দিল্লি, ২৯ আগস্ট– মোটামুটি দুর্গে পরিণত হয়েছে গোটা দিল্লি। তবে কোনও যুদ্ধের প্রস্তুতিতে নয়। জি-২০ সম্মেলনে হাজির বিশ্বের প্রথমসারির নেতাদের অভ্যর্থনা ও তাদের সুরক্ষায় দিল্লি রুদ্ধ। দিল্লিতে যেন পা ফেলার জায়গা নেই সেপ্টেম্বরে । পাঁচতারা হোক বা সাধারণ– অধিকাংশ হোটেলে ঝুলছে ‘নো রুম’ বোর্ড। ‘সিকিউরিটি ড্রিল’ এ কে নেই- দিল্লি পুলিশ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ। সঙ্গে আইবি, বিদেশ মন্ত্রক ও বিভিন্ন দূতাবাসগুলির ব্যস্ততা তুঙ্গে।
শহরে হাজির কয়েকশো বুলেটপ্রুফ গাড়ি দেখে মনে হচ্ছে দিল্লিতে যেন মহা উৎসবের আয়োজন। তবে দিল্লির এখন যা অবস্থা তাতে জানিয়ে রাখি আগামী মাসের ৫ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে ভুলেও যেন দিল্লি দর্শনে না যান কোনো পর্যটক।
দিন কয়েক আগেই দিল্লিবাসীকে সম্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘আগামী ৫ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর দিল্লিবাসীরা রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়বেন। বাস, মেট্রো, ট্রেন, অটো কিছুই পাওয়া যাবে না। পাওয়া যাবে না হোটেলও৷ জি-২০র জন্য এই সমস্যা, যার জন্য আমি আগাম ক্ষমা প্রার্থনা করছি৷’ দিল্লির প্রস্তুতি দেখে এ কথা স্পষ্ট, কিছুই ভুল বলেননি প্রধানমন্ত্রী।
জি-২০ সম্মেলনের এই আয়োজনে হাজির হবেন সারা বিশ্বের অতিথিরা। সেই উপলক্ষেই দিল্লিতে এ মুহূর্তে বেশিরভাগ হোটেল, পাঁচতারা হোক বা সাততারা, সাধারণ মধ্যবিত্ত হোটেল অথবা টু-থ্রি স্টার, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় সমস্ত বুকড হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে সমস্ত প্রি বুকিং। এমনকি, ধর্মশালা, পান্থশালা, লজ বা হোম-স্টেগুলিও সে সময়ে খালি থাকবে না বলেই আশঙ্কা।জানা গিয়েছে, ‘আইটিসি মৌর্য’-তে থাকবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ‘তাজ প্যালেস’-এ চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ‘স্যাংগ্রিলা’য় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক এবং জার্মান প্রতিনিধি দল, ‘ইম্পেরিয়াল’-এ অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী ও ইন্দোনেশিয় প্রতিনিধি, ‘হোটেল ললিত’-এ কানাডা ও জাপানি প্রতিনিধিরা থাকবেন। এই সব হোটেলে অতিথিদের খাওয়াদাওয়ার দায়িত্বে থাকবেন প্রায় ২০০০ শেফ ও অ্যাসিস্ট্যান্ট শেফ।
পাশাপাশি অন্যান্য ছোট, মাঝারিমানের হোটেল, রেস্টুরেন্টগুলিও বুকিং করা হয়েছে আধিকারিক ও কর্মচারীদের জন্য। সম্মেলনের দিনগুলো তাঁদেরও থাকতে হবে দিল্লির বিভিন্ন হোটেলে, কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে।
তথ্য বলছে, ৯-১০ সেপ্টেম্বরে জি ২০ সামিটকে কেন্দ্র করে নয়াদিল্লিতে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি রুম বুক করে ফেলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বহু হোটেলে প্রায় ১০ হাজার ‘হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট প্রফেশনাল’ বহাল করা হয়েছে দু’মাস আগে থেকেই। হোটেলে কোনও ত্রুটি বা বিচ্যুতি ধরা পড়লে, তক্ষুনি তা দ্রুত হাতে সারাই করতে হবে বলে হোটেল কর্তৃপক্ষকে সরকারি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে নিশ্চিত করা হচ্ছে মাছি গলতে না পারা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়। সেই সঙ্গেই, ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে অতিথিদের বিনোদনের জন্য দেশের নানা প্রান্ত থেকে উড়িয়ে আনা হচ্ছে সাংস্কৃতিক দল এবং সংগীতশিল্পীদের।
এসবের পাশাপাশি, গোটা দিল্লিজুড়ে রাখা হচ্ছে যথেষ্ট পাওয়ার ব্যাকআপ ও স্টোরেজ সিস্টেম। একইসঙ্গে তৈরি থাকছে মেডিক্যাল টিম, অ্যাম্বুল্যান্স, প্যারামেডিক্স-সহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের টিম। আমন্ত্রিত অতিথিরা আসার আগে থেকে গোটা শহরে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে ও প্রয়োজনে বদলও করা হবে রুট।