটি বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালালেন ইডি আধিকারিকেরা। সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বেআইনি আর্থিক লেনদেনের হদিশ পেতে গোবিন্দ এবং ওমপ্রকাশের একাধিক ঠিকানায় তল্লাশি হয়েছে।  প্রসঙ্গত, এই দুই কংগ্রেস নেতাই এ বারের বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছেন। অন্য দিকে, বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন  লঙ্ঘনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে গেহলট-পুত্রকে।   
 
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার এই তৎপরতায় বিজেপির রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিয়ে বারবার  প্রশ্ন উঠেছে।  নরেন্দ্র মোদির  প্রধানমন্ত্রিত্বে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের বহু উদাহরণ রয়েছে।  গত মে মাসে কর্নাটকে বিধানসভা ভোটের কিছু দিন আগে বেআইনি আর্থিক লেনদেনের মামলায় ইডি নোটিস পাঠিয়েছিল প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ডিকে শিবকুমারকে।  বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের নেতাদের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার ইডি-র অভিযান ঘিরেও সেই প্রশ্নই আবার উঠে এল।

রাজস্থানে গেহলট সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতিকে নির্বাচনে ইস্যু করেছে বিজেপি। এদিকে গেহলট সরকারের ভাল কাজকে অগ্রাহ্যও করতে  পারছে না বিজেপি শিবির। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে রাজস্থানের কংগ্রেস সরকারের কাজকর্মের প্রশংসা করতে হয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই । এমনকী বিজেপি ক্ষমতায় এলে ভাল প্রকল্পগুলি চালু রাখা হবে বলেও প্রকাশ্য সভায় কথা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে গেহলট সরকারকে নিশানা করেছেন প্রধানমন্ত্রী ।