গরমে মৃতদেহের সারি বিহারে, কয়েকটি শ্মশানে বাড়ন্ত দেহ সৎকারের কাঠ

পাটনা, ২১ জুন– কোভিড অতিমারির স্মৃতিই যেন ফের ফিরিয়ে দিল এবছরের তীব্র গরম। দক্ষিণী রাজ্যগুলিতে তীব্র বৃষ্টি হলেও দেখা নেই বিহার, উত্তরপ্রদেশের মত রাজ্যগুলিতে। গরমের সঙ্গে তাল দিয়ে বেড়ে চলেছে মৃতের সংখ্যা। বিহারে এমন অবস্থা যে শ্মশানে মৃতদেহের দীর্ঘ সারি দেখা গিয়েছে। দেহ সৎকারের কাঠই বাড়ন্ত হতে চলেছে সেখানকার বেশ কিছু শ্মশানে! রাজ্যে আরা জেলার একটি শ্মশানেও গত কয়েক দিনে বৃদ্ধি পেয়েছে দেহ আসার সংখ্যা। এমনটা জানিয়েছেন শ্মশানের মূল কার্যনির্বাহক, যাঁকে স্থানীয়রা ‘ডোম রাজা’ বলে থাকেন। প্রায় একই পরিস্থিতি গয়া, ভোজপুর, ভাগলপুর, নালন্দা জেলার একাধিক শ্মশানেও।

বিহারের উপরিউক্ত জেলাগুলিতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বর্তমানে ৪৪ ডিগ্রির ধারেকাছে ঘোরাফেরা করছে। গরমের সঙ্গে সঙ্গত করছে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তিও। একাধিক সরকারি-বেসরকারি স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। জাতীয় আবহাওয়া দফতর অবশ্য জানিয়েছে, সপ্তাহের শেষে বর্ষার প্রথম বৃষ্টি পেতে পারে বিহার। ১৭-১৮ দিন ধরে তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হওয়ার পর বিহারের বেশ কিছু জেলার তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রি নামতে পারে।

বিহারের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর জানিয়েছে, গত দু’দিনে সে রাজ্যে ‘হিটস্ট্রোকে’ ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগেই সরকারি তরফে জানানো হয়েছিল, তাপপ্রবাহের জেরে সে রাজ্যে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বহু। সংবাদ সংস্থা পিটিআই বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, শেষ ৪৮ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে পাঁচ জন ভোজপুর, তিন জন আরওয়াল এবং এক জন জেহানাবাদের বাসিন্দা। এই পরিসংখ্যানে আরা জেলার উল্লেখ না থাকলেও, জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত জেলার ৫ জন বাসিন্দা হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। পাঁচটি দেহের ময়নাতদন্ত করে এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে প্রশাসন। তবে দু’টি দেহের শনাক্তকরণ না হওয়ায়, দুই ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ জানা সম্ভব হয়নি।


তবে জেলার বাধরা ব্লকের মাহুলি গঙ্গাঘাটের শ্মশানে মৃতদেহের সারি সরকারি দাবি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। শ্মশানের ‘ডোম রাজা’ ‘ইন্ডিয়া টুডে’কে জানিয়েছেন, গত সাত দিনের পরিস্থিতি তাঁকে কোভিডের সময়ের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। একসঙ্গে চার-পাঁচটি দেহ শ্মশানে এসে যাওয়ায় সৎকারের জন্য মৃতের পরিবারকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। গঙ্গার ধারে সারাইয়া বাজার শ্মশানেও মৃতদেহ ঢুকছে পর পর। উল্লেখ্য যে, বিহারের বহু শ্মশানেই আধুনিক বৈদ্যুতিন চুল্লি নেই। দেহ সৎকার হয় কাঠের মাধ্যমেই। বেশ কিছু শ্মশানের কাঠের কারবারিরা জানিয়েছেন, কাঠের জোগান প্রায় নেই তাঁদের কাছে।