দিল্লি, ৩ নভেম্বর – শুক্রবার চলতি বছরের সবচেয়ে বেশি দূষণ ধরা পড়ল দিল্লির বাতাসে। শুক্রবার সকালে ৪৬০ ছুঁয়ে ফেলে দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স। শুক্রবার সকাল থেকেই দিল্লির পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। ঘন বাতাসের চাদরে ঢাকা পড়ে যায় গোটা শহর। সকাল আটটার সময়ে বায়দূষণের সূচক ৪৬৪ পর্যন্ত উঠে যায়। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী, ৪০১ থেকে ৫০০ পর্যন্ত সূচক খুবই উদ্বেগজনক। এদিন সফদরজং এলাকায় দৃশ্যমানতা নেমে যায় ৬০০ মিটারে। রাজধানীর দূষিত বায়ুর ক্ষতি এড়াতে ইতিমধ্যেই প্রাথমিক স্কুলগুলো ছুটি দেওয়া হয়েছে। নির্মাণ কাজও আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। গাড়ির ব্যবহার বন্ধ করে সাধারণ মানুষকে মেট্রোয় চলাফেরা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এজন্য প্রতিদিন অতিরিক্ত ২০টি মেট্রো চালানো হচ্ছে দিল্লিতে। আগামী দু’দিনের জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকার। সরকারি ও বেসরকারি দু’ধরনের স্কুলই বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার সকালে এক্স হ্যান্ডেলে দূষণ নিয়ে একটি পোস্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘দূষণের মাত্রা বাড়তে থাকায় দিল্লির সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের প্রাথমিক বিভাগ দু’দিনের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দিল্লির দূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
দিল্লি ও এনসিআর এলাকায় প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ ২.৫-র বেশি বলে জানা গিয়েছে। যা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে সাত থেকে আট গুণ বেশি। এই অবস্থায় এদিন জরুরি বৈঠক ডাকেন দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই।
সাধারণভাবে দীপাবলি উৎসবে দিল্লিতে দূষণের মাত্রা ঊর্ধ্বমুখী থাকে। একদিকে দীপাবলির সময় দিল্লিতে মাত্রাছাড়া বাজির ব্যবহার এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় কৃষিজমিতে নাড়া জ্বালানোর ধোঁয়া, – এই দুই মিলিয়ে রাজধানী দিল্লির বাতাসে বিষাক্ত বায়ুর আস্তরণ। এবার দীপাবলির বেশ কিছুদিন আগে নবরাত্রির সময়ে একই রকম দূষণ ধরা পড়ে দিল্লির বাতাসে। শুক্রবার সারাদিন এই পরিস্থিতিই থাকবে বলে মনে করছে আবহাওয়া দপ্তর। খুব কম গতিতে বাতাস বইবে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। ধোঁয়াশায় বিপর্যস্ত দিল্লিবাসীর প্রতিটি দিন আরও ধূসর হয়ে উঠছে। ধোঁয়াশার কালো কালো চাদরে আবৃত রাজধানী দিল্লি। বাতাসে ভাসমান দূষিত ধূলিকণার পরিমাণ দেখে এখন এশিয়ার অন্যতম দূষিত শহর বলা হচ্ছে দিল্লিকে।
পরিবেশবিদ সোমেন্দ্র মোহন ঘোষ বলেন, দিল্লিতে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ৪০০ ছাড়িয়েছে, একে বলা হচ্ছে ‘সিভিয়ার হেলথ হ্যাজার্ড।’ পড়শি রাজ্য পাঞ্জাব, হরিয়ানা থেকে খড়কুটো পোড়ানোর ধোঁয়া বিষ-বাষ্প তৈরি করছে। এদিকে কলকাতাও পিছিয়ে নেই। শুক্রবার কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এলাকায় একিউআই ২০০-র বেশি। কালীপুজো-দীপাবলির পরে তা ৩০০-৪০০ তে পৌঁছে যাবে।
এদিন সকালে ঘন ধোঁয়াশা ঢেকে যায় গোটা দিল্লি। পরিস্থিতি ‘খুব খারাপ’ বলে জানিয়ে দেয় আবহাওয়া দফতর। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সকাল ৭টা নাগাদ দিল্লির একিউআই ছিল ৩৪৬। এর মধ্যে আবার অশোক বিহার ও টি থ্রি টার্মিনাল এলাকার একিউআইয়ের পরিমাণ ছিল আরও বেশি। এই দু’টি জায়গাতেই দূষণের মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৪৩০ ও ৪৭৩।একিউআইয়ের পরিমাণের বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিয়েছে দিল্লি পুরসভা। মধ্য দিল্লিতে জলের ট্যাঙ্কার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ধোঁয়াশার পরিমাণ আরও বেড়ে গেলে তা কাটাতে জল ছেটানো বলে বলে জানা গিয়েছে।
এর পাশাপাশি যান চলাচলের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। দিল্লি, গুরুগ্রাম, ফরিদাবাদ, গাজিয়াবাদ ও গৌতম বুদ্ধ নগরে বিএস থ্রি পেট্রোল ও বিএস ফোর ডিজেলের চার চাকার গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, যে কোনও ধরনের নির্মাণ কাজ, পাথর ভাঙা বা খনি সংক্রান্ত কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।