চাঁদের মাটিতে ভূমিকম্প, রেকর্ড করল প্রজ্ঞান 

বেঙ্গালুরু, ১ সেপ্টেম্বর –  চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ভূমিকম্প রেকর্ড করেছে বিক্রম ল্যান্ডার।  মহাকাশবিজ্ঞানীদের ভাষায়, চাঁদের মাটির ভূমিকম্প ‘মুনকোয়েক ’। পৃথিবীর মতো বড় মাপের  ভূমিকম্প না হলেও চাঁদের মাটিতেও কম্পন হয়, যার হাল্কা কম্পনের তরঙ্গ বোঝা যায় চন্দ্রপৃষ্ঠেও। সেই কম্পনই রেকর্ড করল চন্দ্রযানের ‘প্রজ্ঞান’। তরঙ্গের তীব্রতা কতটা হলে চাঁদের মাটি কাঁপে সেই তথ্য জোগাড় করে পৃথিবীতে ইসরোকে পাঠিয়ে দিয়েছে প্রজ্ঞান। আইএলএস-এ পেলোড রোভার এবং অন্যান্য পেলোডগুলির গতিবিধিও রেকর্ড করেছে বলে মহাকাশ সংস্থা জানিয়েছে।  ইসরো টুইটারে পোস্ট করে বলেছে, , এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা এবং তার তদন্ত চলছে।  তারা জানিয়েছে, লম্পনের উৎসের খোঁজে অনুসন্ধান চলছে।  

চাঁদের মাটিতে নামার পর থেকেই একের পর এক চমক দিচ্ছে প্রজ্ঞান। চাঁদে সালফার, হাইড্রোজেনের খোঁজ থেকে খনিজ মৌলের সন্ধান চালাচ্ছে। তার মধ্যেই ভূমিকম্পের কম্পনের মাত্রা রেকর্ড করেছে। ইসরোর তার নতুন ভিডিওতে দেখিয়েছিল ছোট বাচ্চার মতো চাঁদের মাটিতে গোল-গোল ঘুরছে প্রজ্ঞান। সেই ভিডিও মন জয় করে বিশ্ববাসীর। অনেকেই বলছেন, চাঁদের মাটিতে দিব্যি খেলায় মজেছে ছোট্ট প্রজ্ঞান। তবে ইসরো জানাচ্ছে, খেলছিল না প্রজ্ঞান, বরং ঘুরে ঘুরে চাঁদের মাটির কম্পন পরীক্ষা করছিল।

ইলসা অর্থাৎ ইনস্ট্রুমেন্ট ফর লুনার সিসমিক অ্যাকটিভিটি পেলোড দিয়ে চাঁদের মাটির কম্পন পরীক্ষা করছে প্রজ্ঞান। এই পেলোডের কাজ গুরুত্বপূর্ণ। চাঁদের মাটিও ভূমিকম্পপ্রবণ । এই পেলোড পরীক্ষা করবে চাঁদের মাটিকে কীভাবে কম্পন হয়, কতক্ষণ ধরে তা চলে এবং অবশ্যই সেই কম্পনের মধ্যে পড়লে বিক্রম এবং প্রজ্ঞানের কোনও ক্ষতি হবে কিনা! মাইক্রো ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল সিস্টেম প্রযুক্তি ভিত্তিক যন্ত্রটি মাটির যে কোনও প্রকার কম্পন বুঝতে পারে। প্রজ্ঞান ও তার পেলোডগুলি ঘোরাফেরা করার সময় চাঁদের মাটিতে যে কম্পন হয়েছে তাও রেকর্ড করেছে ওই যন্ত্র। আর এসবের মাঝেই ধরা পড়েছে অন্যরকম এক তরঙ্গ। বিজ্ঞানীদের অনুমান, ওই কম্পন ভূমিকম্পেরই। খুবই অল্প মাত্রার তরঙ্গদৈর্ঘ্য যন্ত্রে ধরা পড়েছে।


ইলসার পাশাপাশি চ্যাস্ট পেলোডও কাজ করছে। এর কাজ হল চাঁদের মেরু অঞ্চলের তাপমাত্রার প্রকৃতি নির্ধারণ করা। মূলত চন্দ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা, তাপমাত্রার বদল, থার্মাল কন্ডাক্টিভিটি পরীক্ষা করাই এর কাজ। চাঁদের মাটিতে গর্ত করে তার মধ্যে যন্ত্র ঢুকিয়ে তাপমাত্রা মাপছে প্রজ্ঞান।  চাঁদের মাটিতে প্লাজমার ঘনত্ব বোঝা এবং আয়নিত কণা বা ইলেকট্রিন পার্টিকল পরীক্ষা করা। কীভাবে চাঁদের মাটিতে আয়নিত কণাগুলির নিরন্তর বদল ঘটছে তা পরীক্ষা করছে এই পেলোড।
আইএলএস-এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল, প্রাকৃতিক ভূমিকম্প, প্রভাব, কৃত্রিম ঘটনার উৎপত্তিস্থলের কম্পন পরিমাপ করা।  ২৫ আগস্ট রোভারের নেভিগেশনের সময় রেকর্ড করা কম্পনগুলি চিত্রিত হয়েছে।  পাশাপাশি ২৬ আগস্ট রেকর্ড করা একটি ভূমিকম্প আপাতদৃষ্টিতে যা প্রাকৃতিক বলে মনে হয়েছে সেটিও দেখানো হয়েছে।