প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত হিমাচল প্রদেশে মৃতের সংখ্যা ৬০ ছাড়াল

শিমলা, ১৬ আগস্ট –  প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিধ্বস্ত হিমাচল প্রদেশ। গত কয়েকদিনের মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে  ও ভূমিধসের কারণে ইতিমধ্যেই রাজ্যে মৃতের সংখ্যা ৬০ ছাড়িয়েছে। আশংকা করা হচ্ছে ধ্বংসস্তূপের নীচে আরও অনেকে আটকে থাকতে পারে।  নদীর জলস্তর বেড়ে গিয়ে ভেসে গেছে সেতু ও রাস্তা। ভেঙে গেছে বহু ঘর-বাড়ি, মন্দির। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ আবেদন জানিয়েছেন হিমাচলের প্রদেশ কংগ্রেসের প্রধান প্রতিভা বীরভদ্র সিং। হিমাচল প্রদেশকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলতে এটিকে দুর্যোগ-বিধ্বস্ত রাজ্য ঘোষণা করার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

কেবল সিমলাতেই মন্দির ভেঙে পড়ার ঘটনায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সিমলার ডেপুটি কমিশনার আদিত্য নিয়োগী জানান, একাধিক উদ্ধারকারী দল একসঙ্গে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। রাতে উদ্ধারকাজ শেষ করা হবে। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ১২টি দেহ উদ্ধার হয়েছে। বুধবার সকালে আরও ৪টি দেহ উদ্ধার হয়েছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী , রাজ্য পুলিশ এবং সেনাবাহিনী যৌথভাবে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। রাজ্যে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে বলির সংখ্যাও বেড়েছে। হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু জানিয়েছেন, ভূমিধস ও টানা বৃষ্টিতে ৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নীচে এখনও ২০ আটকে থাকতে পারেন। অন্যদিকে, ভূমিধসের জেরে ঘর-বাড়ির পাশাপাশি একাধিক রাস্তা, জাতীয় সড়ক, ব্রিজ ভেঙে পড়েছে। এখনও যেভাবে বৃষ্টি চলছে, তার ফলে জীর্ণ বাড়িগুলি ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের। সব মিলিয়ে, সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হিমাচল প্রদেশ।

রাজ্যের এই বিপর্যস্ত পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেই কেন্দ্রের কাছে বিশেষ সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন প্রদেশ সভাপতি তথা হিমাচলের কংগ্রেস সাংসদ প্রতিভা বীরভদ্র সিং। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর উচিত, হিমাচল প্রদেশকে দুর্যোগ-বিধ্বস্ত রাজ্য ঘোষণা করা এবং রাজ্যকে পুনর্গঠিত করে তোলার কাজ শুরু করা।” এব্যাপারে কেন্দ্রের সাহায্যের আবেদনও জানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ। গত কয়েকদিনের দুর্যোগে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাঁদের পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ।


সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে কেবল হিমাচল প্রদেশ নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পড়শি রাজ্য উত্তরাখণ্ড। সেখানেও ভূমিধসে ও নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় বহু ঘর-বাড়ি ভেঙে পড়েছে, ভেসে গিয়েছে রাস্তাঘাট। জোশীমঠের কাছে খেলনার মতো ভেঙে পড়েছে বাড়ি। স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে চারধাম যাত্রা । সামগ্রিকভাবে এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি , যা প্রকাশ পেয়েছে তাঁর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে । মঙ্গলবার লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণে এই প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের একটি অংশ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্যোগ-বিধ্বস্ত মানুষগুলির প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাঁদের পাশে থাকারও বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।উত্তরাখণ্ডে ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সরকারি হিসেবে নিখোঁজ ১০ জন। বেসরকারিভাবে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি বলে দাবি। লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে পাহাড়ি রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ।

উত্তরাখণ্ডের চামোলিতে বদ্রিনাথ হাইওয়েতে ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে গিয়েছে একাধিক গাড়ি। সেই ঘটনায় আপাতত কোনও হতাহতের খবর মেলেনি। তবে ভারতীয় মৌসম ভবনের যা পূর্বাভাস, তাতে দুই রাজ্যে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। কারণ হিমাচল এবং উত্তরাখণ্ডের একাংশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। একাধিক জেলায় লাল সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন।হিমাচলের মন্ত্রী জগৎ সিং নেগি জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত হিমাচল প্রদেশে বৃষ্টি সংক্রান্ত বিপর্যয়ের কারণে প্রায় ৮০০ বাড়ি ভেসে গেছে এবং  আরও ৭,৫০০টি বাড়ি ভেঙে পড়েছে।