রাহুল-অখিলেশ বিবাদের জেরে ভোটের আগে চিড় ধরছে ‘ইন্ডিয়া’জোটে

দিল্লি, ১৪ নভেম্বর – রাহুল-অখিলেশ বিবাদের জেরে ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে ভাঙন নিয়ে জল্পনা আবার বাড়ল৷ জাত সমীক্ষাকে কেন্দ্র করে দুই নেতার মধ্যে বিতকের্র সূত্রপাত৷ পাঁচ রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে বিহারের মতো জাতিগত জনগণনা করা হবে বলে প্রচারে আশ্বাস দিয়েছেন রাহুল গান্ধি৷ আর একে তিনি ‘এক্স-রে’-র সঙ্গে তুলনা করেছেন৷ সোমবার মধ্যপ্রদেশের সাতনায় দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে যান সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো৷ সেখানে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার রাহুলের মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন অখিলেশ যাদব৷ কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার থাকাকালীন কেন জাত সমীক্ষা করা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন এসপি প্রধান৷ অখিলেশ উপহাস করে বলেন, কেন্দ্রে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার থাকার সময় জাতিগত জনগণনা করা উচিত ছিল৷ কিন্ত্ত সেই সময় ‘এক্স-রে’ করা হয়নি৷ ফলে রোগটি ছডি়য়ে পডে়ছে৷ রোগটি নির্মূল করতে সেই সময় কংগ্রেস সরকার যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিত, তাহলে আজকে এই পরিস্থিতি তৈরি হত না বলে মনে করেন তিনি৷

যে পাঁচ রাজ্যে ভোট আসন্ন সেই রাজ্যগুলির সব জনসভাতেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি জাতিগত জনগণনার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন৷ বস্তুত পাঁচ রাজ্যের ভোট এবং আগামী লোকসভায় কংগ্রেসের প্রধান এজেন্ডাই হতে চলেছে এই জাতিগত জনগণনা৷ এই পরিস্থিতিতে কদিন আগেই রাহুলকে বলতে শোনা যায়, ”যখন কোনও ব্যক্তি আহত হন, আমরা তাঁকে এক্স-রে করাতে নিয়ে যাই, হাড় ভেঙেছে কিনা জানতে৷ একই ভাবে আমি জাতিগত জনগণনাকেও এক্স-রে বলি৷ যা ওবিসি, দলিত ও আদিবাসীদের জনসংখ্যার অনুপাতকে তুলে ধরবে এবং সরকারে তাদের অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করবে৷”
রাহুলের মন্তব্যের জবাবে এবার কংগ্রেসকে খোঁচা দিলেন অখিলেশ৷ মধ্যপ্রদেশের সাতনায় এক জনসভায় তাঁর প্রশ্ন, ”কেন এক্স রে করতে হবে, যেখানে এমআরআই কিংবা সিটি স্ক্যানের মতো আধুনিক প্রযুক্তি হাতে আছে?” এর পরই উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, ”যারা এক্স রে নিয়ে কথা বলছে, তারাই স্বাধীনতার পর থেকে জাতিগত জনগণনা হতে দেয়নি৷ জাতিগত জনগণনার দাবি করে মুলায়ম সিং যাদব, লালু প্রসাদ যাদব এবং শরদ যাদবের মতো নেতারা লোকসভায় সোচ্চার হলেও, সেই সময় কংগ্রেস সরকার তা মানতে অস্বীকার করেছিল বলে দাবি করেন অখিলেশ৷

সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ বলেন, কংগ্রেস এখন জাতিগত জনগণনা দাবি করলেও, স্বাধীনতার পর তারাই জাত শুমারি বন্ধ করে দিয়েছিল৷ রাহুলের জাতিগত জনগণনার দাবির কারণও উল্লেখ করেছেন উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ঐতিহ্যগত ভোটব্যাঙ্ক এখন আর কংগ্রেসের সঙ্গে নেই৷ অনগ্রসর শ্রেণি, দলিত এবং আদিবাসীরা জানে যে স্বাধীনতার পর তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে৷ আর সেই ভোটব্যাঙ্কের পুনরুদ্ধারের রাহুলের জাত শুমারির দাবি বলে জানান৷ সেই সঙ্গে কংগ্রেসের এই চেষ্টা সফল হবে না বলেও জানান এসপি প্রধান৷


প্রসঙ্গত, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের দুই শরিক কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টির মধ্যে সংঘাতের সূচনা হয় মধ্য প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে আসন রফা নিয়ে৷ নির্বাচনে জোট করে কংগ্রেসের কাছে বার্তা দিয়েছিলেন অখিলেশ যাদব৷ আসন রফা নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও পরে পিছিয়ে আসে কংগ্রেস৷
পরে একলা চলো নীতি নেয় সমাজবাদী পার্টি৷ তবে, দুই দল যেভাবে পরস্পরকে নিশানা করছে, তাতে লোকসভা ভোটের আগে বিরোধী জোটের পক্ষে তা মোটেও স্বস্তিদায়ক নয় বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল৷